অনলাইন স্ক্যাম বা প্রতারণার চক্করে পড়ে কষ্টার্জিত অর্থ খুইয়ে বসা মানুষের সংখ্যা এখন উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। তবে এবার এই জাতীয় ঘটনায় নাম জড়ালো জয়পুরের একজন ব্যবসায়ীর। আসলে সম্প্রতি ওই ব্যক্তিকে ঠকিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৬৪ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে জালিয়াতরা। এক্ষেত্রে সিম সোয়াপিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, দিনদুয়েক ধরে ওই ব্যবসায়ী তাঁর মোবাইলে একের পর এক সন্দেহজনক কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করায় অবশেষে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চেক করেন এবং বুঝতে পারেন যে তিনি সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। পরে তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন, কারণ এত পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়াকে তো আর নিছক চুরি বলা চলে না, এ রীতিমতো ডাকাতি! এদিকে জয়পুরের পুলিশ ফোন হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনাকেও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, জয়পুরের ৬৮ বছর বয়সী ব্যবসায়ী রালেশ তাতুকা সম্প্রতি লক্ষ্য করেন যে তাঁর একাধিক ট্রানজ্যাকশন ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তিনি তাঁর ব্যাংক ব্যালেন্স সম্পর্কে জানতে তার ব্যাংকে ফোন করেন এবং ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া পেয়ে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান। কারণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয় যে, তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ৭০০ টাকা পড়ে আছে, যেখানে তাঁর কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩০০ টাকা অবশিষ্ট আছে! এরপরই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন তাতুকা।
তাতুকা পুলিশকে জানিয়েছেন যে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর মোবাইল ফোনটির সংযোগ আচমকাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর বিজনেস পার্টনারের মোবাইল ফোনেও এই একই গলদ পাওয়া যায়। ফোনের কানেক্টিভিটি আনার জন্য একাধিক ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর দুজনেই তাঁদের সিম কার্ড পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। সেজন্য তাতুকা ও তাঁর পার্টনার টেলিকম সংস্থার অফিসে যান এবং তাঁদের মোবাইল ফোনের জন্য দুটি নতুন সিম কার্ড নিয়ে ফেলেন। তবে যেহেতু সিম দুটি অ্যাক্টিভেট হতে বেশ খানিকটা সময় লাগে, তাই তাঁরা অবিলম্বে নতুন সিম কার্ডটি ব্যবহার করা শুরু করতে পারেননি।
তবে সিম কার্ডের দিকে খুব বেশি মনোযোগ না দিয়ে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যবসায়িক অংশীদার একটি ট্রানজ্যাকশনের জন্য তাঁদের ফার্মের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লগ ইন করেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদের কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে না পারায় তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলিতে লগ ইন করার চেষ্টা করেন, কিন্তু এক্ষেত্রেও তাঁরা ব্যর্থ হন। ক্রমাগত এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় তাঁদের মনে বেশ ভালোরকম খটকা লাগে, ফলে আর দেরি না করে দুজনেই অবিলম্বে তাঁদের ব্যাংকে ফোন করে করেন এবং তাঁদের ব্যাংক ব্যালেন্স সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানতে চান। এরপরই ব্যাংকের তরফ থেকে তাঁদেরকে এই দুর্ভাগ্যজনক খবরটি শোনানো হয়।
এই হতাশাজনক ঘটনার তদন্তে থাকা এসএইচও সতীশ চাঁদ, টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে জানিয়েছেন যে, পুলিশের তরফে জোরকদমে এই ঘটনাটির তদন্ত চলছে, তবে সঠিক কারণটি এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। যেহেতু ফোন দুটির হঠাৎ করেই কানেক্টিভিটি চলে যায়, তাই দুটি ফোনে কোনো টেকনিক্যাল গলদ ছিল কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এছাড়া পুলিশ একথাও জানিয়েছে যে, একইসাথে দুটি মোবাইল ফোন হ্যাক করা যদিও সহজ কাজ নয়, তবে হ্যাকারদের পক্ষে অসম্ভব তো কিছুই নয়! তাই এই সম্ভাবনাটিকেও তাঁরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।