ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের (Facebook Marketplace) সাথে পরিচিত নন এমন নেটিজেন হয়তো অত্যন্ত বিরল। মার্কেটপ্লেস (Marketplace) ফেসবুকের একটি ডেডিকেটেড প্ল্যাটফর্ম, যা ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আসে। এরপর কোটি কোটি মানুষ পণ্য কেনাবেচার প্রয়োজনে প্ল্যাটফর্মটিকে ব্যবহার করেছেন। জামাকাপড়, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক দ্রব্য, বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী বিভিন্ন সরঞ্জাম – সব কিছুর বিজ্ঞাপনে ফেসবুক মার্কেটপ্লেস সদা জমজমাট। কিন্তু সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ফেসবুকের এই প্ল্যাটফর্ম বর্তমানে দাগী অপরাধীদের বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ফলে একে কেন্দ্র করে বর্তমানে প্রতারণা ছাড়াও অন্যান্য গুরুতর অপরাধের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই প্ল্যাটফর্মটির ন্যূনতম নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি প্রোপাবলিকা (ProPublica) নামক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ওয়েবসাইট ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে বাড়তে থাকা অপরাধের বিষয়টি সামনে এনেছে। এদিক থেকে তারা যে পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে তা আক্ষরিক অর্থেই ভয়াবহ। ওয়েবসাইটের মতে বর্তমানে মার্কেটপ্লেস অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করার জন্য দাগী অপরাধীরা ফেসবুকের এই মঞ্চ ব্যবহার করছে। যদিও জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন বলে তাদের বক্তব্য। ছোটখাটো প্রতারণা থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সাফ করে দেওয়ার একাধিক অভিযোগ সামনে এলেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মার্কেটপ্লেসের সুরক্ষা বাড়ানোর কোনো বন্দোবস্ত করেনি, এর ফলে ভুগতে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের।
ProPublica ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস সংক্রান্ত অভিযোগ সমাধানের জন্য এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, ভারত ও সিঙ্গাপুরে মোট ৪০০ জন কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। কর্মীদের মধ্যে সকলকে এককভাবে দিনে প্রায় ৬০০টি অভিযোগ মেটাতে হয়। এক্ষেত্রে কারো পক্ষেই এক মিনিটের বেশী কোনো অভিযোগ শোনা সম্ভব হয় না, যা থেকে মার্কেটপ্লেসের নিরাপত্তার করুণ দিকটি বোঝা সম্ভব। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফেসবুকের অধীনে কর্মরত চুক্তিবদ্ধ এই কর্মীদলের পক্ষে কোনো অভিযোগের সুরাহা করা সম্ভব হয়না। এমনকি মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতেও তারা অক্ষম।
কর্মী ছাড়াও মার্কেটপ্লেসের প্রতারণাকে ঠেকাতে ফেসবুকের নিজস্ব সফটওয়্যার রয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই সফটওয়্যারও চূড়ান্ত বিফল। প্রতারকদের চিহ্নিত করা তো দূরের কথা, উল্টে এই প্রযুক্তি কিছু বৈধ ব্যবসায় বাধা তৈরী করে! ফলে আর্থিক ক্ষতি বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে প্রতারণাকারীরা প্রায় নিশ্চিন্তেই সাধারণ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ও ব্যাঙ্কিং তথ্য হাসিল করে তাকে সর্বস্বান্ত করে।
এ তো গেলো চুরি, প্রতারণার মতো অপরাধের প্রসঙ্গ। এসবের বাইরে ফেসবুকের মার্কেটপ্লেসকে কেন্দ্র করে হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটনের তথ্যও সামনে এসেছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, এখান থেকে প্রাপ্ত যোগাযোগের কাছে পণ্য কিনতে গিয়ে পেনসিলভেনিয়ার ৫৪ বছর বয়সী নাগরিক ডেনিস উইলিয়ামস ২৬ বছরের এক জশুয়া গর্গনের হাতে খুন হয়েছেন। ১৬০ ডলারের বিনিময়ে ব্যবহৃত একটি রেফ্রিজারেটর কিনতে গিয়ে উইলিয়ামস খুনীর কবলে পড়েন। মূলত নেশার দ্রব্য কেনার জন্যই গর্গন তাকে খুন করে বলে জানা গিয়েছে।
প্রোপাবলিকা’র রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার ফলে স্বাভাবিকভাবেই Facebook কর্তৃপক্ষ বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এক্ষেত্রে বিকিকিনির অন্যান্য পরিসরে যেমন প্রতারণার সম্ভাবনা থাকে, Facebook Marketplace যে কোনভাবেই তাদের উর্ধ্বে নয়, সেকথা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতি যে সমস্তরকমের প্রতারণার বিরুদ্ধে কার্যকর, সেটা জানাতেও তারা ভোলেননি।