Investment App : চীন থেকে ভারতে এসে ১৫০ কোটি টাকা প্রতারণা, জাল ছড়িয়েছিল পশ্চিমবঙ্গেও

Avatar

Published on:

আবারও রাজধানী দিল্লিতে এক বড়োসড়ো জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে এল। সম্প্রতি দিল্লি পুলিশ সাইবার সেল, Power Bank নামে একটি ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপের সাহায্যে ৫ লক্ষেরও বেশি লোককে প্রতারণার অভিযোগে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত দুই মাসে অভিযুক্তরা ১৫০ কোটি টাকা প্রতারণা করতে সক্ষম হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অ্যাপটি Google Play Store-এ উপলব্ধ এবং ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে লাভজনক এবং দ্রুত রিটার্ন অফার করার দাবি করে থাকে।

এই বিষয়ে ডিসিপি (স্পেশাল সেল-সাইবার) Anyesh Roy জানিয়েছেন, অ্যাপটির মালিক ও নির্মাতারা চীনের বাসিন্দা এবং দুই মাস আগে তারা ভারতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং শেল কোম্পানিতে সহায়তা করার জন্য বাকি অভিযুক্তদের কাছে যায়। এরপর Power Bank এবং EZ Plan নামক দুটি অ্যাপের মাধ্যমে তারা বাজার থেকে টাকা তুলতে শুরু করে। এরমধ্যে Power Bank অ্যাপটি কয়েক হাজার বার Google Play Store থেকে ডাউনলোড করা হয়েছে, এবং এই অ্যাপে বিনিয়োগ করে বেশ কিছু অভিযোগকারী লক্ষ লক্ষ টাকা হারিয়েছেন বলে দাবি ডিসিপির।

মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে প্রতারকরা তাদের অ্যাপে, ব্যাঙ্গালোর ভিত্তিক স্টার্টআপ হিসেবে পরিচয় দিত, তবে পুলিশ পরে জানতে পারে যে এর সার্ভারটি চীনে অবস্থিত। অ্যাপটি প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর ৫-১০% তাৎক্ষণিক রিটার্ন প্রদান করতো, যা অ্যাপটিতে বিনিয়োগ করা বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারীকে “আকৃষ্ট” করে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, পরে অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিত, এবং তাদের খুব সহজেই প্রতারণার জালে জড়িয়ে ফেলতো।

তবে এই বিশাল বড় র‍্যাকেটের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হল কীভাবে? Cyber Cell-এর তদন্তকারী দল অ্যাপের মালিককে খুঁজে বের করার জন্য অ্যাপটিতে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিল। এই প্রসঙ্গে ডিসিপি রায় বলেন, “আমাদের এক অফিসার একজন গ্রাহক হিসেবে পোজ দিয়েছিলেন এবং অ্যাপটিতে একটি টোকেন অ্যামাউন্ট বিনিয়োগ করেছিলেন। তারপরে আমরা এর মূল উৎসের সন্ধান পেয়েছি। দেখা গেছে যে, ২৫ টি শেল সংস্থা (shell company) এবং বেশ কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর (money transfer) করা হচ্ছে। আমাদের টিম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত (linked) মোবাইল নম্বর বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে একজন অভিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।”

তথ্য নাগালে আসামাত্রই তৎক্ষণাৎ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শেখ রবিন নামে একজনকে খুঁজে বের করার জন্য বাংলার উলুবেরিয়ায় টিম পাঠানো হয়েছিল। এদিকে, দিল্লির টিমগুলিকে এনসিআর-এ পাঠানো হয় অন্য অভিযুক্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার জন্য। ২ জুন রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় একই সময়ে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চল থেকে আরও নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আসামিদের মধ্যে দুই জন, অভীক কেডিয়া এবং রনক বনসাল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং তাদের “চীনা প্রতারকদের” জন্য ১১০ টিরও বেশি শেল কোম্পানি তৈরি করতে দেখা গেছে। তারা অর্থ স্থানান্তরের জন্য এই সংস্থাগুলি তৈরি করে এবং পরে প্রতিটি সংস্থা চীনাদের কাছে ২-৩ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে।

এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় রবিন পুলিশকে জানায় যে, চীনারা Telegram-এ তার সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রোভাইড করতে বলে। পরে তিনি প্রতারকদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন এবং অ্যাপটিতে সমস্ত তহবিল স্থানান্তর (fund transfers) তত্ত্বাবধান করছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় তিনি প্রায় ২৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা (operate) করছিলেন এবং সেই সময় তার কাছ থেকে ৩০ টি অ্যাক্টিভ মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত পুলিশ জানিয়েছে, এই বিশাল কেলেঙ্কারির পিছনে প্রধান চীনা প্রতারকরা WhatsApp এবং Telegram-এর মতো বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে যথেচ্ছভাবে লোকেদের সাথে যোগাযোগ করত এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের ভুয়ো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ, শেল কোম্পানি তৈরি, অ্যাপগুলি ছড়িয়ে দেওয়া এবং প্রচার করার জন্য অংশীদার হিসেবে নিয়োগ করত এবং অর্থ স্থানান্তর করত। তবে সবশেষে স্বস্তির খবর এটাই যে, ডিসিপি রায় জানিয়েছেন তারা এই অ্যাপের মালিকদের নাম জানতে পেরেছেন এবং তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥