5G: ভারতে কেমন হবে আসন্ন প্রযুক্তির খরচ? এই ৭টি প্রশ্নের উত্তর থেকে মেটান ৫জি সম্পর্কিত সমস্ত কৌতূহল
সময়ের সাথে সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি প্রযুক্তির দুনিয়ায়ও আমূল পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন প্রত্যেকে 2G (২জি) নেটওয়ার্ক ব্যবহার করত, কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে আপামর দেশবাসী (পড়ুন 4G ইউজার) 5G (৫জি) কানেক্টিভিটি রোলআউটের স্বপ্নে মশগুল হয়ে রয়েছে। দেশের আকাশে-বাতাসে চতুর্দিকে এখন 5G-র আগমনের খবর ম ম করছে। আসন্ন প্রজন্মের এই নেটওয়ার্ককে কেন্দ্র করে মানুষের মনে রয়েছে চরম কৌতূহল এবং হাজারো প্রশ্ন, তবে এর মধ্যে অনেক প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর এখনও অজানা রয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার এক ইভেন্টে ইউজারদের মনের সকল কৌতূহল দূর করলেন CloudConnect Communications (ক্লাউডকানেক্ট কমিউনিকেশনস)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং চিফ রেভিনিউ অফিসার বিধু নওটিয়াল।
সম্প্রতি, সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে করা একাধিক সওয়াল-জবাবের প্রেক্ষিতে ৫জি প্রসঙ্গে তার নিজের মতামতের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত নানা বিষয়ে দেশের জনসাধারণকে নির্ভুল তথা সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন বিধু। ঠিক কী বলেছেন তিনি? আসুন সেই প্রশ্নোত্তর পর্বের ওপর একনজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
প্রশ্ন ১: ভারতে কবে ৫জি প্রযুক্তি লঞ্চ হবে?
– বর্তমানে ভারত সরকার ৫জি নিয়ে বেশ জোরকদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্পেকট্রাম নিলামের কাজও বেশ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। সবমিলিয়ে দেখতে গেলে, ভারতে বাণিজ্যিকভাবে ৫জি-র আগমন ঘটতে ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগতে পারে।
প্রশ্ন ২: ৫জি আসার পর টেলিকম সেক্টরে কোনো একটি নির্দিষ্ট অপারেটরের একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে কি?
– না, এরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। ৫জি আসলে নির্দিষ্ট কোনো অপারেটরের একচেটিয়া আধিপত্য থাকবে না, কারণ বিশেষভাবে কোনো টেলিকম সংস্থার কথা মাথায় রেখে ৫জি প্রযুক্তি রোলআউট করা হচ্ছে না। ডিজিটাল দুনিয়ায় ভারতকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি দেশের আপামর জনগণের সুবিধার্থে ৫জি নেটওয়ার্ককে আনা হচ্ছে। তাই কোনো কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত পরিষেবার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে যে তারা মার্কেটে কতটা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। খুব স্বাভাবিকভাবে যে কোম্পানি ভালো পরিষেবা দেবে, ব্যবহারকারীরা সেই সংস্থাটিকেই পছন্দ করবে এবং চাইলে অন্যান্য নেটওয়ার্ক ইউজাররাও ভালো সার্ভিস পাওয়ার আশায় সেই কোম্পানিটিতে স্যুইচ করার সুযোগ পাবেন।
প্রশ্ন ৩: 4G এবং 5G-র মধ্যে স্পিডের কতটা পার্থক্য থাকবে, সেই নিয়ে ব্যবহারকারীদের কৌতূহল তুঙ্গে রয়েছে। সত্যি সত্যিই 5G এলে ইউজাররা কি সর্বোচ্চ স্পিড পেতে সক্ষম হবেন?
– এটি খুবই জটিল প্রশ্ন। তবুও আনুমানিকভাবে বলা যায় যে, ৫জি আসলে গড় নেট স্পিড প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫ গিগাবাইট বা ৫ এমবিপিএস হতে পারে, যা একটি মোবাইলের জন্য বেশ অনেকটাই বেশি। এমনকি, এই গতি ১০০ গিগাবাইট পর্যন্ত যেতে পারে। যদিও এই সাংখ্যমানগুলি সবই অনুমানসাপেক্ষ, তবে ৪জি এবং ৫জি-র মধ্যে স্পিডের যে বেশ ভালোরকম পার্থক্য দেখা যাবে সেকথা বলাই বাহুল্য।
প্রশ্ন ৪: BSNL এখনও তাদের 4G পরিষেবা চালু করেনি। কিন্তু আগামী ১৫ আগস্ট তারা ৪জি সার্ভিস লঞ্চ করতে চলেছে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি কবে নাগাদ ৫জি পরিষেবা চালু করবে? কারণ তারা যদি খুব তাড়াতাড়ি ৫জি রোলআউট না করে, তাহলে টেলিকম মার্কেটে অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে তাদের অনেক সময় লাগবে।
– যেহেতু বিএসএনএল একটি সরকারি সংস্থা, তাই তাদেরকে বিশেষ কিছু পলিসি মেনে কাজ করতে হয়। বর্তমানে সরকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ৫জি-র প্রচারকার্য চালাচ্ছে। এমত পরিস্থিতিতে ৪জি পরিষেবা চালু করার পরপরই সংস্থাটি ৫জি নিয়ে কাজ করা শুরু করবে।
প্রশ্ন ৫: 5G-র আগমনের সুবাদে ব্যবহারকারীরা কী কী সুবিধা পাবেন?
– যেহেতু আপামর দেশবাসীর সুবিধার কথা মাথায় রেখে ৫জি সার্ভিস রোলআউট করা হচ্ছে, তাই সকল জনসাধারণের পাশাপাশি কিছু সংখ্যক ইউজাররা এই পরিষেবা মারফত বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। এটি রিয়েল টাইমে সরাসরি রোগীর সাথে হাসপাতালের কানেকশন করতে সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তি প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন এবং তার কোনো বড়ো শহরের নামজাদা হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হয়, তবে তাকে ৫জি-র মাধ্যমে রিয়েল টাইমে এই পরিষেবা দেওয়া হবে।
প্রশ্ন ৬: 5G রোলআউটের শুরুর দিকে কিংবা তার পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের মানুষ কি এই পরিষেবা পেতে সক্ষম হবেন?
– ধরা যাক, কোনো গ্রামীণ এলাকায় একটি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাইরের দুনিয়া অর্থাৎ শহরাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি করার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রামটিতে একটি বেসরকারি ৫জি টাওয়ার ইন্সটল করা যেতে পারে। বেসরকারি উদ্যোগ পেলেই গ্রামীণ এলাকার সঙ্গে শহরাঞ্চলের সংযোগ আরও মজবুত করা সম্ভবপর হবে। সেক্ষেত্রে ৫জি আসার ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৫জি সার্ভিস উপলব্ধ করা হবে বলে আশা করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৭: প্রতিটি ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখেই কি 5G পরিষেবার দাম নির্ধারণ করা হবে?
– প্রতিটি কোম্পানিই শেষ পর্যন্ত লাভের মুখ দেখতে চায়, কারণ ভালো পরিষেবা প্রদানের জন্য তাদেরকে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। তবে এত কিছু সত্ত্বেও দেশের প্রতিটি ইউজার যাতে অনায়াসে ৫জি পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন, তার জন্য সংস্থাগুলি এই সার্ভিসের যথাযথ দাম নির্ধারণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। অনুমান করা হচ্ছে যে প্রথমে ৫জি কানেক্টিভিটির খরচ বেশি হতে পারে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা হ্রাস পাবে বলে আশা করা যেতে পারে।