নতুন এই উপায়ে আর্থিক জালিয়াতির শিকার বহু মানুষ, অবশ্যই মেনে চলুন এই নিয়মগুলি

Avatar

Published on:

অনলাইন স্ক্যাম বা প্রতারণার চক্করে পড়ে সঞ্চিত অর্থ খুইয়ে বসা মানুষের সংখ্যা এখন বেড়েই চলেছে। তবে এক্ষেত্রে হাতগুটিয়ে না বসে থেকে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পদক্ষেপের অভাবে এই সমস্ত ঘটনা আগামী দিনেও আরো বৃদ্ধি পাবে; প্রতিষ্ঠিত সাইবারক্রাইম বিশেষজ্ঞরা এমনটাই দাবী করছেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা এমনই একটি জালিয়াতির কথা ফাঁস করব যা ইতিমধ্যেই বহু মানুষের ক্ষতির কারণ হয়েছে। মূলত OLX এবং Quikr ব্যবহারকারীরা এই অনলাইন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

সকলেই জানেন যে এখন ব্যবহৃত পুরোনো জিনিসপত্র কেনাবেচার প্রক্রিয়া অনেকটাই সরল। ওএলএক্সের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই পুরোনো দ্রব্য কিনতে বা বিক্রি করতে পারি। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিক্রেতা যদি নিজেই ক্ষতির সম্মুখীন হন তবে তা বোধহয় কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায়না! অথচ এই ঘটনা আকছার ঘটে চলেছে। ঠিক কীভাবে প্রতারণাকারীরা মানুষকে ঠকাচ্ছেন, আসুন তা জেনে নেওয়া যাক।

ওএলএক্সে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে গিয়ে অনেকেই এমন ক্রেতাদের মুখোমুখি হচ্ছেন যারা নিজেদের ভারতীয় সেনাবাহিনী বা প্যারামিলিটারির সদস্য হিসেবে দাবী করছে। শুধু এটুকু পরিচয়েই বিক্রেতার মনে ক্রেতা সম্বন্ধে ভরসার জায়গা তৈরী হচ্ছে এবং তার কথায় বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতা। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা এগোলে একটি নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে প্রোডাক্টটি কিনতে ক্রেতা সম্মত হচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি বিক্রয়কারীকে তার প্রবল অসুবিধার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। তারা দাবী করছেন, দেশের সুদূর বা অত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে পোস্টিংয়ের জন্য তাদের পক্ষে সশরীরে এসে দ্রব্যটি সংগ্রহ এবং অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তাই বিক্রয়কারী যেন তার থেকে পেটিএম বা গুগল পে’র মতো ইউপিআই মারফত অর্থ গ্রহণ করে। বিক্রেতা সম্মত হলে প্রতারণাকারী পেমেন্টের একটি ভুঁয়ো স্ক্রিনশট দেখিয়ে দাবী করেন যে তিনি জিনিসটির দাম চুকিয়ে দিয়েছেন। অথচ বিক্রেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একটি টাকাও এসে পৌঁছায় না।

বিক্রেতা কোনরকম অর্থ না পাওয়ার বিষয়টি জানালে প্রতারণাকারী তার মোক্ষম চালটি প্রদান করেন। তিনি বিক্রেতাকে একটি কিউআর কোড সেন্ড করে জানান যে সেটি স্ক্যানের পর ইউপিআই পিন এন্টার করলেই বিক্রেতা মূল্যটি পেয়ে যাবেন। এই নির্দেশ অনুসরণ করলে অর্থপ্রাপ্তির বদলে বিক্রয়কারীর মোটা টাকা হাতছাড়া হতে পারে। এখানেই শেষ নয়, সামান্য ভুলের দোহাই দিয়ে প্রতারণাকারী এরপর বিক্রেতাকে আরো দুটি কিউআর কোড পাঠিয়ে দিয়ে অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। এই ফাঁদে পা দিলে আরও দুইবার তাকে প্রতারণাকারীর কাছে ঠকতে হয়। এইভাবেই প্রোডাক্ট বিক্রি করতে গিয়ে বিক্রয়কারীর হাজার হাজার টাকা লোপাট হয়ে যায়।

সাইবার সেল বিশেষজ্ঞ বলজিৎ সিংয়ের মতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেই আমাদের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমেই ব্যাঙ্কে বিষয়টি জানানো প্রয়োজন। কিংবা জালিয়াতির শিকার হওয়া ব্যক্তি সরাসরি পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায় (cybercrime.gov.in) অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এছাড়াও বলজিৎ কয়েকটি সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন যা গ্রহণ করলে হয়তো আমরা এই ধরণের প্রতারণার কবল থেকে বেঁচে যেতে পারি। নীচে পদক্ষেপগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।

১। যে কোন লেনদেনের আগে বিক্রেতা/ক্রেতার যাবতীয় তথ্যগুলি ভালোভাবে যাচাই করুক।

২। কেনাবেচার ক্ষেত্রে বিক্রেতা/ক্রেতা অকারণে তাড়া দিলে তার প্রতারক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। এদের এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

৩। পেমেন্ট রিসিভ করার সময় কোন ধরণের লিঙ্কে ক্লিক বা কিউআর কোড স্ক্যান করা থেকে বিরত থাকুন।

৪। অগ্রিম পাওনা গ্রহণ বা প্রদান করবেন না। এটি আপনাকে ঠকানোর ফাঁদ হতে পারে।

৫। সহজে বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রতারণাকারী বহু ক্ষেত্রে জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভুঁয়ো পরিচয় পত্র প্রদর্শন করে। ভালোভাবে খোঁজ না নিয়ে এদের সঙ্গে কোন লেনদেনে জড়াবেন না।

সঙ্গে থাকুন ➥