স্পাইওয়্যারের শিকার বহু ভারতীয়! আপনার ফোনেও গোপনে কেউ আড়ি পাতছেনা তো?

সম্পর্কে টানা-পোড়েন, সন্দেহ-শঙ্কা – এইসব কোনো নতুন ব্যাপার নয়। কিন্তু মানুষ যতো বেশি আধুনিক প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের হাত ধরে ডুবে থাকতে চাইছে, ততই জটিলতা বাড়ছে বাস্তব জীবনে। এমনিতে আমাদের মধ্যে অনেকেই নিজের সঙ্গীর গতিবিধি জানতে তার ফোন-কম্পিউটার চেক করে থাকি; তবে একবিংশ শতাব্দীতে ‘ইনসিকিওরিটি’ শব্দটি এত প্রাধান্য পেয়েছে বা মন ভাঙ্গার ঘটনা এত বেশি বেড়েছে যে স্রেফ সন্দেহের বশে কিংবা সঙ্গীর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার উদ্দেশ্যে কয়েক হাজার মানুষ ব্যবহার করছেন ট্র্যাকিং সফ্টওয়্যার! শুনতে কিঞ্চিৎ অবাক লাগলেও, সাম্প্রতিক খবরে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই সামনে এসেছে। ভারতীয় ওয়েবসাইট বিজিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৪,৬২৭ জন স্মার্টফোন ইউজার স্টকারওয়্যার (Stalkerware) নামক ট্র্যাকিং সফ্টওয়্যারের কারিকুরির শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। করোনাকালীন পরিস্থিতির জন্য মানুষ বাড়িতে না থাকলে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারত বলে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।

স্টকারওয়্যার জিনিসটি আসলে কী বা এটি কী ধরণের তথ্য অ্যাক্সেস করে?

আগেই বলেছি, এটি এক ধরণের স্পাইওয়্যার বা ট্র্যাকিং সফ্টওয়্যার। তবে স্টকারওয়্যারের কার্যকারিতার কথা বললে, এটির সাহায্যে মোবাইল ফোনের মেসেজ, কল লগ, লোকেশন এবং অন্যান্য সব ব্যক্তিগত ক্রিয়াকলাপের সহজেই অ্যাক্সেস পাওয়া যায়। এটি কোনো অ্যাপ্লিকেশনের আদলে ফোনে থাকে বলে জানা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে ‘ওয়াই-ফাই’ নামে একটি অ্যাপ্লিকেশনকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ক্যাস্পারস্কি (Kaspersky); এই অ্যাপটি এমনিতে মোবাইলে জিওলোকেশন অ্যাক্সেস করে।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, স্টকারওয়্যার কোনো নতুন বিড়ম্বনা নয়। এটি বহু বছর ধরে স্পাইওয়্যার বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে এবং এটির বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি রয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে, এই স্পাইওয়্যারের দ্বারা সারা বিশ্বে মোট ৫৩,৮৭০ জন মোবাইল ইউজার প্রভাবিত হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তারও আগে ২০১৯-এ, ক্যাস্পারস্কি ৬৭,৫০০ জন মোবাইল ইউজারকে আক্রান্ত হিসেবে আবিষ্কার করেছিল।

এই বিষয়ে সংস্থার রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট টিমের প্রধান ভিক্টর চ্যাবাইশেভ বলেছেন যে তারা প্রায় প্রতিদিনই এই স্পাইওয়্যারের উপস্থিতির নতুন নমুনা শনাক্ত করেন। সেক্ষেত্রে শুধু কারো গতিবিধি ট্র্যাক করার জন্য নয়, অনেক সময় এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে কোনো ধরণের সাহায্যের প্রত্যাশাও পরিলক্ষিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।

আপনার ফোনে স্টকারওয়্যার রয়েছে কিনা তা কীভাবে জানবেন?

এক্ষেত্রে স্মার্টফোন ইউজারদের বলে রাখি, যদি আপনাদের ডিভাইসে এমন কোনো অপরিচিত অ্যাপ্লিকেশন থাকে যা এক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হয়নি – তবে ডিটেইলস চেক করে সেটিকে আন-ইনস্টল করে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। এছাড়াও, ফোনে এই ধরণের কোনো ভুয়ো অ্যাপের অস্তিত্ব আছে কিনা দেখতে অ্যান্ড্রয়েডের ‘আননোন সোর্স’ অপশন বা অ্যাপ সেটিংস পরীক্ষা করে দেখুন। তদুপরি, ক্যাস্পারস্কি নির্মিত টাইনিচেক (TinyCheck) নামের ফ্রি অ্যান্টি-স্টকারওয়্যার টুলটিও প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মোবাইল ডিভাইসে স্টকারওয়্যার খুঁজে পেলে সেটি অপসারণ করার সময় সজাগ থাকতে হবে, কারণ বিষয়টি ট্র্যাকারের নজরে আসতে পারে এবং তার আপত্তিজনক আচরণ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন