4 সেকেন্ডের কমে 0-100 কিমি গতি, ইলেকট্রিক বাইকের দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলল Harley Davidson-এর নতুন মডেল

Avatar

Published on:

হার্লে ডেভিডসন (Harley Davidson) নাম শোনামাত্রই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বড় ইঞ্জিন-সহ আকারে বড় দামী মোটরবাইকের ছবি। মূলত হলিউড ছবির দৌলতে দেশের আমজনতার কাছে একটি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছিল হার্লে। গুরুগম্ভীর আওয়াজ তুলে চোখের নিমেষে ছুটে চলা সংস্থাটির দু’চাকা গাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলেও, ২০১৯-এ হার্লে ডেভিডসনের একটি মডেল কোনও শব্দ বার না করেই আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল টু-হুইলারের দুনিয়ায়‌। সে বছর প্রথম প্রথম ইলেকট্রিক মোটরবাইক বাজারে এনেছিল তারা। নামকরণ হয়েছিল LiveWire।

তবে ব্যাটারিচালিত প্রিমিয়াম মোটরসাইকেলের বাজার ধরার লক্ষ্যে গত বছরের মার্চে সেই প্রথম ই-বাইকের নামে একটি সহযোগী সংস্থার ঘোষণা করে হার্লে। তার দু’মাস পর নতুন ব্র্যান্ডের অধীনে লাইভওয়্যার ওয়ান (LiveWire One) বলে একটি ই-বাইক লঞ্চ করা হয়। প্রায় দশ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর এবার লাইভওয়্যার তাদের দ্বিতীয় বিদ্যুৎচালিত বাইক লঞ্চের ঘোষণা করল‌। নয়া মডেলটির নাম রাখা হয়েছে LiveWire S2 Del Mar LE (Launch Edition)‌।

লাইভওয়্যারের নতুন ‘Arrow” কাঠামোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে সেটি। এই প্ল্যাটফর্মের প্রথম ইলেকট্রিক বাইক হওয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত সীমিত পরিমাণে মিলবে LiveWire S2 Del Mar। প্রোটোটাইপ মডেলের মাত্র ১০০ ইউনিট বাজারে ছাড়া হয়েছে। যদিও প্রি-বুকিং শুরু হওয়া আঠেরো মিনিটের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তবে হার্লে ডেভিডসনের অনুরাগীরা এখন ওয়েটলিস্টে নাম লেখাতে পারবেন‌। LiveWire S2 Del Mar LE-এর বুকিং পুনরায় চালু বা এর প্রোডাকশন ভার্সনের রিজার্ভেশন শুরু হলে আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হবে তাদেরকে।

LiveWire S2 Del Mar-এর সমস্ত উপাদান যেমন – ব্যাটারি, মোটর, চার্জিং, ও কন্ট্রোল সিস্টেম সংস্থার ক্যালিফোর্নিয়ার ল্যাবে তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে মোটর ও ব্যাটারির স্পেসিফিকেশনগুলি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তবে দাবি করা হয়েছে, চার্জে পরিপুষ্ট অবস্থায় ১৬০ কিলোমিটার (সিটি রেঞ্জ) চলতে পারবে বাইকটি। চারটি স্ট্যান্ডার্ড রাইডিং মোডের সাথে কাস্টম মোড চয়নের ব্যবস্থা থাকছে এতে। আবার ইলেকট্রিক বাইকটিতে ওটিএর মাধ্যমে সফটওয়্যার আপডেট পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে।

Harley Davidson launches LiveWire S2 Del Mar Electric Motorcycle

লাইভওয়্যার এস২ ডেল মার ই-বাইকে চালিকাশক্তি যোগানোর জন্য ব্যাটারি এবং মোটর এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ৮০ বিএইচপির কাছাকাছি ক্ষমতা তৈরি হয়। অর্থাৎ এর শক্তি পেট্রল চালিত মিডলওয়েট শ্রেণীর মোটরসাইকেলের মতো। সর্বোচ্চ গতি অপ্রকাশিত থাকলেও বাইকটি শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটারে ৩.৫ সেকেন্ড বা তার কম সময়ে পৌঁছতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।

হার্লে ডেভিডসনের Arrow আর্কিটেকচারের প্রথম মডেল এটি। মডিউলার কাঠামো ব্যাটারি প্যাক, ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম, এবং ইলেকট্রিক মোটরকে একটি সিঙ্গেল কম্পোমেন্টে একত্রিত করে। এই ফ্রেম ব্যবহার করে আগামীতে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন রেঞ্জের ইলেকট্রিক বাইক বাজারে আনা হবে বলে নিশ্চিত করেছে হার্লে ডেভিডসন।

লাইভওয়্যার এস২ ডেল মার-এর ডিজাইন ফ্ল্যাট ট্রাকার বাইক থেকে অনুপ্রাণিত। বডি প্যানেলগুলি মিনিম্যালিস্টিক শৈলীর। প্রচলিত বাইকে ইঞ্জিনের অংশটি উন্মুক্ত থাকলেও ই-বাইকে সেখানে ব্যাটারি থাকার কারণে জায়গাটি সাধারণ কেসিং দিয়ে পুরোপুরি ঢাকা থাকে। তবে লাইভওয়্যার এস২ ডেল মার-এর ক্ষেত্রে ব্যাটারি কেসিংয়ের নকশাটি খুব ইউনিক।

এটি বুকের পাঁজরের মতো দেখতে বলা চলে। যা খানিকটা অ্যাপোক্যালিপস-পরবর্তী মুহূর্তের অনুভূতি দেবে। স্টাইলিংয়ের নিরিখে ইলেকট্রিক বাইকটিকে রেট্রো-ফিউচারিস্টিক শ্রেণীতে ফেলা যায়। এটি জ্যাসপার গ্রে ও কমেট ইন্ডিগো কালার অপশনে এসেছে। সংস্থার দাবি, রঙ লাগাতে কোনও মেশিনের সাহায্য নেওয়া হয়নি। প্রায় পাঁচ দিন সময় লেগেছে হাত দিয়ে রঙের প্রলেপ দিতে।

প্রিমিয়াম বাইকের মতো আধুনিক হার্ডওয়্যারে সজ্জিত লাইভওয়্যার এস২ ডেল মার। স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সামনে ইনভার্টেড ফর্ক এবং পিছনে প্রি-লোড অ্যাডজাস্টেবল মনোশক সাসপেনশন রয়েছে৷ মনোশক সাসপেনশন দেওয়া। দু’দিকের ১৯ ইঞ্চি চাকা বিশেষভাবে নির্মিত ডানলপ ডিটি১ টায়ারে মোড়ানো‌‌। হার্লের দাবি,  অন-রোড হোক বা অফ-রোড, সবরকম রাস্তায় ভাল পারফরম্যান্স দেবে এটি৷ তবে এগুলি শুধু লঞ্চ এডিশনের জন্য এক্সক্লুসিভ।

এছাড়া বাইকটির দু’দিকে হাই-পারফর্মিং ও অত্যন্ত ভরসাযোগ্য ব্রেম্বো ক্যালিপার্স-সহ সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। সিটিও পজিশন সোজা। মেরুদন্ডের উপর চাপ পড়বে না। ছুটবে ১৯ ইঞ্চি চাকার উপর ভর করে৷ যা কাস্ট অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি।

LiveWire S2 Del Mar-এর স্পেশ্যাল লঞ্চ এডিশনের দাম রাখা হয়েছে ১৭,৬৯৯ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। আপাতত এটাই হার্লে ডেভিডসন তথা লাইভওয়্যারের সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুৎচালিত মোটরসাইকেল। তবে এর থেকেও কম দামে ই-বাইকটির স্ট্যান্ডার্ড মডেল বাজারে আনবে তারা‌ ১৫,০০০ ডলারের কাছাকাছি দাম ধার্য করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। টাকার অঙ্কে যা ১১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার সমান।

স্ট্যান্ডার্ড এডিশন ও লঞ্চ এডিশন, উভয়ের ডেলিভারি ২০২৩-এর মার্চ থেকে শুরু হবে। হার্লে তাদের এই ইলেকট্রিক বাইক সামনের বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে আনবে বলে আশা করা যায়। অনুমান, এ দেশে দাম ১৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি রাখা হবে‌। এটিই হবে কোনও প্রিমিয়াম সংস্থার হাতে তৈরি একমাত্র হাই-এন্ড ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল।

সঙ্গে থাকুন ➥