ভূমিকম্পের কারণে বাড়ি চাপা পড়েছিল এক ছাত্র, জীবন বাঁচিয়ে দিল WhatsApp এর এই ফিচার

Avatar

Published on:

WhatsApp saves Student Life stuck under debris

চলতি সময়ে একে অপরের সঙ্গে ২৪×৭ যুক্ত থাকার জন্য বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম WhatsApp-এর গুরুত্ব যে কতখানি, সে সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার আর কোনো প্রয়োজন পড়ে না। আচমকা খানিকক্ষণের জন্য যদি এই অ্যাপ কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তাহলেই আমাদের বর্তমান জীবনে এই অ্যাপটির প্রয়োজনীয়তা কতটা, তা আমরা প্রত্যেকেই হাড়ে হাড়ে টের পাই। কাজের প্রয়োজনে কিংবা অবসর সময়ে এই প্ল্যাটফর্ম মারফত চ্যাটিং হালফিলে এতটাই আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এই মেসেজিং অ্যাপটি ছাড়া এখন আমাদের জীবন কার্যত অচল বললেই চলে। উল্লেখ্য, Meta মালিকানাধীন এই অ্যাপ্লিকেশনে একাধিক মজাদার তথা কার্যকর ফিচার মজুত রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই অ্যাপটির বিভিন্ন ফিচার তো ইউজারদের কাজের প্রয়োজনে নানাভাবে ব্যবহৃত হয়েই থাকে, তবে এবার WhatsApp-এ উপলব্ধ একটি দুর্দান্ত ফিচারের সহায়তায় প্রাণ বাঁচলো এক তরুণ শিক্ষার্থীর।

ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়া ছাত্রকে উদ্ধার করল WhatsApp, নেপথ্যে রয়েছে এই কার্যকর ফিচার

একথা আমাদের সকলেরই জানা যে, গত সোমবার সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্কের স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এই ভূমিকম্পটি হয়। যেহেতু সেই সময় বেশিরভাগ মানুষই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন, তাই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি অকালে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে দুর্যোগের পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপের নীচে প্রচুর মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন। সাহায্যের জন্য অনেকে কাতর আর্তি জানালেও তাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার মতো লোক না মেলায় ইতিমধ্যেই অস্তমিত হয়ে গিয়েছে অসংখ্য প্রাণপ্রদীপ। ঠিক এভাবেই একটি অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন বোরান কুবাত (Boran Kubat) নামের এক শিক্ষার্থী। নিজের প্রাণ বাঁচাতে তিনিও সাহায্যের জন্য অনেক কাকুতিমিনতি করেছিলেন, কিন্তু তার ডাকে কেউই সাড়া দেয়নি। তবে হঠাৎই হোয়াটসঅ্যাপের একটি ফিচার ব্যবহার করার কথা তার মাথায় এসে যায়, যার দৌলতে তিনি এ যাত্রায় নিজের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন।

WhatsApp-এ স্ট্যাটাস পোস্ট করার ফলে প্রাণে বাঁচলেন বোরান

উল্লেখ্য যে, গত সোমবার যখন তুরস্কে প্রথমবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, তখন নিজের পরিবার সমেত ওই অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যেই ছিলেন বোরান। তবে সেই সময় হওয়া ভূমিকম্পের ফলে তাদের অ্যাপার্টমেন্টটি সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ফলে বোরান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে গেলেও পরে আবার তারা সকলে আপ্যার্টমেন্টে ফিরে আসেন। কিন্তু এরপর দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হতেই ওই অ্যাপার্টমেন্টটি ভেঙে পড়ে, যার জেরে ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়েন বোরান এবং তার মা৷ ফলে বাঁচার তাগিদে সুদীর্ঘ সময় ধরে সাহায্যের জন্য প্রচুর কাকুতিমিনতি করা সত্ত্বেও কোনো উদ্ধারকারীকে না দেখতে পেয়ে শেষমেশ বুদ্ধি খাটিয়ে একটি উপায় বার করেন তিনি। বোরান হোয়াটসঅ্যাপে তার লোকেশন সম্পর্কে বিশদে বর্ণনা দিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করে নিজের স্ট্যাটাসে পোস্ট করেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ এই হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসটি দেখেন, তাহলে অনুগ্রহ করে এক্ষুনি এসে আমাদেরকে উদ্ধার করুন।’

এর ফলে বোরানের ফোনে মজুত থাকা সকল কন্ট্যাক্টসের কাছেই উক্ত ভিডিওটি পৌঁছে যায়। এরপর ভিডিওটিকে খুঁটিয়ে দেখে উদ্ধারকারীরা তাদেরকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয় এবং ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, WhatsApp-এর স্ট্যাটাস ফিচারটি ব্যবহার করার কথা যদি বোরানের মাথায় না আসতো, তাহলে এ যাত্রায় প্রাণে বাঁচা তার পক্ষে কার্যত অসম্ভব হয়ে যেতো। কারণ ভূমিকম্পের পর বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এখন ধ্বংসস্তূপ থেকে যাদের বের করে আনা হচ্ছে, তাদের প্রায় সকলেই মৃত। ফলে উদ্ধারকারী দলের পাশাপাশি বোরানের জীবন বাঁচানোর পিছনে Meta মালিকানাধীন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম WhatsApp-এরও যে ব্যাপক অবদান রয়েছে, সেকথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য।

সঙ্গে থাকুন ➥