জলের উপস্থিতি কম, শুক্র গ্রহে প্রাণ খুঁজে পাওয়ার আশা নেই বলে জানালো বিজ্ঞানীরা

Published on:

পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে আমাদের কৌতূহল আজকের নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এ নিয়ে বহু গবেষণা, আলোচনা, বিতর্ক চলে আসছে। বিশেষত আমাদের পড়শি শুক্র গ্রহে জলের উপস্থিতির বিষয়ে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এ বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে প্রাণের আবির্ভাব এবং বিকাশের জন্য যে পরিমাণ জলের উপস্থিতি প্রয়োজন, শুক্র গ্রহে তার অস্তিত্ব নেই। এক্ষেত্রে বৃহস্পতি গ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বরং অতিরিক্ত সম্ভাবনাপূর্ণ। যদিও সেখানেও এই মুহূর্তে প্রাণ খুঁজে পাওয়ার আশা অত্যন্ত কম।

গতবছর একটি গবেষণায় শুক্র গ্রহে ফসফিন (Phosphine) গ্যাসের উপস্থিতির ব্যাপারে প্রমাণ মেলে। আমাদের গ্রহেও এই ফসফিন গ্যাসের অস্তিত্ব রয়েছে যা তৈরীর ক্ষেত্রে একটি ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে শুক্র গ্রহে প্রাণের লক্ষণ আবিষ্কারের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা তখন থেকেই আরো বেশী পরিমাণে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেখানে প্রাণ বেড়ে ওঠার অনুকূল কোন পরিবেশের কথা নিশ্চিতভাবে গবেষণায় উঠে আসেনি। তাই পড়শি গ্রহে জীবনের স্পন্দন খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে!

২০১৭ সালের কথা বলি। প্রখ্যাত মাইক্রোবায়োলজিস্ট জন হ্যালস্ওয়ার্থ একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, এক বিশেষ ধরনের ছত্রাক ৫৮.৫ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় টিকে থাকতে পারে। পৃথিবীর এই সহিষ্ণু ছত্রাকের পক্ষেও শুক্র গ্রহের পরিবেশ সহ্য করা সম্ভব নয়। কারণ, সেখানকার আবহাওয়ায় আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ মাত্র ০.৪ শতাংশ! এই ফলাফল পৃথিবীর তুলনায় শতাধিক ভাগ কম। সুতরাং হঠাৎ করে শুক্র গ্রহে প্রাণের লক্ষণ খুঁজে পাওয়ার কথা ভাবলে তা অসঙ্গত হবে।

তবে বৃহস্পতি গ্রহের পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিমাণে ইতিবাচক। সেখানে মেঘের স্তরে যে পরিমাণ জলের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে তা জীবনের বিকাশলাভের পক্ষে অনেকটাই সহায়ক। তাই আগামীদিনে বৃহস্পতি গ্রহের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা আরো বেশি মাত্রায় উৎসাহিত হয়ে উঠলে তা নিয়ে বিস্মিত হবার কোন কারণ নেই।

অবশ্য শুক্র গ্রহে জীবনের খোঁজ এই মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না। নাসার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ক্রিস ম্যক্‌কে জানিয়েছেন ২০৩০ সালের মধ্যে তারা আরো বেশ কয়েকবার শুক্র গ্রহে অভিযানের পরিকল্পনা করছেন। এই সমস্ত অভিযানগুলির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পড়শি গ্রহে প্রাণ আবিষ্কারের চেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা। বরং তা আরো বিভিন্ন দিক থেকে গ্রহের পরিবেশ ও আবহাওয়ার ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে। একইসাথে তারা গ্রহটির লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ব্যাপারেও মনোনিবেশ করবেন বলে ম্যাক্‌কের বক্তব্য। অর্থাৎ শুধু বর্তমানেই নয়, বিগত কোনো অতীতে শুক্র গ্রহে সত্যিই প্রাণের অস্তিত্ব ছিলো কিনা সেটাও তাদের গবেষণার আওতায় পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥