বৃহস্পতির চাঁদ গ্যানিমিডে জলীয় বাষ্পের প্রথম সন্ধান পেল হাবল টেলিস্কোপ

Avatar

Published on:

মহাশূন্যের গহীনে লুকিয়ে থাকা বহু রহস্যের খোঁজ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে করে আসছেন। এই সুবাদে বহুক্ষেত্রেই একাধিক যুগান্তকারী আবিষ্কারের খোঁজ মেলে যা গোটা বিশ্বকে চমকে দেয়। এবং আবিষ্কারের কথা বললে বিজ্ঞানীদের প্রথম লক্ষ্য হল পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও জীবনের অস্তিত্ব আছে কি না তার সন্ধান খুঁজে বের করা। আর জলই যেহেতু জীবন, তাই অন্যান্য গ্রহ বা উপগ্রহে জল তথা জীবনের অস্তিত্ব আছে কি না তা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বৃহত্তম ‘চাঁদ’, অর্থাৎ বৃহস্পতির চাঁদ গ্যানিমিডের বায়ুমণ্ডলে প্রথম জলীয় বাষ্পের অস্তিত্বের প্রমাণ পেলেন।

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, বৃহস্পতির উপগ্রহ গ্যানিমিড সৌরজগতের যে-কোনো গ্রহের উপগ্রহের মধ্যে সর্বাধিক বৃহত্তম। এটি সৌরজগতের নবম বৃহত্তম বস্তু। যেহেতু পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ, তাই সেই সুবাদে বৃহস্পতির উপগ্রহ হওয়ায় গ্যানিমিডকে বৃহস্পতির চাঁদ বা সৌরজগতের সর্ববৃহত্তম চাঁদ বলে অভিহিত করা হয়। এর ব্যাস ৫,২৬৮ কিলোমিটার, এবং আয়তনে বুধ গ্রহের চেয়ে ২৬% বড়ো। বিশালাকার এই আয়তনের জন্য বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, গ্যানিমিড পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগরের চেয়ে বেশি জল ধরে রাখতে পারে। তবে এখানে তরল আকারে জল খুঁজে পাওয়া কঠিন।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) জানিয়েছে, গ্যানিমিডের ভূপৃষ্ঠের সমস্ত জল হিমশীতল ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে রয়েছে এবং পুরু বরফের আস্তরণের ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) নীচে সমুদ্র আছে। তাই এখানে জীবনের সন্ধান খুঁজে পাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম জলের অস্তিত্ব খুঁজে বের করাই জরুরি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এই প্রসঙ্গে ESA জানিয়েছে যে, অন্যান্য গ্রহ বাসযোগ্য কি না তা জানার জন্য সেখানে তরল জল শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য গত দুই দশক ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হাবল টেলিস্কোপের (Hubble Telescope) আর্কাইভাল ডেটাসেট বিশ্লেষণ করেছেন।

সাম্প্রতিক এই রিসার্চটি ১৯৯৮ সালের ডেটাসেটগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যখন Hubble গ্যানিমিডের প্রথম অতিবেগুনি বা আল্ট্রাভায়োলেট (UV) ছবি তুলেছিল। বিজ্ঞানীরা পরে জানতে পেরেছিলেন যে, গ্যানিমিডের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সারাদিন ধরে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। দুপুরের দিকে, এটি যথেষ্ট উষ্ণ হয়ে ওঠায় বরফের পৃষ্ঠটি অল্প পরিমাণে জলের অণু নিঃসরণ করে। যেহেতু মহাসাগরগুলি গ্যানিমিডের পৃষ্ঠতলের মাইলের পর মাইল নীচে অবস্থিত, তাই মহাসাগর থেকে জলীয় বাষ্প উদ্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এই প্রসঙ্গে প্রধান গবেষক লরেঞ্জ রথ (Lorenz Roth) জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র O2 (আণবিক অক্সিজেন) দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন যে, যখন চার্জড কণা বরফের পৃষ্ঠকে ক্ষয় করে তখন এটি উৎপন্ন হয়। নতুন এই অবিশ্বাস্য ও চমকপ্রদ রিসার্চ সম্পর্কে NASA-ও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।

সম্প্রতি এই তাক লাগিয়ে দেওয়া আবিষ্কারে বিজ্ঞানীমহল সহ সকল পৃথিবীবাসী চরমভাবে বিস্মিত। এর ফলে ২০২২ সালে আসন্ন ESA-এর পরিকল্পিত জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার (Jupiter Icy Moons Explorer বা JUICE) মিশন সম্পর্কে জনগণের কৌতূহল ও প্রত্যাশা বহু পরিমাণে বেড়ে গেল। মিশনটি ২০২৯ সালে বৃহস্পতি গ্রহে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং আগামী তিন বছর বৃহস্পতি এবং গ্যানিমিড সহ এর তিনটি বৃহত্তম চাঁদ সম্পর্কে গবেষণা করবে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥