আপনার বাচ্চা বা আপনি স্মার্টফোনে আসক্ত? কীভাবে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে লাগাম টানবেন জানুন

Avatar

Published on:

করোনা ভাইরাসের দরুন লকডাউন জারি হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষই এখন ঘরবন্দি। সময় কাটানোর জন্য সেই কারণে আট থেকে আশি প্রত্যেকেই স্মার্টফোনে মশগুল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনলাইন ক্লাস বা অফিসের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরেও, অনেকেই তাদের অবসর সময় পরিবারের সঙ্গে না কাটিয়ে মোবাইলেই বুদ হয়ে রয়েছে। আর এই আসক্তির ফলস্বরূপ মানুষের মধ্যে একাকিত্ব এবং সামাজিক দূরত্ব আরো বেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, অধিকাংশ মানুষ সারাদিনে প্রায় ৮০-১৫০ বার স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। সেক্ষেত্রে, এই বদ অভ্যাসটি যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তবে এর ফলাফল যথেষ্ট ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই আজ আমরা স্মার্টফোনের ব্যবহার সীমিত করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জানাবো। এগুলিকে অনুসরণ করে আপনি নিজের, এমনকি আপনার বাচ্চার স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি হ্রাস করতে পারবেন।

স্মার্টফোনের ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করার কয়েকটি উপায়

১. স্মার্টফোন ব্যবহারের সময়কাল ট্র্যাক করুন

আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড উভয়ই ফোনেই ডিভাইস ইউসেজ ট্র্যাক করার বিকল্প দেওয়া হয়। এটির মাধ্যমে আপনি কতক্ষন ধরে স্মার্টফোন ব্যবহারৌ করেছেন তা জানা যায়। সাথে কোন অ্যাপগুলিকে সর্বাধিক ব্যবহার করছেন তারও একটি গ্রাফ পাওয়া যায়। এছাড়া, এই বিকল্পটির অধীনে আপনি ডাউন-টাইম শিডিউল ফিচার পেয়ে যাবেন। এটি এনাবল বা অন থাকাকালীন, শুধুমাত্র সেই অ্যাপগুলিকেই ব্যবহার করা যাবে, যেগুলিকে আপনি উইশলিস্টে রাখবেন। এগুলি ছাড়া আর কোনো অ্যাপ সেই সময়ে কাজ করবে না। ফলে, এই বিকল্পটির মাধ্যমে আপনি নিজের ও আপনার বাচ্চার, সোশ্যাল মিডিয়া এবং গেমিং সংক্রান্ত আসক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এই সেটিংসটি স্মার্টফোনের স্ক্রিন টাইম অপশনের মধ্যে পেয়ে যাবেন।

২. নিজেকে অধিক সময় দিন

সোশ্যাল মিডিয়াতে বন্ধু বা পরিজনদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে আমরা অনেক সময় নিজেদেরকেই সময় দিয়ে উঠতে পারি না। এমত পরিস্থিতিতে, আপনি আপনার স্মার্টফোনটিতে কয়েক ঘন্টার জন্য ‘Do Not Disturb’ মোড অন রাখতে পারেন। এই সময়ে কেউ যদি ফোন করে তবে, আপনাকে উপলব্ধ পাবে না। ফলে আপনিও নিশ্চিন্তে অন্যান্য কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই মোডটি অন থাকাকালীন যাতে কোনো জরুরি ভয়েস কল মিস না হয়ে যায় তার জন্য আপনি কন্টাক্ট অপশন থেকে প্রয়োজনীয় কয়েকটি নম্বর সিলেক্ট করে রাখতে পারবেন। এছাড়া, আপনি চাইলে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনার স্মার্টফোনটি স্যুইচ অফ -ও রাখতে পারেন। যাতে আপনি নিজের পরিবারের সাথে অধিক সময় কাটাতে পারেন।

৩. অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিতে নিজেকে নিযুক্ত করুন

আপনি যদি বই পড়তে, ছবি আঁকতে বা চেস, ক্যারামের মতো ইনডোর গেম খেলতে পছন্দ করেন, তাহলে অবসর সময়ে মোবাইল ব্যবহার না করে আপনি এই সকল কাজগুলি করতে পারেন। ফলে স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি কমবে এবং আপনার সৃজনশীলতা আরো বৃদ্ধি পাবে। অথবা, আপনি টিভিতে মুভি বা খেলা দেখার সময়ে আপনার হ্যান্ডসেটে ‘Do Not Disturb’ মোডটি অন করে দিতে পারেন। এর ফলে মোবাইলে আসা নোটিফিকেশন বা ম্যাসেজের প্রতি আপনার নজর যাবে না এবং আপনি মুভি বা খেলা দেখার প্রতি মনোনিবেশ করতে পারবেন।

৪. স্মার্টফোনটিকে গ্রেস্কেল করুন

গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ রঙিন বস্তুর প্রতি অধিক আকর্ষিত হয়। তাই জন্য এখনকার স্মার্টফোনগুলি হাই-রেজুলেশন স্ক্রিন কোয়ালিটি এবং প্রাণবন্ত রঙের সাথে আসায় সেগুলির প্রতি আমরা একটু বেশিই মোহগ্রস্থ। আর সাথে, নোটিফিকেশন আসার পরমুহূর্তেই সেটিকে চেক করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হওয়ার ফলে, আমার মাত্রাতিরিক্ত ভাবে ফোনের ব্যবহার করে থাকি। তাই ফোনটির ডিসপ্লেকে গ্রেস্কেল বা সাদা-কালো ক্যানভাসে রূপান্তরিত করলে, আমাদের মোবাইল ব্যবহার করার ইচ্ছা অনেকাংশে কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে, কিছু ফোনে শিডিউল ফিচারও পাওয়া যায়, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোনকে গ্রেস্কেলে রূপান্তর করে। ফোনের ব্যবহার কমানোর জন্য আপনি এই উপায়টির প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।

৫. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ এবং নোটিফিকেশন বন্ধ করুন

ফোনে থাকা গেমিং বা শপিং অ্যাপগুলি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বারংবার নোটিফিকেশন পাঠিয়ে থাকে। ফলে আমরাও নোটিফিকেশনের আওয়াজ শুনে তৎক্ষণাৎ সেটিকে চেক করি। আবার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলি, ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা ব্যক্তি বা আমাদের দ্বারা লাইক করা পেজের যাবতীয় আপডেট দিতে আমাদের দিনে কয়েকশো বার নোটিফিকেশন পাঠায়। যার ফলস্বরূপ, আমারও মোবাইলে অনেকটা সময় নষ্ট করি। তাই যে অ্যাপগুলি আপনি ব্যবহার করেন না সেগুলিকে বন্ধ অথবা আনইনস্টল করে দিন। আর সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কিত আপডেটগুলিকে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ থেকে চেক করতে পারেন। এতে মোবাইলের প্রতি আসক্তি কমবে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥