ভারতের বাজার থেকে পাততাড়ি গোটানোর পরিকল্পনা নেই! সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে জানাল Honor
যতই জল্পনা চলুক না কেন, এখন ভারতের বাজারকে 'আলভিদা' (বিদায়) জানানোর কোনোরকম পরিকল্পনা নেই Honor (অনার)-এর! আজ্ঞে হ্যাঁ, সম্প্রতি এক রিপোর্টে জনপ্রিয় স্মার্টফোন সংস্থাটি খুব স্পষ্টভাবেই এই কথা জানিয়ে দিয়েছে। আসলে বেশ কয়েকদিন আগে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, Honor খুব শীঘ্রই ভারতের বাজার থেকে প্রস্থান করতে পারে কারণ সংস্থার টুইটার অ্যাকাউন্টটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডরম্যান্ট রয়েছে। কিন্তু এই দাবি Honor সম্পূর্ণভাবে একথা অস্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, হালফিলে সংস্থাটি ভারতে ১২,৯৯০ টাকায় নতুন Honor Watch GS 3 মডেলটিও লঞ্চ করেছে। ফলে এখান থেকেই খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, Honor-এর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার খবরটি একেবারেই ভুয়ো।
জানিয়ে রাখি, ভারতের বাজার ছাড়ার কথা অস্বীকার করলেও হুয়াওয়ে (Huawei)-এর প্রাক্তন সাব-ব্র্যান্ডটি কিন্তু তাদের টিমকে ইতিমধ্যেই ভারত থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তবে এই প্রসঙ্গে কোম্পানির সিইও ঝাও মিং (Zhao Ming) বলেছেন যে, অনার বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক কারণে তার টিমকে দেশের বাইরে সরিয়ে নিয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, সংস্থাটি স্থানীয় অংশীদারদের সহযোগিতায় যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং এক্ষেত্রে কোম্পানির তরফে নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তই যথাযথ এবং যুক্তিসঙ্গত হবে।
কিন্তু হঠাৎ করেই নিজেদের টিমকে ভারতের বাইরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণ কী? জানা গিয়েছে যে, সম্প্রতি দেশের সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পড়শি দেশে ব্যবসার উৎসস্থল কোথায়, তা খতিয়ে দেখতেই নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সেই কারণেই গত কয়েক মাসে একাধিক চীনা স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থার দফতরে হানা দিয়েছে ইডি (ED)। সোজা ভাষায় বললে, ছাইচাপা আগুনের মতো ভারত-চীন সংঘাত এখনও চুপিসাড়ে হলেও বেশ জোরকদমে চলছে!
চীনা স্মার্টফোন কোম্পানিগুলির পেছনে পড়েছে ইডি
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ভিভো (Vivo), ওপ্পো (Oppo) ও শাওমি (Xiaomi)-র অফিসেও তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সরকার। এই মাসের শুরুর দিকে ডিরেক্টরেট অফ এনফোর্সমেন্ট বা ইডি (ED) উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে ভিভো মোবাইলের ৪৮টি অফিসে অভিযান চালায়। এই অভিযানের পর, ইডি ভিভোর ভারতে ব্যবসার সাথে যুক্ত ১১৯ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়, যার মধ্যে ৪৬৫ কোটি টাকা (৫৮.৭৬ মিলিয়ন ডলার) মজুত ছিল। ভিভোর পরপরই ওপ্পোও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের রাডারে চলে আসে। পাশাপাশি হুয়াওয়ের ওপরেও নজর পড়ে সরকারমহলের।
খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারত সরকারের এই কার্যকলাপে চীনা স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি মোটেই খুশি নয়। স্মার্টফোন কোম্পানিগুলির ওপর ঘন ঘন চালানো অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় এক চীনা মুখপাত্র বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারংবার তদন্ত যে কেবল স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে তাই নয়, বরং উদ্যোক্তাদের ভারতে ব্যবসার প্রতি আগ্রহকেও অনেকটাই কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে দেশের সার্বিক উন্নতিতেও বিপুল বাধার সৃষ্টি হচ্ছে, তাই ভারত ছেড়ে অন্যান্য দেশে ব্যবসায়িক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজেই উদ্যোক্তারা বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে এই ঘন ঘন খানাতল্লাশিতে যে আখেরে ভারতেরই ক্ষতি হচ্ছে, তা চীনা মুখপাত্রের কথায় স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে দুই দেশের পারস্পরিক ঠান্ডা লড়াই আগামী দিনে ব্যবসাকে ঠিক কতটা প্রভাবিত করবে, তা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে…