বড় সাধ করে গেমিং ল্যাপটপ অর্ডার দিয়েছিলেন, Flipkart পাঠাল বড় পাথর!
সদ্য শেষ হওয়া Flipkart Big Diwali সেলে ডিসকাউন্ট ও অন্যান্য অফারের ফায়দা তুলে অনেকেই তার পছন্দের প্রোডাক্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস অর্ডার করেছিলেন। তবে এই সেল থেকে কেনাকাটা করে প্রত্যেক ক্রেতার অভিজ্ঞতা যে সন্তোষজনক ছিল, তা একদমই বলা যায় না। কারণ সম্প্রতি একটি এমন ঘটনা সামনে এসেছে যা পুনরায় আলোচ্য ই-কমার্স সাইটটির ডেলিভারি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর (বা ম্যাঙ্গালুরু) শহরের এক নিবাসী চিন্ময় রামনা (Chinmaya Ramana), Flipkart আয়োজিত দিওয়ালি সেল থেকে একটি 'ব্র্যান্ড নিউ' গেমিং ল্যাপটপ অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পরিপাটি ভাবে প্যাক করা ল্যাপটপ বক্সটি ডেলিভার করা হলেও, তা খুলে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কেননা ওই রিটেল বক্সে গেমিং ল্যাপটপের পরিবর্তে একটি বিশাল পাথর সহ ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য এবং কম্পিউটারের পুরানো কিছু যন্ত্রাংশে ভরা ছিল। ফলে এযাবৎ সোশ্যাল মিডিয়াতে অনলাইন শপিং কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতির গল্প শোনা চিন্ময়, এবার বাস্তবে নিজেই হলেন ভুক্তভোগী!
গেমিং ল্যাপটপ অর্ডার করে হাতে এলো পাথর, দাবি এক Flipkart Plus মেম্বারের
গত ১৫ই অক্টোবর অর্থাৎ 'বিগ দিওয়ালি সেল' চলাকালীন, ফ্লিপকার্ট প্লাস মেম্বারশিপ থাকার দরুন অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট বেনিফিট সহ চিন্ময় রামনা তার এক বন্ধুর জন্য Asus TUF Gaming F15 নামের একটি গেমিং ল্যাপটপ অর্ডার করেছিলেন৷ এরপর ২০ তারিখ প্রোডাক্টটিকে 'সিল প্যাকড' অবস্থায় চিন্ময়ের কাছে ডেলিভারি করা হয়। তবে আইটেমটি ওপেন-বক্স ডেলিভারি অপশনের অধীনে না আসায় এবং একইসাথে বাইরে থেকে প্যাকেজ যথাযথ থাকায় তিনি ডেলিভারি প্রদানকারী ব্যক্তির সাথে OTP শেয়ার করে প্রোডাক্ট ডেলিভারি কনফার্ম করেন।
কিন্তু জালিয়াতির ঘটনাটি সামনে আসে মূল প্যাকেটটি খোলার পর। খাকি রঙের ফ্লিপকার্ট প্যাকেজিং খুলে চিন্ময় দেখেন যে, ভিতরে থাকা Asus রিটেল বক্সটি টেম্পার করা হয়েছিল এবং বারকোড সহ পণ্যের বিবরণ (প্রোডাক্ট ডিটেলস) ছিড়ে ফেলা হয়েছিল। এমনটা দেখে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ জাগে উক্ত ক্রেতার মনে। আর বক্সটি খোলার পর দেখা যায়, অর্ডার করা গেমিং ল্যাপটপের পরিবর্তে একগুচ্ছ ই-বর্জ্য এবং মাদার বোর্ড সহ কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ ভরে দেওয়া হয়েছে প্যাকেটে। শুধু তাই নয়, ডেলিভার করা বক্সটিকে ভারী করার জন্য তাতে ল্যাপটপের সমতুল্য ওজনের একটি বিশালাকৃতির পাথরও রাখা ছিল।
ফ্লিপকার্ট পলিসি অনুযায়ী, ওপেন-বক্স ডেলিভারি না হলে প্যাকেট রিসিভ নাও করতে পারেন ক্রেতা এবং যদি প্যাকেট ঠিক থাকে কিন্তু ভিতরে থাকা প্রোডাক্ট 'মিসিং' বা 'ড্যামেজ' হয়, তাহলেও তা ফেরত পাঠানোর জন্য আবেদন করা যাবে। ফলে পলিসি অনুসারে চিন্ময় তৎক্ষণাৎ কয়েকটি ছবি ক্লিক করে ফ্লিপকার্টে রিটার্ন রিকোয়েস্টের জন্য আবেদন করেন। যদিও তা বিক্রেতার দ্বারা অনুমোদিত হয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ই-কমার্স সাইটটি বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে এবং বিক্রেতা জানান প্যাকেজিং তথা ডেলিভারির সময়ে ল্যাপটপটি সম্পূর্ণভাবে অক্ষত ছিল।
এই বিষয়ে চিন্ময়ের মন্তব্য - “আমি সমস্ত প্রমাণ সহ ডেলিভারি হওয়ার দিনেই ফ্লিপকার্টে এই ফ্রড হওয়ার বিষয়ে একটি রিপোর্ট জমা করেছিলাম। বিপরীতে ফ্লিপকার্ট থেকে আমাকে রিপ্লাই দেওয়া হয়েছিল যে, এই সমস্যার সমাধান করতে তাদের কিছু সময় দরকার। এরপর ২৩শে অক্টোবর পুনরায় ফ্লিপকার্টের তরফ থেকে আমি একটি ইমেল পাই, যেখানে বিক্রেতা রিটার্ন রিকোয়েস্ট প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ট্রান্সপোর্টেশনের সময় প্রোডাক্টটি মোটেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।” ফলে যাবতীয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ই-কমার্স সাইটটি তদন্ত করার মাধ্যমে শীঘ্রই সমস্যাটি সমাধান করে পেমেন্ট ফেরত দেবে, এই আশা নিয়েই এখন বসে আছেন কর্ণাটক ভিত্তিক এই ফ্লিপকার্ট গ্রাহক।
দেখতে গেলে এই ধরনের ঘটনা এর আগেও বহুবার ঘটেছে। যেমন, মোবাইলের পরিবর্তে সাবানের বার বা আসল প্রোডাক্টের পরিবর্তে নকল মডেল ডেলিভারি করা নিয়ে বহুবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করেছেন অনলাইন শপিং সাইটগুলির ক্রেতারা। এমনকি চলতি বছরের 'Flipkart Big Billion Days' সেলেও ল্যাপটপ অর্ডারকারী এক ব্যক্তি ডেলিভার হওয়া বক্সে ডিটারজেন্টের প্যাকেট পাওয়ার দাবি করেছিলেন৷ সেই ঘটনারই কিছুটা পুনরাবৃত্তি বলা চলে। এখন দেখার ফ্লিপকার্ট কত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।