OTP Delivery Scam: অর্ডার ছাড়াই ডেলিভারি বয় বাড়িতে, ক্যান্সেল করার ওটিপি চেয়ে হাজার হাজার টাকা লুট
রোজকার ব্যস্ত জীবনযাপনে এখন নিজের জন্য দু’দন্ড সময় বের করতে মানুষের রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায়। ফলে দশটা দোকান ঘুরে শপিং করা এখন অধিকাংশ ইউজারদের কাছেই একপ্রকার স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এখন কমবেশি সকলেই অনলাইন শপিং নির্ভর হয়ে গিয়েছেন। যেহেতু কয়েকটা ক্লিকেই হাতের মুঠোয় চলে আসে দরকারি সকল জিনিসপত্র, তাই ঘরে বসে আরামসে কেনাকাটা সারতে এখন আট থেকে আশি সকলেই এই পন্থা অবলম্বন করছেন। কিন্তু অনলাইন শপিং যেমন ইউজারদের সময় বাঁচাচ্ছে, তেমনই ডেকে আনছে সর্বনাশও। বর্তমানে ব্যবহারকারীদের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে সাইবার অপরাধীরা নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত নানারকম ফন্দিফিকিরকে হাতিয়ার করে সহজসরল সাধারণ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এক নিমেষেই ফাঁকা করে দিচ্ছে। অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে নানা ধরনের জালিয়াতির খবর শোনা যায়; তবে ইদানীংকালে যে জালিয়াতিটি সাইবার মহলে হানা দিয়েছে, সেটির নাম হল 'ওটিপি প্যাকেজ ডেলিভারি স্ক্যাম' (OTP Package Delivery Scam)। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ এই জালিয়াতির শিকার হয়ে নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা খুইয়েছেন। তাই ইউজারদেরকে সতর্ক করতে হালফিলে তেলেঙ্গানার সাইবারাবাদের সাইবার ক্রাইম দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কিন্তু ঠিক কীভাবে ঘটছে এই স্ক্যাম? আসুন জেনে নিই।
কীভাবে ঘটছে 'OTP Package Delivery Scam'?
এই স্ক্যামের আওতায় আচমকাই আপনার বাড়ির দোরগোড়ায় এসে হাজির হবে কোনো সংস্থার একজন ডেলিভারি এজেন্ট, এবং সে বেশ জোর দিয়ে দাবি করবে যে, আপনার জন্য একটি অর্ডার রয়েছে। এমনকি আপনি যদি কোনো অর্ডার নাও করে থাকেন, তাও আপনার সাথে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকমটাই ঘটছে)। ফলে যারা কোনোদিনও অনলাইন শপিং করেন না, তারাও কিন্তু এই ধরনের জালিয়াতির শিকার হতে পারেন। এখন সত্যিই যদি আপনি অর্ডার করে থাকেন, তাহলে সেটিকে রিসিভ করার জন্য আপনার কাছ থেকে একটি ওটিপি চাইবে সেই এজেন্ট। আবার আপনি যদি কোনো অর্ডার না করে থাকেন, তাহলে সেটিকে ক্যান্সেল করার জন্যেও আপনার কাছ থেকে সে একটি ওটিপি চেয়ে বসবে (ফোনে লিঙ্ক পাঠিয়ে সেটায় ক্লিক করতে বলবে)। মোদ্দা কথা হল, যতক্ষণ না আপনি তাকে ওটিপি দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সে আপনার পিছু ছাড়বে না।
সেক্ষেত্রে অজানা কাউকে নিজের ওটিপি ভুলবশত দিয়ে ফেললে যে কী হয়, বর্তমান ডিজিটাল যুগে সে সম্পর্কে আর কাউকেই নতুন করে কিছু বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। উল্লেখ্য যে, আলোচ্য স্ক্যামের ক্ষেত্রেও ঠিক সেরকমটাই ঘটছে। জোরজবরদস্তি করে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ওটিপি চেয়ে নিচ্ছে ডেলিভারি এজেন্টরূপী প্রতারকরা, যার ফলে তাদের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য সহ ব্যাংকিং ডিটেইলসও জালিয়াতদের হাতের মুঠোয় চলে আসছে। এই অছিলায় খুব সহজেই তারা লক্ষ লক্ষ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এক চুটকিতেই সাফ করে দিতে সক্ষম হচ্ছে। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে সকলের সতর্ক হয়ে যাওয়া খুবই জরুরি।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইউজারদেরকে ম্যালিশিয়াস লিঙ্কেও ক্লিক করতে বাধ্য করছে প্রতারকরা
তবে এখানেই শেষ নয়; কথাতেই আছে যে, দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। সেক্ষেত্রে চলতি সময়ে হ্যাকারদের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। অনেক সময়েই বাড়িতে কোনো প্যাকেজ ডেলিভারি দিতে এলে যদি কোনো বয়স্ক মানুষ সেটিকে রিসিভ করেন, তাহলে যেন জালিয়াতরা লোক ঠকাবার আর একটু বাড়তি সুযোগ পেয়ে যায়। একটু অসচেতন গ্রাহকদেরকে দেখলেই স্ক্যামাররা তাদেরকে পেমেন্ট করার জন্য একটি বিশেষ লিঙ্ক ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এই লিঙ্ক মারফত অর্থ প্রদান করলে কিছু টাকা ডিসকাউন্ট পাওয়ারও প্রলোভন দেখানো হয় ব্যবহারকারীদেরকে। আবার, প্রোডাক্ট ডেলিভারির পর সেটির রেটিং দেওয়ার জন্যেও ইউজারদেরকে অনেক সময় বিশেষ কিছু লিঙ্কে ক্লিক করতে বাধ্য করে হ্যাকাররা। কিন্তু আদতে এই ধরনের ম্যালিশিয়াস লিঙ্কে ক্লিক করলেই ইউজারদের পেমেন্ট ইনফরমেশন সহ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য স্ক্যামারদের হাতের মুঠোয় চলে যায়। আর তার ফলটা যে কী হয়, সেকথা তো আমাদের সকলেরই জানা।
সবমিলিয়ে বলতে গেলে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে হ্যাকারদের হাত থেকে নিরাপদে থাকতে হলে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই হল এক এবং একমাত্র উপায়। বর্তমানে জালিয়াতদের রোখার যেহেতু বিশেষ কোনো উপায় নেই, তাই নানাবিধ স্ক্যামের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে ইউজারদেরকেই চোখকান খোলা রেখে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত টিপসগুলি মেনে চললে ব্যবহারকারীরা খুব সহজে এই ধরনের বিপজ্জনক সাইবার জালিয়াতির ঘটনাগুলিকে এড়িয়ে চলতে সক্ষম হবেন।
সাইবার স্ক্যামের হাত থেকে বাঁচতে হলে এই টিপসগুলি মেনে চলুন
▪️কোনো ই-কমার্স সংস্থার ডেলিভারি এজেন্ট বা প্রতিনিধি বলে দাবি করা কোনোও ব্যক্তির সাথে ওটিপির মতো সংবেদনশীল তথ্য খবরদার শেয়ার করবেন না।
▪️অর্ডার না করা সত্ত্বেও আচমকাই যদি আপনার বাড়িতে কেউ কোনো প্রোডাক্ট নিয়ে এসে হাজির হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করে নিন। সেক্ষেত্রে ই-কমার্স সংস্থার অথেন্টিক কাস্টমার কেয়ার নম্বরেই ফোন করছেন কি না, সেটা অবশ্যই চেক করে নিতে হবে। সবসময় মনে রাখবেন, যে যতই জোর করুক না কেন, নিজে অর্ডার না করলে কখনও কোনো প্রোডাক্ট রিসিভ করবেন না এবং অপরিচিত কারোর নির্দেশে অযথা কাউকে কোনোরকম পেমেন্ট বা পার্সোনাল ইনফরমেশন প্রদান করবেন না।
▪️কোনো অজানা সোর্স থেকে পাওয়া লিঙ্কে খবরদার ক্লিক করবেন না।
▪️অনলাইন শপিংয়ের সময় কখনোই ওয়েবসাইটগুলিতে আপনার পেমেন্ট ডিটেইলস সেভ করবেন না। সর্বদা অথেন্টিক এবং ভেরিফায়েড সাইট থেকে কেনাকাটা করুন।
▪️মূলত কার্ডের মাধ্যমে বা অনলাইন মারফত টাকা স্থানান্তরের সময়েই প্রতারণার ঘোর আশঙ্কা থাকে। তাই অনলাইন পেমেন্টের সময় অবশ্যই যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করুন, এবং যদি কেউ আপনার ব্যাংক বা ইউপিআই (UPI) ডিটেইলস জিজ্ঞাসা করে, তবে তাকে সেটি বলার আগে দশবার ভাবনাচিন্তা করুন। সেক্ষেত্রে অনলাইনে কার্ড ব্যবহারের সময় প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
▪️রোজই নিত্যনতুন উপায়ে সাইবার জালিয়াতির বিভিন্নরকম ঘটনা ঘটছে। তাই এই বিষয়গুলি সম্পর্কে নিজেকে ওয়াকিবহাল রাখতে সবসময় চোখকান খোলা রাখুন। সেইসাথে এই ধরনের কেলেঙ্কারির বিবরণ কোথাও প্রকাশিত হলে খবরগুলি খুব ভালো করে মন দিয়ে পড়ুন। এবং শুধু নিজেই নয়, সকল প্রিয়জনদের এবং বিশেষ করে বাড়ির বয়স্ক মানুষদেরকেও এই ধরনের ঘটনাগুলি সম্পর্কে বিশদে জানিয়ে রাখুন। মনে রাখবেন, সকলে একজোটে সচেতন হলে তবেই জালিয়াতদের রোখা সম্ভবপর হবে।