Android-এর চেয়ে iOS-ই স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বেশি পছন্দ, নতুন রিপোর্টে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
Apple (অ্যাপল)-এর iOS (আইওএস)-এর তুলনায় Android (অ্যান্ড্রয়েড) ডিভাইসের দাম যে বেশ অনেকটাই কম, একথা আমাদের সকলেরই জানা। বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে Android স্মার্টফোন অধিকাংশ ইউজারই ব্যবহার করে চলেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট পুরো অন্য কথা বলছে। সম্প্রতি দেখা গেছে যে, Android-কে টেক্কা দিয়ে iOS ব্যবহারকারীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য মনে হলেও কথাটা কিন্তু সত্যি। ২০১৮ সালে Android-এর মার্কেট শেয়ার ছিল ৭৭.৩২ শতাংশ, যা বর্তমানে ৬৯.৭৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আর Apple-এর iOS-এর ক্ষেত্রে এর সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনাটি ঘটেছে। iPhone (আইফোন)-এর অপারেটিং সিস্টেমটির মার্কেট শেয়ার এই একই সময়ে ১৯.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫.৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে Android-এর চেয়ে iOS-কে এখন ইউজাররা কতটা বেশি পছন্দ করছে।
StockApps (স্টকঅ্যাপস) নামক একটি অ্যানালিটিক্স ফার্মের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে বিগত চার বছরে কীভাবে অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় আইওএসের ইউজারবেস ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। ২০২২ সালে ২৫.৪৯ শতাংশ মার্কেট শেয়ারের সাথে আইওএস-এর গ্রোথ পূর্বের তুলনায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অ্যাপলের জন্য নিঃসন্দেহে এক দারুণ সুখবর।
এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে যে, হঠাৎ করে এরকম একটা চমকপ্রদ ঘটনা ঘটার কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে ব্যাপারটি হল অ্যাপল তার আইফোনগুলির জন্য চিরকালই বেশ বড়োসড়ো দাম নির্ধারণ করেছে, যে কারণে শখ থাকলেও অধিকাংশেরই এই হ্যান্ডসেটগুলিকে পকেটস্থ করার সামর্থ্য থাকে না। তবে ইদানিংকালে অ্যাপল মিড-রেঞ্জে বেশ কিছু আইফোন লঞ্চ করছে। আর সেইসাথে সংস্থার ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলিও বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে দুর্দান্ত ছাড়ের পাশাপাশি বড়ো রকমের এক্সচেঞ্জ অফারের সুবিধাসহ কেনার জন্য উপলব্ধ থাকছে। ফলে এখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করলে একটি দুর্দান্ত আইফোনকে যে কেউ যে-কোনো সময়ে পকেটস্থ করে ফেলতে পারেন। আর এই কারণেই সাম্প্রতিক এই নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আবার অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় অ্যাপলের আইফোনগুলিতে উপলব্ধ দুর্দান্ত কিছু ফিচারও এর মূল কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন। আর সত্যি কথা বলতে গেলে, অ্যাপলের দেখাদেখি বেশ কিছু চটকদার ফিচার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনেও ইদানিংকালে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করা সত্ত্বেও ইউজারদের মনে আইফোন ব্যবহার করতে না পারার কোনো খেদ না থেকে যায়। তবে পূর্বের তুলনায় মার্কেট শেয়ার খানিকটা হলেও হারানো সত্ত্বেও, অ্যান্ড্রয়েড কিন্তু এখনও বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী অপারেটিং সিস্টেম। এর বর্তমান শেয়ার (অর্থাৎ ৬৯.৭৪) অ্যাপলের মার্কেট শেয়ারের অর্ধেকেরও বেশি।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এশিয়ায় (যার মধ্যে ভারতও রয়েছে) অ্যান্ড্রয়েডের শেয়ার ৮১ শতাংশ, যেখানে আইওএস-এর খাতে এই অঙ্কটি মাত্র ১৮ শতাংশ। আবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছবিটা একটু আলাদা, কারণ সেখানে আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েডের মার্কেট শেয়ার যথাক্রমে ৫৪ এবং ৪৫ শতাংশ। ফাইন্যান্স এক্সপার্ট এডিথ রিডস (Edith Reads)-এর মতে, আইওএস-এর তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি অনেকাংশে বেশি সুবিধাজনক। কেননা আইওএস কেবলমাত্র অ্যাপলের আইফোনগুলির ক্ষেত্রে কাজ করে, যেখানে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন, ট্যাবলেট সহ আরও অনেক ডিভাইসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর এই কারণেই বরাবরই আইওএস-এর তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড খানিকটা হলেও এগিয়ে থাকবে।
আর শুধু এটাই নয়, বাজারে আইওএস-এর তুলনায় অ্যান্ড্রয়েডের অধিক আধিপত্য বজায় রাখার আর-একটি মূল কারণ হল এর দাম। এই চরম মূল্যবৃদ্ধির যুগেও ৪,০০০-৫,০০০ টাকার রেঞ্জে ভারতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন পাওয়া যায়, যেখানে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের আইফোন কিনতে হলেও ক্রেতাদের ন্যূনতম ৩০,০০০-৪০,০০০ টাকা ব্যয় করতে হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের সংখ্যাকে আইফোন কখনোই সার্বিকভাবে ছাপিয়ে যেতে পারবে না বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।