WhatsApp-এর মালিকানায় হাতবদল, আফসোস সংস্থার প্রাক্তন চিফ বিজনেস অফিসার নীরজ অরোরার

Avatar

Published on:

বিগত কয়েকদিন ধরে জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং সাইট Twitter-এর বিক্রির খবরে সরগরম টেক দুনিয়া। এরই মাঝে বছরখানেক আগে WhatsApp (হোয়াটসঅ্যাপ) বিক্রির ঘটনাকে স্মৃতিচারণ করে শোক প্রকাশ করলেন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপটির প্রাক্তন চিফ বিজনেস অফিসার নীরজ অরোরা (যিনি বর্তমানে Hallo অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা)৷ আপনাদের মনে করিয়ে দিই, ২০১৪ সালে Facebook (ফেসবুক, বর্তমানে Meta) ২২ বিলিয়ন ডলারে WhatsApp-কে কিনে নেয়। সেই সময় মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg)-কে অ্যাপটি কিনতে সাহায্য করেছিলেন নীরজ অরোরা (Neeraj Arora)। কিন্তু সম্প্রতি নীরজ জানিয়েছেন যে, বছরখানেক আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার জন্য তিনি এখন আফসোস করছেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ কেন একথা বললেন? আসুন একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

বর্তমান সময়ে বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ সর্বসাধারণের কাছে বহুল পরিচিত একটি নাম। কিন্তু এই অ্যাপটি চালু হওয়ার মাত্র পাঁচ বছর বাদেই বহু ডলারের চুক্তিতে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নেয়। এবং যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন নীরজ অরোরা তিন বছর ধরে হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অরোরার মতে, ফেসবুক ২০১২-২০১৩ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কেনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অ্যাপটি তখন তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ২০১৪ সালে আবারও হোয়াটসঅ্যাপকে নিজেদের অধীনস্হ করার চেষ্টা করে ফেসবুক। আর সেই সময়ে সংস্থার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রেইন অ্যাক্টন (Brain Acton)-কে একপ্রকার বাধ্য হয়েই এই অ্যাপটি বিক্রি করতে হয়েছিল।

উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপের চিফ বিজনেস অফিসার ছিলেন নীরজ অরোরা এবং ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ফেসবুকের সঙ্গে হওয়া হোয়াটসঅ্যাপের চুক্তিতে তিনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সোজা কথায় বললে, হোয়াটসঅ্যাপের বিক্রির পিছনে নীরজ অরোরার বেশ বড়োসড়ো ভূমিকা ছিল, আর সেজন্যই তিনি এখন আফসোস করছেন।

কিন্তু এই আফসোসের মূল কারণ কী? অরোরার মতে, ২০১৪ সালে চুক্তির সময় ফেসবুকের প্রস্তাব ছিল পার্টনারশিপের। পরে হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা মার্ক জুকারবার্গের হাতে চলে গেলেও সংস্থাটি অ্যাপটির নিয়মাবলী রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অরোরা জানিয়েছেন যে, হোয়াটসঅ্যাপ কেনার সময় ফেসবুককে তারা শর্ত দিয়েছিলেন যে, কোনো ব্যবহারকারীর ডেটা ব্যবহার করা যাবে না, প্ল্যাটফর্মে কোনো অ্যাড কখনও দেখানো হবে না, ক্রস-প্ল্যাটফর্ম ট্র্যাকিং করা যাবে না এবং সেইসাথে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের জন্য ফুল সাপোর্ট থাকবে। আর এই সমস্ত শর্তেই সম্মত হয়েছিল ফেসবুক। এর ফলে নীরজ মনে করেছিলেন যে, তারা যেভাবে তাদের প্ল্যাটফর্মটিকে আগামী দিনে দেখতে চাইছেন, ফেসবুক হয়তো সেভাবেই কাজ করবে; কিন্তু বাস্তবে তা একেবারেই ঘটেনি।

অরোরা আরও জানিয়েছেন যে, ২০১৪ সালে Facebook ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে WhatsApp অধিগ্রহণ করার পর ২০১৭-২০১৮ সাল থেকেই এটি রং বদলাতে শুরু করে। WhatsApp-এর বিপুল উন্নতি সাধনের কথা চিন্তা করেই বছরখানেক আগে এই অ্যাপটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরে Facebook যে ধীরে ধীরে ব্যবহারকারীদের ডেটা গ্রাস করে রীতিমতো ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দৈত্য’ (Frankenstein monster) হয়ে উঠবে, তা কেউ কখনও ভাবতে পারেনি। ফলে এখন তাঁর পাশাপাশি আরও অনেকেই এই বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে আফসোস করছেন বলে জানিয়েছেন নীরজ অরোরা। WhatsApp এখন বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠলেও ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে Facebook যে একেবারেই তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি, তা অরোরার অকপট স্বীকারোক্তিতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

সঙ্গে থাকুন ➥