Fake Loan Apps: অল্প সুদে ঋণের টোপ দেখিয়ে স্মার্টফোন হেনস্থা, সুরক্ষিত থাকতে কী করবেন
হঠাৎ অনেক টাকার দরকার পড়লে অধিকাংশ মানুষেরই সর্বপ্রথম লোন নেওয়ার কথা মাথায় আসে। আর বর্তমান ডিজিটাল যুগে যেহেতু সর্বত্রই স্মার্টফোনের রমরমা, তাই ব্যাংক ছাড়াও এখন অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে অনেকে খুব সহজেই লোন নেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করে থাকেন। সেক্ষেত্রে হালফিলে আপনারও যদি এরকম কোনো প্ল্যান থাকে, তাহলে এখনই সতর্ক হোন। কারণ অনলাইন অ্যাপ থেকে লোন নিয়ে আপনি নিজের জন্য কত বড়ো বিপদ ডেকে আনছেন, তা হয়ত আন্দাজও করতে পারবেন না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, অনলাইনে উপলব্ধ অ্যাপ থেকে লোন নিলে কার্যত সর্বস্বান্তও হয়ে যেতে পারেন আপনি! আজ্ঞে হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও কথাটা সত্যি; কারণ মার্কেটে এখন এমন অনেক ভুয়ো লোন অ্যাপ এসে হাজির হয়েছে, যেগুলি ব্যবহারকারীদের অল্প সুদে বা বিভিন্ন সুবিধার মাধ্যমে খুব সহজেই ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। অ্যাপ্লিকেশনগুলির চেহারা হুবহু আসল ম্যাপের মতোই, ফলে গ্রাহকদের মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক হয় না। আর সেই কারণেই ছদ্মবেশী অ্যাপগুলিকে হাতিয়ার করে ইউজারদেরকে আর্থিক প্রতারণার জালে জড়িয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে হ্যাকাররা। সম্প্রতি এক রিপোর্টে ঠিক এভাবেই কেরালার বহু সংখ্যক মানুষ হ্যাকারদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
OTP শেয়ার করলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হবে গড়ের মাঠ
টাইমস অফ ইন্ডিয়া বা টিওআই (TOI)-এর রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে যে, ভুয়ো লোন অ্যাপের ফাঁদে পা দিয়ে কেরালার মুলানথুরুথি ও পাম্বাকুদার দুই বাসিন্দা যথাক্রমে ৩.৬ লক্ষ এবং ১ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতারকরা ওই ব্যক্তিদের লোন দেওয়ার আগে তাদের পরিচয় যাচাই করার জন্য তাদের কাছ থেকে যাবতীয় ব্যক্তিগত ডিটেইলস জানতে চায়। সেইসাথে জালিয়াতরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মোবাইলে প্রাপ্ত ওটিপিটিও তাদের সাথে শেয়ার করতে বলে এবং ওটিপি শেয়ার করা মাত্রই তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা টাকা হাতিয়ে নেয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সৌভাগ্যবশত পুলিশ জানতে পারে যে, দুর্বৃত্তরা একটি ভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ওই টাকাটা গিফট কার্ড কেনার জন্য কাজে লাগাচ্ছে, ফলে এক্ষেত্রে তারা চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
ঋণ পরিশোধে সম্মত হওয়া সত্ত্বেও আসছে হুমকিসহ আপত্তিকর মেসেজ
জানা গিয়েছে, এডাপ্পালির ২৫ বছর বয়সী এক মহিলাও খুবই অল্প সুদে 'স্মল ক্রেডিট তারা রুপি' (Small Credit Tara Rupee) লোন অ্যাপ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু ঋণ পরিশোধের তারিখ এগিয়ে আসার সাথে সাথেই তার কাছে হ্যাকারদের তরফ থেকে হুমকি এবং আপত্তিকর মেসেজ আসতে থাকে, আর সেই কারণে ওই মহিলা কোচি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ওই মহিলা পুরো টাকাটাই পরিশোধ করতে সম্মত হয়েছিলেন কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতারকরা তাকে বিভিন্ন রকমের আপত্তিজনক মেসেজ পাঠাতে থাকে। ওই মহিলার মর্ফড ফটোগ্রাফ তার আত্মীয় এবং বন্ধুদের কাছে পাঠানোরও হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা, অগত্যা তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। এখন, স্থানীয় পুলিশ ফোনে অশালীন বার্তা পাঠানোয় তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৭ ধারার পাশাপাশি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪এ (১) (৪) ধারায় আপত্তিকর যৌন মন্তব্য করার জন্য, ৫০৬ ধারায় অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শনের জন্য এবং কোনো মহিলার শালীনতাকে অপমান করার জন্য ৫০৯ ধারায় অ্যাপটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, এই মাসে এখনও পর্যন্ত এই জাতীয় ৭টি রিপোর্ট পুলিশের কাছে জমা পড়েছে।
ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে হবে সম্মানহানি
২০ বছর বয়সী এক যুবকের সঙ্গেও ঠিক এরকম ধরনেরই এক ঘটনা ঘটেছে। ওই যুবক 'গোল্ড ক্যাশ' (Gold Cash) অ্যাপ থেকে ১১,০০০ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু ছয় দিন পর থেকেই ঋণ পরিশোধের জন্য প্রতারকরা ওই ব্যক্তিকে হুমকি দিয়ে একাধিক মেসেজ সেন্ড করতে থাকে। আর সবশেষে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ওই যুবকের মর্ফড ফটোগ্রাফ তার বন্ধু এবং আত্মীয়দের কাছে পাঠাতে শুরু করে স্ক্যামাররা। নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এক্ষেত্রে কোচি পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শনের জন্য, আইটি আইনের ৬৬ (ই) ধারায় গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য এবং কেরালা পুলিশ অ্যাক্ট ১২০ (ও)-এর অধীনে অ্যাপটির নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
ভুয়ো লোন অ্যাপের কারসাজি
স্থানীয় পুলিশের এক কর্মকর্তা টিওআই-কে জানিয়েছেন যে, ভুয়ো লোন অ্যাপগুলি অল্প সুদে ঋণ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রথমে ইউজারদেরকে আকৃষ্ট করে। তবে ইউজাররা এই অ্যাপগুলি ওপেন করলেই অজান্তেই হ্যাকাররা তাদের মোবাইলের কন্ট্যাক্ট লিস্ট, গ্যালারি সহ যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় ডেটার অ্যাক্সেস পেয়ে যায়। আর কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেই তাকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে প্রতারকরা এবং এর পরিণাম হিসেবে ওই ব্যক্তির কোনো গোপন তথ্য বা ছবি তার আত্মীয়-পরিজনদের পাশাপাশি ইন্টারনেটেও ফাঁস করার হুমকি দেয় স্ক্যামাররা। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোন পরিশোধ করতে সমর্থ হলেও দুর্বৃত্তরা ইউজারদেরকে অকারণে হেনস্থা করে।
কীভাবে এই ধরনের স্ক্যাম থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন
একথা খুব স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, এই ধরনের স্ক্যামের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে ইউজারদেরকে সর্বদা চোখকান খোলা রেখে চলতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যতই টাকার দরকার থাক না কেন, কোনো অনলাইন অ্যাপের দ্বারস্থ না হয়ে সর্বদা সঠিক পথে লোন নেওয়া উচিত। লোভের বশে অল্প সুদে বা বিভিন্ন সুবিধার মাধ্যমে ভুয়ো অনলাইন অ্যাপ থেকে লোন নিতে গিয়ে অযথা নিজেকে বিপদে না ফেলাই শ্রেয়। এছাড়া, কোনো অ্যাপকে সংবেদনশীল ডেটার (যেমন - ফটো গ্যালারি বা কন্ট্যাক্টস) অ্যাক্সেস প্রদান করা থেকে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদেরকে বিরত থাকতে হবে। তদুপরি, গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (Apple App Store) থেকে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে অ্যাপটির রিভিউ এবং ডেভেলপার ডিটেইলস খুঁটিয়ে যাচাই করে নেওয়া একান্ত আবশ্যক।