আত্মনির্ভরতার পথে আরও একধাপ, ভারত সরকার আনছে হোয়াটসঅ্যাপের দেশীয় বিকল্প 'সন্দেশ'
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার হোয়াটসঅ্যাপের (WhatsApp) প্রতিদ্বন্দ্বী রূপে বাজারে আসতে চলেছে 'সন্দেশ' (Sandes) নামক ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন। সম্পূর্ণ স্বদেশী প্রযুক্তিতে তৈরী এই অ্যাপটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পের অঙ্গ। হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প সন্ধান এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা যাতে সব অর্থেই আত্মনির্ভর হতে পারি - সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এই অ্যাপ্লিকেশনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে যে অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি তৈরী এবং এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক তাদের পর্যালোচনা জারি রেখেছে।
আপাতত পরীক্ষাধীন পর্যায়ের থাকা এই ভারতীয় ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনের সম্পূর্ণ নাম গভর্নমেন্ট ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সিস্টেম (Government Instant Messaging System) বা সংক্ষেপে জিআইএমএস(GIMS)। তবে ভারতীয়রা অ্যাপটিকে 'সন্দেশ' নামেও ডাকতে পারেন যা ভবিষ্যতে জনপ্রিয় হবে বলেই আমাদের ধারণা। উল্লেখ্য, জিআইএমএস বা সন্দেশের সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট রয়েছে।
সন্দেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী অ্যাপটিতে লগ-ইন করার একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। ব্যবহারকারীরা পূর্বে দাখিল করা ই-মেইল আইডি বা মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে ওটিপি (OTP) জেনারেট করে এতে লগ-ইন করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবের (Whatsapp web) মতো ভারতীয় মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনটিরও ওয়েব ভার্সন রয়েছে।
আপাতত প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য সন্দেশ অ্যাপ্লিকেশনটিকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এর অথেন্টিকেশন প্রক্রিয়াটি যে শুধুমাত্র সরকারী আধিকারিকদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সেই বিষয়টিও অ্যাপ্লিকেশনে মেসেজের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ওয়েবসাইট অনুযায়ী ডিজিটাল ভারত প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে MeiTY-র নিয়ন্ত্রণাধীন এনআইসি (NIC) বা ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার অ্যাপ্লিকেশনটিকে ডেভেলপ করেছে বলে জানা গিয়েছে। অ্যাপটি আইওএস(iOS) এবং অ্যান্ড্রয়েড(Android) উভয় প্ল্যাটফর্মেই কাজ করবে বলেই নির্মাতারা জানিয়েছেন। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপের মতোই এতে ভয়েস কলিং সাপোর্ট থাকবে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার।
আসলে প্রচলিত সামাজিক মাধ্যমগুলির সমান্তরালে কেন্দ্রীয় সরকার অনেকদিন ধরেই একটি নির্ভরযোগ্য স্বদেশী সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে আমাদের সরকারি নথি এবং তথ্যগুলি ডিজিটাল মাধ্যমে অনেক বেশী সুরক্ষিত থাকবে। কারণ এক্ষেত্রে সরকারের দ্বারা প্রস্তুত হওয়ায় অ্যাপে সরকারী তথ্য চুরি যাওয়ার কোন ভয় থাকবেনা। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, অতীতে সংবাদপত্র, বিরোধী এমনি শাসকপক্ষের একাংশের স্মার্টফোন ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসুস (Pegasus) দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তাই দেশের নিরাপত্তাকে আরো আঁটোসাটো রাখার জন্য বাস্তবের পাশাপাশি ডিজিটাল জগতেও আমাদের সদাসর্বদা জাগরূক থাকতে হবে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের বক্তব্য।
জিআইএমএস বা সন্দেশ যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই অ্যাপ্লিকেশনটির আত্মপ্রকাশের মুহূর্তটি যে অত্যন্ত চমৎকার তা সকলেই স্বীকার করবেন। কেননা সম্প্রতি সামনে এসেছে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রাইভেসি শর্তাবলী যাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক থামার কোন লক্ষণ নেই। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই সরকারি কর্তাদের প্রয়োজনে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্বদেশী মেসেজিং অ্যাপটিকে লঞ্চ করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে যাতে সকলেই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে পরস্পরের 'সন্দেশ' আদানপ্রদান করতে পারেন সেজন্য একে আরো ব্যাপকভাবে রোল-আউট করা হবে বলে জানা গিয়েছে।