১২ লাখ টাকার বিল শুনে গ্রাহকের হার্ট অ্যাটাকের জোগাড়! এয়ারটেলের বিরুদ্ধে রায় আদালতের

Published on:

দেশের আইন যে সব ক্ষেত্রে ক্ষমতাবানের পক্ষে দাঁড়ায় না, বেঙ্গালুরুর ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের সাম্প্রতিক রায়ে সেটা আরো একবার প্রমাণিত হলো। শুধু তাই নয়, এই রায় বেঙ্গালুরুনিবাসী মেলভিন জন থমাসকে বড়সড় অন্যায়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। সুবিচার না পেলে তার ১২ লক্ষেরও বেশী টাকা অপচয় হতে পারতো। যদিও এক্ষেত্রে তাকে রীতিমতো লড়াই করে ন্যায়বিচার আদায় করে নিতে হয়েছে। পুরো ব্যাপারে দেশের অন্যতম প্রধান টেলিকম সংস্থা এয়ারটেলের (Airtel) মুখ পুড়েছে। উপরন্তু গ্রাহক হয়রানির জন্য তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট জরিমানাও ধার্য করা হয়, যা পরিশোধ করতে তারা বাধ্য। সুতরাং অযথা দেরী না করে এখন ঘটনার আসল বিবরণে নজর দেওয়া যাক।

সমস্যার সূত্রপাত ২০১৬ সালে। মেলভিন তখন বেঙ্গালুরুর একটি সংস্থায় ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। সে বছর অক্টোবর মাসের শেষে কাজের সূত্রে তাকে চীন যেতে হয়। তার আগে এয়ারটেলের কর্পোরেট অ্যাকাউন্টের অধিকারী মেলভিন তার টেলিকম অপারেটরের কাছে অনুরোধ জানান যাতে তারা নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য তার আন্তর্জাতিক রোমিং পরিষেবা সক্রিয় করে দেয়। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ভয়েস কলিংয়ের সময় কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদিও আবেদনের পরে এয়ারটেলের তরফ থেকে তিনি কাম্য পরিষেবা সম্পর্কে কোনরকম মেসেজ পাননি। অথচ বিদেশ থেকে ফেরার পরেই মোবাইল বিলের ধাক্কায় তার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জোগাড় হয়! ২৯শে অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর, ২০১৬ তারিখের মধ্যে আন্তর্জাতিক রোমিং এবং ডেটা পরিষেবা প্রদানের কারণে এয়ারটেল তার কাছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা দাবী করে! ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই মেলভিন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

কিন্তু আতঙ্কের পরিস্থিতিতে মেলভিন মোটেও ঘাবড়ে যাননি। প্রথমে এয়ারটেলের পক্ষ থেকে তার কাছে ১২,১৪,৫৬৬ টাকার বিরাট অঙ্কের বিল পাঠানো হয়। এরপর সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করায় সমস্যামুক্তির বদলে বিলের অঙ্ক আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১২,১৮,৭৩২ টাকায়! তার মোবাইল প্ল্যানের উর্ধ্বসীমা যেখানে ৯,১০০ টাকা, সেখানে ১২ লাখ টাকার বিল স্রেফ ইয়ার্কির সামিল! এরপরে সংস্থার সাথে দফায় দফায় কথাবার্তা ও অভিযোগের পর বিলের অঙ্ক প্রায় ৬০ শতাংশ কমে ৫,২২,৪০৭ টাকায় দাঁড়ায়। ফলে ব্যাপারটার মধ্যে যে নিশ্চিত কোন গন্ডগোল আছে, মেলভিন সেটা অনুমান করেন।

তাই এতকিছুর পরেও যখন কোন সুরাহা হচ্ছেনা, সেসময় মেলভিন ক্রেতা-সুরক্ষা কমিশনের শরণাপন্ন হন। ভারতী এয়ারটেলের বিরুদ্ধে তিনি জেলার ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। নিজের উকিলের মাধ্যমে তিনি জানিয়ে দেন যে এয়ারটেলের দাবী অন্যায্য।কারণ কাজের প্রয়োজনে কয়েকটা দিন চীনে কাটালেও, তার জন্য বারো লক্ষ টাকা বিল আসার কোন সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে তিনি নিজস্ব প্ল্যানের উর্ধ্বসীমা আদালতের কাছে পেশ করেন।

সবকিছু খতিয়ে দেখার পর ক্রেতা-সুরক্ষা দপ্তরের বিচারকেরা মেলভিনের পক্ষেই রায় দেন। বিলের পরিমাণ ১২ লক্ষ টাকা থেকে এক ধাক্কায় ৫ লক্ষে নেমে আসার মধ্যে তারা অসঙ্গতি দেখতে পান। তাছাড়া মেলভিনের মোবাইল প্ল্যান তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে।

বহুদিনের যুদ্ধের পর অবশেষে চলতি বছরের মার্চ মাসে বিচারকেরা তাঁদের রায় ঘোষণা করেন। এয়ারটেল যাতে নিজেদের অন্যায্য দাবী প্রত্যাহার করে সেজন্য তাঁরা এয়ারটেলের প্রতি নির্দেশিকা জারি করেন। এর ফলে এয়ারটেল বিপুল অঙ্কের বিল ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া বিচারকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যক্তিগত হয়রানি ও কোর্ট সংক্রান্ত খরচের জন্য মেলভিনের হাতে তাদের অতিরিক্ত ১০,০০০ টাকা জরিমানা হিসেবে তুলে দিতে হয়।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥