এই ডিজিটাল ইন্টারনেট-নির্ভর যুগে গোপনীয়তা নিয়ে হইচই খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গোপনীয়তার কারণ যদি সম্ভ্রম হয়, তাহলে মাথা ব্যাথা যে কয়েকগুণ বেড়ে যায় – তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা! সেক্ষেত্রে প্রতিহিংসার জন্য ইন্টারনেট মাধ্যমে কারো আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা ভুলবশত কারো গোপন ছবি ফাঁস হয়েছে, এই ধরণের খবর আমরা মাঝে মধ্যেই শুনে থাকি। কিন্তু এরকমই একটি ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে এবার কয়েক মিলিয়ন ডলার খেসারত দিতে চলেছে জনপ্রিয় টেক কোম্পানি Apple। রিপোর্ট অনুযায়ী, সংস্থার আইফোন সার্ভিস সেন্টার থেকে একটি মেয়ের নগ্ন ছবি Facebook-এ ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে; তার জেরেই সংস্থাটি এইভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
তবে এই ঘটনা আজকের নয়। ২০১৬ সালে অরেগন (Oregon)-এর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার আইফোন, অ্যাপল (Apple)-এর সার্ভিস সেন্টারে মেরামতির জন্য পাঠায়। তখনই ইচ্ছাকৃতভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটানো হয়। অভিযোগ, ফোনটি যখন ঠিক করা হচ্ছিল তখন সার্ভিস সেন্টারের দুই প্রযুক্তিবিদ সেটির সাথে সংযুক্ত ফেসবুক (Facebook) অ্যাকাউন্টে, ইউজার অর্থাৎ শিক্ষার্থীর বিভিন্ন নগ্ন ছবি এবং একটি যৌন ভিডিও দেখতে পান। সুযোগের দুর্ব্যবহার করে তারা তখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওইসব আপত্তিকর ছবির মধ্যে থেকে ১০টি ছবি পোস্ট করেন। শুধু তাই নয়, ফেসবুকে ওই ছবিগুলি এমনভাবে পোস্ট করা হয়, যা দেখলে মনে হবে মেয়েটি নিজেই সেগুলি সবার সামনে এনেছে। তবে শোরগোল পড়ার পর, ভিক্টিম নিজের বন্ধুদের ব্যাপারটি জানালে সেই পোস্ট রিমুভ করে দেওয়া হয়। যদিও জল গড়ায় আইনি মামলা অবধি।
এদিকে মামলা হেরে প্রায় ৫ বছর পর Apple-কে ঠিক কত ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে তা জানা যায়নি। তবে, রিপোর্টে জরিমানা হিসেবে ‘মাল্টি মিলিয়ন’ ডলারের কথা বলা হয়েছে, যেখানে আইনজীবীরাই সেটলমেন্ট বা মীমাংসার জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছেন।
এই ধরণের মানসিক কষ্ট বা হ্যারাসমেন্টের ক্ষেত্রে সাধারণত টাকাই যে সঠিক ক্ষতিপূরণের পথ – এমনটা বলা যায়না। তবে মামলার ফলাফল যে অ্যাপলের ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলবে, সে কথা বেশ স্পষ্ট। এক্ষেত্রে সংস্থাটি চুপচাপ সমঝোতা করতে চেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তাছাড়াও টেক জায়ান্টটি যে সমস্ত ঘটনা গোপন রাখতে চেয়েছে, তার মধ্যে একটি হল সংশ্লিষ্ট দুই কর্মচারীকে তদন্তের পরে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমনকি এটি পেগাট্রন (Petragon) নামক সংস্থা এবং বীমাদাতাদেরও গোপনে নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করেছে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সংস্থার গোপনীয়তা বজায় রাখার যাবতীয় দাবি কতটা যৌক্তিক বা সংস্থার নিজের ব্যবসার ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ আছে – সে নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।