পৃথিবীতে ফিরেই বিয়ে! ভুয়ো মহাকাশচারীর ফাঁদে পড়ে ২৫ লক্ষ টাকা খোয়ালেন মহিলা
দীর্ঘক্ষণ ধরে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা কিংবা চিঠি আদানপ্রদান করে প্রেম করার সেই সিনেম্যাটিক নস্টালজিয়া এখন প্রায় অতীত হয়ে গিয়েছে বললেই চলে। এখন সোশ্যাল মিডিয়া মারফত প্রেমই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আগমন ঘটায় দূরত্ব এখন আর কোনো বাধাই নয়, প্রথম দেখা থেকে শুরু করে পাকা কথা - সবকিছু এখন চ্যাটবক্সেই সেরে ফেলেন ইউজাররা। তবে এত কিছুর মধ্যেও একুশ শতকের এই অত্যাধুনিক ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত হওয়া ভুয়ো প্রেমের ঘটনা আজকাল প্রায়শই খবরের শিরোনামে থাকে। আর অলীক ভালোবাসার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন - এমন উদাহরণও রয়েছে ভুরিভুরি। তবে আজ এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদেরকে এমন এক রোমহর্ষক ভুয়ো প্রেমের কাহিনী শোনাতে চলেছি, যেখানে এক জাপানি মহিলা প্রায় ২৪.৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন এবং ঘটনাটিকে প্রত্যক্ষ করে রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে পুলিশ এটিকে আন্তর্জাতিক রোম্যান্স কেলেঙ্কারী (international romance scam) হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু এমন কী ঘটেছে এই সারপদার্থহীন প্রেমকান্ডে? আসুন জেনে নিই।
Instagram-এ ভুয়ো রাশিয়ান মহাকাশচারী সেজে আলাপচারিতা শুরু করেন প্রতারক
টিভি আসাহি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাসখানেক আগে শিগা প্রিফেকচারের ৬৫ বছর বয়সী এক জাপানি নারীর সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম (Instagram)-এ এক ব্যক্তির আলাপ হয়। ওই ব্যক্তি মহাকাশ স্টেশনে কর্মরত একজন রাশিয়ান মহাকাশচারী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। এবং তার প্রোফাইলেও এমন কিছু ছবি দেওয়া ছিল যা দেখে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, তিনি নিশ্চিতভাবে কোনো-একটি স্পেস স্টেশনে কাজ করেন। তাই ওই ব্যক্তি যে আসলে খাঁটি প্রতারক, সে বিষয়ে মহিলাটির মনে কোনো সন্দেহ হয়নি।
কিছুদিন প্রেমালাপ চালিয়ে হঠাৎই ওই জাপানি মহিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন ভুয়ো মহাকাশচারী
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলাপ হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই জুটি বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ঘনঘন বার্তালাপ চালিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তীকালে ইনস্টাগ্রাম থেকে সরে এসে তারা জাপানি মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন লাইন (Line) মারফত নিজেদের কথাবার্তা জারি রাখেন। এভাবে বেশ কিছুদিন আলাপচারিতার পর আচমকা একদিন মহিলাটিকে ওই ব্যক্তি জানান যে, তিনি তার প্রেমে পড়েছেন, এমনকি তাকে বিয়ে করারও প্রস্তাব দিয়ে ফেলেন। একাধিক টেক্সট মেসেজ করে মহিলাটিকে ওই ব্যক্তি বারংবার জানাতে থাকেন যে, তিনি তাকে খুবই ভালোবাসেন এবং তাকে বিয়ে করার জন্য রীতিমতো ব্যাকুল! শুধু তাই নয়, ওই ভুয়ো মহাকাশচারী আরও জানান যে, তিনি মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর জাপানে এসে ওই মহিলার সঙ্গে একটি নতুন জীবন শুরু করতে চান।
সত্যি সত্যিই বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন ভেবে প্রেমে রীতিমতো হাবুডুবু খেয়ে সম্পূর্ণভাবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান ওই জাপানি মহিলা। তাই ওই ভুয়ো মহাকাশচারীকেই মনে মনে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেন তিনি। কিন্তু সম্পূর্ণ অচেনা একজনের প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং বিপুল ভালোবাসার জেরে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দেওয়া মাত্রই শুরু হয় আসল খেলা। এরপর ওই ভুয়ো মহাকাশচারী মহিলাটিকে একদিন বলেন যে, পৃথিবীতে ফিরে এসে তাকে বিয়ে করার জন্য তার বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। তিনি ওই মহিলাকে জানান, যে রকেটটি তাকে জাপানে নিয়ে যাবে, সেটির ল্যান্ডিং ফি বাবদ তাকে বেশ কিছু টাকা জমা দিতে হবে। আর এই ছুতো দেখিয়ে ওই মহিলার কাছ থেকে বেশ মোটা টাকা দাবি করে বসেন ওই প্রতারক মহাকাশচারী। আর অগাধ ভালোবাসার জেরে ওই মহিলাও তাকে সব টাকা দিতে সম্মত হয়ে যান।
ভুয়ো প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে ২৪.৮ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন ওই জাপানি মহিলা
ইয়োমিউরি শিমবুন (Yomiuri Shimbun)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৯ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মহিলাটি পাঁচটি কিস্তিতে মোট ৪.৪ মিলিয়ন ইয়েন (২৪.৮ লক্ষ টাকা) ওই ভুয়ো মহাকাশচারীটিকে পাঠান। তবে সব টাকা পাঠানো সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে ওই মহাকাশচারীর কোনো দেখা পাওয়া যায় না। কিছুদিন পর ফের ব্যক্তিটি আরও বেশ কিছু টাকা চেয়ে বসায় অবশেষে সন্দেহ জাগে ওই মহিলার মনে। তাই আর দেরি না করে ওই ব্যক্তির নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। আর তার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বর্তমানে ওই ভুয়ো মহাকাশচারীর খোঁজে জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছে। ভুয়ো প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে উক্ত জাপানি মহিলার সঙ্গে ঘটা এই ঘটনার কথা শুনে চোখ রীতিমতো কপালে উঠেছে নেটিজেনদের। হাজারো সুবিধা তথা ভালো গুণ থাকা সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়ার ভয়ঙ্কর কালো দিকটি আরও একবার জনসমক্ষে এনেছে আলোচ্য ঘটনাটি। তাই আগামী দিনে সামাজিক মাধ্যমে অচেনা কারোর সাথে আলাপ করার আগে অবশ্যই সতর্ক হোন।