সারাদিন মেতে আছেন স্মার্টফোন, ল্যাপটপে? সাবধান! সময়ের আগেই হয়ে যাবেন বৃদ্ধ
বর্তমান ডিজিটাল যুগে দৈনন্দিন জীবনধারণের জন্য প্রায় সকলেই নানা রকমের ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছেন। বলতে গেলে স্মার্টফোন, ইয়ারবাড, স্মার্টওয়াচসহ অন্যান্য আরও অনেক ডিভাইস চলতি সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে যেগুলি ছাড়া এখন এক মুহূর্তও চলা একপ্রকার অসম্ভব বললেই চলে। তবে আপনি কি জানেন যে, অত্যধিক মাত্রায় এই গ্যাজেটগুলি ব্যবহার করলে আপনার বয়স খুব দ্রুত হারে বাড়তে পারে? আজ্ঞে হ্যাঁ, শুনে কিঞ্চিৎ অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও কথাটা কিন্তু ১০০% খাঁটি সত্যি। ইতিমধ্যেই প্রচুর গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বিভিন্ন রকমের প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে মানুষের দৃষ্টিশক্তি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক কুপ্রভাব পড়ে; কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এর ফলে প্রাণীদেহের বয়সও খুব দ্রুত হারে বাড়তে থাকে অর্থাৎ বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই চাঞ্চল্যকর খবর শুনে অধিকাংশ ইউজারেরই চোখ কপালে উঠতে বাধ্য!
অধিক মাত্রায় ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার করলে অকালে বাড়বে বয়স
"ফ্রন্টিয়ারস ইন এজিং" (Frontiers in Aging) জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপের মতো গ্যাজেটগুলি থেকে নির্গত নীল আলোর (blue light) দরুন প্রাণীদেহের বার্ধক্য প্রক্রিয়া খুব দ্রুত হারে কাজ করে। এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির রিসার্চের সহ-লেখক জাডউইগা গিবোলোউইজ (Jadwiga Giebultowicz) বলেছেন যে টিভি, ল্যাপটপ এবং ফোনের মতো দৈনন্দিন জীবনে অধিক মাত্রায় ব্যবহৃত ডিভাইসগুলি থেকে অত্যধিক পরিমাণে নির্গত নীল আলো প্রাণীদেহের ত্বক, ফ্যাট সেল, সংবেদনশীল নিউরোন সহ আরও অনেক কোশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। তদুপরি, মেটাবলাইটের (শরীরের কোশগুলি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অপরিহার্য রাসায়নিক) মাত্রাও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়।
ফ্রুট ফ্লাইয়ের উপর পরীক্ষা করার পরই হাতেনাতে মিলল প্রমাণ
ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে নির্গত নীল আলো মানুষের শরীরের উপর কতটা কুপ্রভাব ফেলতে পারে, তার চাক্ষুষ প্রমাণ পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা ফ্রুট ফ্লাই নামক একটি পতঙ্গের উপর এই নীল আলো বিকিরণের পরীক্ষাটি সম্পন্ন করেছিলেন। বিজ্ঞানীরা টানা দুই সপ্তাহ ধরে কিছু সংখ্যক ফ্রুট ফ্লাইকে নীল আলোর সংস্পর্শে রেখেছিলেন, এবং কিছু সংখ্যক মাছিকে একটানা অন্ধকারে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরে দেখা যায় যে, নীল আলোর সংস্পর্শে থাকা মাছিগুলির শরীরে মেটাবলাইটের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে পরিবর্তিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের দেহের স্ট্রেস-প্রোটেকটিভ জিনগুলি কাজ করা শুরু করেছে। তারা এটাও দেখেন যে, ওই মাছিগুলির দেহে গ্লুটামেটের মাত্রা বেশ খানিকটা কমে গেছে এবং সুসিনেটের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, আর সেইসাথে তাদের শরীরে মৃত কোশের সংখ্যাও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তবে, যে মাছিগুলিকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল, তাদের শরীরে কিন্তু কোনোরকম উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
এই গবেষণার ফলেই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, নীল আলোর সংস্পর্শে থাকার সুবাদে এক সেট মাছির শরীর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এতে অকালে তাদের বার্ধক্য প্রক্রিয়াও বেশ দ্রুত গতিতে বেড়ে গিয়েছে। আর সেই কারণেই বিজ্ঞানীরা আরও দাবি করেছেন যে, নীল আলো মাছির শরীরকে যখন এরকম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তখন মানুষের শরীরেও এর চরম কুপ্রভাব পড়তে বাধ্য। এক্ষেত্রে তারা জানিয়েছেন যে, অত্যধিক মাত্রায় নীল আলো মানুষের শরীরের স্ট্রেস হরমোনকে কার্যকর করতে পারে। এর ফলে মানবদেহের বিভিন্ন কোশেও চরম কুপ্রভাব পড়ে, যার ফলে বয়স অকালে বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এর পাশাপাশি তারা আরও জানিয়েছেন যে, ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলি থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিনের উৎপাদনকে দমন করে, যার ফলে মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। অর্থাৎ মোদ্দা কথা হল, শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহারের পরিমাণ অবশ্যই কমাতে হবে, নচেৎ অকালে বয়স বাড়ার পাশাপাশি আরও নানারকম বিপজ্জনক শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে ব্যবহারকারীদের!