eSim পরিষেবা চালু নিয়ে লড়াইয়ে টেলিকম এবং স্মার্টফোন কোম্পানিগুলি, কী আছে গ্রাহকদের কপালে?
মোবাইল এবং সিম কার্ড বা নেটওয়ার্ক পরিষেবা – একে অপরের পরিপূরক, বলতে গেলে একটি ছাড়া অন্যটি অচল! কিন্তু এই দুটি ভিন্ন জিনিসের নির্মাতা বা পরিচালকরা যদি নিজেদের মধ্যে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহকের চিন্তার কারণ হয় বইকি! সেক্ষেত্রে বলি, বাস্তবে ঠিক এমনই কিছু ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে ভারত। সম্প্রতি দেশের টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার এবং স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলি বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে, যার কারণ ইলেকট্রনিক সিম বা eSim (ই-সিম)। ইকোনমিক টাইমসের (ET)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, টেলিকম কোম্পানিগুলি সমস্ত স্মার্টফোনে E-Sim বাধ্যতামূলক করতে চায়, কিন্তু স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, COAI (সিওএআই বা সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া) এবং ICEA (আইসিইএ, ইন্ডিয়ান সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন) নিজেদের মতের স্বপক্ষে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিতে চিঠি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সিওএআই হল রিলায়েন্স জিও (Reliance Jio), এয়ারটেল (Airtel) এবং ভোডাফোন (Vodafone)-এর প্রতিনিধিত্ব দ্বারা পরিচালিত সংস্থা। অন্যদিকে আইসিইএ-এর সাথে জড়িত আছে মোবাইল নির্মাতা, ব্র্যান্ড মালিক এবং প্রযুক্তি প্রদানকারী কোম্পানিগুলি। যাইহোক এখন প্রশ্ন হচ্ছে ই-সিম কী, এর সুবিধা ভালো না খারাপ, আর মোবাইল ফোনে এটির ব্যবহার নিয়ে এই দুই ধরণের শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ কেন? আসুন এই বিষয়ে জেনে নিই…
eSim কী?
যারা জানেন না তাদের বলে রাখি, ই-সিম (এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল) বিশেষভাবে তৈরি সিম যা স্মার্টফোনে চলতি ফিজিক্যাল সিমের বদলে ইনসার্ট করা হয়। এটি সাধারণ সিমের মতই যাবতীয় পরিষেবা দেয়। একইসাথে এটি স্মার্টফোনের ব্যাটারির জন্য জায়গা বাঁচাতে সাহায্য করে এবং মডেলটিকে পাতলা ডিজাইন বিশিষ্ট করে তুলতে সাহায্য করে। এই সিম বিশেষত স্মার্টওয়াচের মতো পরিধানযোগ্য বা উইয়ারেবলস ডিভাইসগুলির সাথে ভাল কাজ করে। এটি নেটওয়ার্ক ক্যারিয়ারের মাধ্যমে সহজে ডিঅ্যাক্টিভেট বা অ্যাক্টিভ করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল যে, ই-সিম নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তাছাড়া এতে গ্রাহকরা সহজেই যান্ত্রিক উপায়ে তাদের সার্ভিস প্রোভাইডার পরিবর্তন করতে পারবেন, পরিষেবার জন্য কোনো নতুন সিম লাগবে না। আবার যদি কারো একটির বেশি নম্বর থাকে, তবে তারা এই সিমের সাহায্যে একটি ডিভাইসেই সেই নম্বরগুলির আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন এবং ইচ্ছেমত প্রোফাইলগুলিতে স্যুইচ করতে পারবেন।
eSim নিয়ে টেলিকম কোম্পানি এবং স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের বিরোধ
দেশীয় টেলিকম অপারেটররা চাইছে যে, ১০,০০০ টাকা বা তার বেশি দামের সমস্ত ডিভাইসে ই-সিম বাধ্যতামূলক করা হোক৷ তাদের মতে, সেমিকন্ডাক্টর ঘাটতি এবং অন্য কিছু সমস্যার দরুন সিম কার্ডের দাম ৪-৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে; সেই তুলনায় সংস্থাগুলির ই-সিমে যাবতীয় সুবিধা প্রদান করার খরচ অনেক কম। কিন্তু এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি আইসিইএ বা স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলি। তারা বলছে – ১০,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা রেঞ্জের হ্যান্ডসেটগুলিতে ই-সিম সাপোর্ট দিতে গেলে, স্মার্টফোনগুলির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। সোজা কথায় বললে, দুইপক্ষই নিজেদের খরচ বৃদ্ধি নিয়ে ভাবছে যার জেরে তাদের নিজেদের মধ্যে মতের মিল হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে, আইসিইএ কর্তৃক দাবি খারিজ হওয়ায় বা মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায়, নিজেদের যুক্তি স্বপক্ষে ডট (DoT) বা ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনকে চিঠি দিয়েছে টেলিকম কোম্পানিগুলি। তবে এক্ষেত্রে স্মার্টফোন কোম্পানিগুলিও চুপ করে বসে নেই। তারা এই বিষয়ে ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক (Meity)-এর সাথে যোগাযোগ করে বলেছে যে, একটি সিমের দাম বাড়লেও তুলনামূলকভাবে স্মার্টফোনে ই-সিম প্রবর্তন বা বাস্তবায়নের খরচ অনেক বেশি। মত, পাল্টা দাবি – সবমিলিয়ে ভারতের বাজারের এই দুটি মূল ভিত্তির বিরোধ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তাই এখন দেখার।
ভারতে কোন কোন অপারেটর ও স্মার্টফোন eSim সাপোর্ট করে?
এয়ারটেল সর্বপ্রথম ই-সিমের সুবিধা চালু করেছিল। তবে এখন জিও বা ভিআই (ভোডাফোন-আইডিয়া)-ও এই বিশেষ সিমের সিম পরিষেবা অফার করে৷ তবে বিএসএনএল (BSNL) বা এমটিএনএল (MTNL) ই-সিম পরিষেবা সমর্থন করে না। অন্যদিকে মোবাইল সাপোর্টের কথা বললে, ২০১৮ সালের পর লঞ্চ হওয়া সমস্ত অ্যাপল আইফোনে (Apple iPhone) এর সুবিধা উপলব্ধ।তাছাড়া Samsung Galaxy Z Flip বা Samsung Galaxy Fold 2-র মত ফোল্ডেবল ফোনে, Galaxy S20 সিরিজ, Galaxy S21 সিরিজ এবং Galaxy S22 সিরিজে রয়েছে ই-সিম সাপোর্ট। এছাড়া, Motorola Razr এবং Google Pixel 3A ও তার পরের মডেলগুলিও ই-সিমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।