Jio, Airtel এবং Vi-এর জন্য শিক্ষা! উচ্চ গতির ইন্টারনেটের মিথ্যা দাবি, ১৭৭ কোটি টাকা জরিমানা
বিগত কয়েক বছর ধরেই গোটা বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। চলতি সময়ে অন্তর্জালের প্রাচুর্যতার দৌলতে এখন সব কাজই মানুষ অনলাইনে করতে পছন্দ করেন, আর তার জন্য প্রয়োজন হয় দ্রুত গতির নেট স্পিড। আর ইউজারদের সুবিধার্থে টেলিকম সংস্থাগুলিও দুরন্ত গতির ইন্টারনেট অফার করার দাবি করে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলি যতটা হাই-স্পিড অফার করছে বলে দাবি করে, ততটা স্পিড কিন্তু পাওয়া যায় না। এর ফলে কাজের সময় ঠিকঠাক নেটওয়ার্ক না পেয়ে ইউজারদেরকে রীতিমতো গোত্তা খেতে হয়। যদিও এর জন্য টেলিকম সংস্থাগুলিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিশেষ কোনো সহজ উপায়ও থাকে না ব্যবহারকারীদের কাছে। ফলত দেখা যায় যে, কোম্পানিগুলির বিশেষ কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, কিন্তু যথাযথ নেট স্পিড না পেয়ে আখেরে ব্যবহারকারীদেরকেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে এতদিন ধরে টেলিকম সংস্থাগুলি ইউজারদেরকে ভুল প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাড় পেয়ে গেলেও সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় এমন একটি ঘটনার খবর সামনে এসেছে, যা শুনলে সব দেশের টেলিকম কোম্পানিগুলি কিন্তু একটু নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হবে। কী সেই ঘটনা? চলুন জেনে নিই।
হাই-স্পিড ইন্টারনেট অফার করার ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তিন টেলিকম সংস্থাকে ১৭৭ কোটি টাকা জরিমানা করলো অস্ট্রেলিয়া
হাই-স্পিড ইন্টারনেট দেওয়ার মিথ্যা দাবি করায় সম্প্রতি তিনটি টেলিকম সংস্থাকে ১৭৭ কোটি টাকা জরিমানা করেছে অস্ট্রেলিয়া। হালফিলে এই খবর টেক দুনিয়ায় ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ায় ইউজারমহলের পাশাপাশি সব দেশের টেলিকম কোম্পানিগুলিও বেশ নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই তিনটি টেলিকম সংস্থার তরফে গ্রাহকদেরকে রিচার্জ প্ল্যানে হাই-স্পিড ইন্টারনেট প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ কোম্পানিত্রয়ের সকল প্রতিশ্রুতি ভুয়ো বলে প্রমাণিত হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার কম্পিটিশন অ্যান্ড কনজিউমার কমিশন (ACCC) টেলিকম অপারেটরগুলিকে মোটা টাকা জরিমানা করে। উল্লেখ্য যে, অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল আদালত যে সব সংস্থাকে জরিমানা করেছে, তার মধ্যে রয়েছে টেলস্ট্রা (Telstra), টিপিজি টেলিকম (TPG Telecom) এবং সিঙ্গাপুরের সেরা টেলিকম কোম্পানি অপটাস (Optus)।
উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহের মিথ্যা দাবি করায় পেতে হল কঠোর সাজা
রিপোর্টে বলা হয়েছে, উক্ত টেলিকম সংস্থাগুলি ২০১৯ সালে তাদের ফাইবার প্ল্যানে ৫০ এমবিপিএস এবং ২০২০ সালে ১০০ এমবিপিএস উচ্চ গতির ইন্টারনেট স্পিড দেওয়ার দাবি করেছিল। কিন্তু সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা গিয়েছে যে, কোম্পানিগুলির যাবতীয় প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা, যার জেরে টেলিকম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ফলে শেষমেশ হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় আর কোনো উপায় না দেখে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয় টেলিকম অপারেটরত্রয়। জানা গিয়েছে যে, কোম্পানিগুলির এই ভুয়ো প্রতিশ্রুতিতে প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ভারতেও অতীতে যৎপরোনাস্তি স্বেচ্ছাচারিতা করেছে টেলিকম সংস্থাগুলি
খুব স্বাভাবিকভাবেই আলোচ্য ঘটনাটি যে ভারতের সবকটি টেলিকম সংস্থা অর্থাৎ জিও (Jio), এয়ারটেল (Airtel), ভোডাফোন আইডিয়া (Vodafone Idea), বিএসএনএল (BSNL) এবং এমটিএনএল (MTNL)-এর টনক নড়াতে বাধ্য, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য। এদেশের টেলিকম কোম্পানিগুলিও ইউজারদেরকে অত্যন্ত দ্রুত গতির নেট স্পিড অফার করার দাবি করে; কিন্তু বাস্তবিকভাবে প্রায়শই কচ্ছপের গতিসম্পন্ন নেট স্পিড নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রচুর অভিযোগ দেখা যায়। তাই আগামী দিনে ইউজারদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে টেলিকম সংস্থাগুলি অবশ্যই দুবার ভেবে দেখবে বলে আশা করা যায়।
এখানেই শেষ নয়, এছাড়া অন্যান্য বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রেও এদেশের টেলিকম কোম্পানিগুলিকে এর আগে স্বেচ্ছাচারিতা করতে দেখা গেছে। উল্লেখ্য যে, মাসে ৩০ দিন থাকা সত্ত্বেও সংস্থাগুলি কয়েক মাস আগে পর্যন্ত ইউজারদেরকে এক মাসের প্ল্যানে ২৮ দিন, দুই মাসের প্ল্যানে ৫৬ দিন এবং তিন মাসের প্ল্যানে ৮৪ দিন ভ্যালিডিটি অফার করতো। এই নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিস্তর ক্ষোভ-অভিযোগ থাকলেও বিষয়টিকে কোনো পাত্তাই দেওয়া হতো না। কিন্তু সম্প্রতি ট্রাই (TRAI)-এর হস্তক্ষেপের পর হালফিলে প্রত্যেকটি টেলিকম কোম্পানিই ৩০ দিনের ভ্যালিডিটিসম্পন্ন রিচার্জ প্ল্যান মার্কেটে লঞ্চ করেছে। সবমিলিয়ে বলতে গেলে, অহেতুক স্বেচ্ছাচারিতা না করে ইউজারদের সুবিধার্থে টেলিকম অপারেটরগুলি সঠিক তথা যথাযথ পরিষেবা প্রদান করবে বলেই আশায় বুক বেঁধে রয়েছে আপামর দেশবাসী। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে ব্যবহারকারীদের নিরাশ করার মতো কোনো কাজ সংস্থাগুলি করবে না বলেই আশা করা যেতে পারে।