Bajaj Pulsar Elan, Eleganz: সবচেয়ে শক্তিশালী পালসার লঞ্চ করে চমক দিতে পারে বাজাজ, নতুন নাম নথিভুক্ত করল
বাজাজ পালসার (Bajaj Pulsar) এখন একুশের তরতাজা যুবক। দীর্ঘ দু'দশক ধরে স্টাইল এবং পারফরম্যান্সের মাধ্যমে মূল্যায়নের এক নতুন সীমা তৈরি করে ফেলেছে সে। ভারতে অত্যন্ত পরিচিত নাম হলেও আর্ন্তজাতিক বাজারে পালসারের হাত ধরেই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছয় বাজাজ। এই রেঞ্জের স্পোর্টস ও কমিউটার দেশ-বিদেশের নতুন প্রজন্মকে বাজাজের অনুরাগী করে তুলেছে। পালসারের আত্মপ্রকাশের পূর্বে ভারতে জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং ছোট ইঞ্জিনযুক্ত মোটরসাইকেলের রমরমা ছিল। সে সময় রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট (Royal Enfield Bullet)-এর ৩৫০ সিসি ও ৫০০ সিসি সংস্করণ ব্যতীত সে রকম বড় ইঞ্জিনের দু'চাকা গাড়ির অস্তিত্ব ছিলই না বলা চলে। তবে ১৯৯৯ সালে লঞ্চ হওয়া হিরো হন্ডা সিবিজেড (Hero Honda CBZ)- এর সাফল্য অন্যান্য টু-হুইলার প্রস্তুতকারীদের চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছিল যে ভারতে পারফরম্যান্স নির্ভর স্পোর্টি বাইকের চাহিদা সত্যিই রয়েছে।
একপ্রকার সেই অনুপ্রেরণা থেকেই ২০০১-এ বাজারে এল প্রথম প্রজন্মের পালসার। ১৫০ ও ১৮০ সিসি অবতারে পালসার টুইনস। বাকিটা ইতিহাস। পালসার ব্র্যান্ডের 'কুড়িতম' বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে গত বছরের অক্টোবরে বাজারে পা রেখেছে ২৫০ সিসি ইঞ্জিন ক্যাপাসিটির দু'টি নতুন মডেল। নামকরণ হয়েছে Pulsar N250 (নেকেড ডিজাইন) ও Pulsar F250 (সেমি-ফেয়ার্ড স্টাইলিং)। তার মাস ছয়েক পর বাজাজ ফের নতুন পালসার মডেল নিয়ে জল্পনা উস্কে দিল। বাজাজ তাদের পালসার ব্র্যান্ডের অধীনে নয়া মোটরসাইকেল লঞ্চ করার পরিকল্পনা করছে, সংস্থাটির সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সে দিকেই তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
বাজারে এখনও আধিপত্য বজায় থাকলেও বিগত ক'মাসে পালসারের বিক্রি লক্ষ্যণীয় হারে কমেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাইকে নতুন আপডেট দিতে বাজাজের অনীহার ফলেই এমনটা ঘটছে বলে মত দু'চাকা গাড়ি মহলের। নতুন প্রজন্মকে কাছে টানতে অস্ট্রিয়ার কেটিএম (KTM)-এর হাত ধরে ভারতে আনা Pulsar NS200 এবং Pulsar RS200 যতটুকু সাফল্য পেয়েছে, সবটাই প্রাথমিক স্তরে। সাম্প্রতিক কালে সেগুলির বিক্রির পরিসংখ্যানও আশাব্যঞ্জক নয়। ফলে পালসারের আদি ডিএনএ-কে পুঁজি করে ফের একবার দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা করছে বাজাজ। ভবিষ্যতে লঞ্চ হতে চলা আপকামিং পালসারের নাম কী হবে, তার আভাস এখনই মিলল।
Bajaj Pulsar Elan ও Pulsar Eleganz
গত মাসে বাজাজ পালসার এলান এবং পালসার এলিগানজ নাম দু'টির নথিভুক্তিকরণ সেরে রেখেছে। পালসার এলান নামটি ট্রেডমার্কের জন্য গত ৩ মার্চ আবেদন জানিয়েছে বাজাজ। পালসার এলান নামের অধিকার তাদের এখনও প্রাপ্ত হয়নি। তবে ৪ মার্চ আবেদন করা পালসার এলিগানজ নাম ব্যবহারে সরকারি অনুমোদন পেয়েছে বাজাজ। ফলে বাজাজ ছড়া অন্য কোনও সংস্থা সেই নাম ব্যবহার করলে তা আইনের চোখে অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। নাম দু'টি যে পরিষেবার অধীনে নথিভুক্ত হয়েছে তা হল - দু'চাকা গাড়ি, মোটরসাইকেল, স্কুটার, তিন চাকা গাড়ি, দু'চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ি, পার্টস এবং কম্পোনেন্টস।
এলান এবং এলিগানজ সম্পূর্ণরূপে নতুন মডেল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে নাকি বাজারচলতি পালসারের নয়া ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে লঞ্চ হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপলব্ধ নেই। পূর্বে টুইনার (Twinner) নাম ট্রেডমার্ক করেছিল বাজাজ এটি সংস্থার আপকামিং মিডলওয়েট টুইন সিলিন্ডার বাইকের নাম হবে বলে জল্পনা চলেছিল। এই বিষয়ে বাজাজ কোনও মন্তব্য করেনি বলে হালে টুইনার নিয়ে চর্চাও গিয়েছে থেমে।
প্রসঙ্গত, নতুন পালসারের লঞ্চ ইভেন্টে বাজাজ অটোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজীব বাজাজ (Rajib Bajaj) বলেছিলেন, নতুন প্রজন্মের ১৫০ সিসি অথবা ২০০ সিসি পালসার বাজারে আনার বিষয়টি আপাতত বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। ফলে আধুনিক লাইফস্টাইলের সাথে মানানসই করে Pulsar 150 ও Pulsar 200-এর নামে বৈচিত্র আনতে Elan ও Eleganz ব্যবহারের তত্ত্ব উঠে আসছে। আবার আরেকটি মহল সম্পুর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করছে।
বিদেশে ব্যবসার নিরিখে বাজাজ বর্তমানে ভারতের অন্যতম সফল সংস্থা। দেশীয় বাজারে বিক্রি কমলেও প্রায় প্রতি মাসে রেকর্ড হারে বাইরে মোটরসাইকেল রপ্তানি করছে তারা। ১২৫ সিসি, ১৫০ সিসি, ১৬০ সিসি, ১৮০ সিসি, ২০০ সিসি, এবং ২৫০ সিসির ইঞ্জিন ভ্যারিয়েন্টে বিভিন্ন পালসার মডেল বেচছে বাজাজ। আর্ন্তজাতিক বাজারে ব্যবসায় প্রসার ঘটাতে বাজাজের প্রয়োজন আরও বড় ইঞ্জিন তথা শক্তিশালী মোটরসাইকেলের। সে ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম মডেলের মাধ্যমে মিডলওয়েট মোটরসাইকেল সেগমেন্টে আলাদা পরিচয় তৈরি করতে সুবিধা হবে সংস্থাটির। যেখানে বর্তমানে এই ক্যাটাগরিতে রাজ করছে রয়্যাল এনফিল্ডের মতো সংস্থা। অনুমান, বাজাজের ২৫০ সিসির বেশি ডিপ্লেসমেন্টের আপকামিং পালসারের নাম এলান এবং পালসার এলিগানজ হতে পারে।
এদিকে প্রথাগত জ্বালানি চালিত গাড়ির পাশাপাশি বৈদ্যুতিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বাজাজ। ২০২০ সালে নতুন আঙ্গিকে ইলেকট্রিক অবতারে বাজারে ফিরেছে চেতক। বৈদ্যুতিক স্কুটার হিসাবে চেতকের জনপ্রিয়তা নেহাত কম নয়। চেতক সাব-ব্র্যান্ডের অধীনে বিভিন্ন ই-স্কুটারের উপরে যে কাজ চলছে, তা নিশ্চিত করেছেন বাজাজ অটোর সিইও রাজীব বাজাজ। ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর একটি নতুন ইলেকট্রিক ভেহিকল লঞ্চ করা হবে বলে জানানো হয়েছে সংস্থার তরফে। এ জন্য আর্কুদির কারখানায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে অত্যাধুনিক ম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটি গড়ে তোলা হচ্ছে। জুনে সেখান থেকে বেরোবে প্রথম ই-স্কুটার। চলতি অর্থবর্ষে ৫০,০০০ ইলেকট্রিক স্কুটার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বাজাজ।