Squid Game ক্রিপ্টোকারেন্সি পুরোটাই স্ক্যাম, বিনিয়োগকারীদের ২৫ কোটি টাকা নিয়ে পালাল দুর্বৃত্তরা
স্কুইড গেমের ভ্যালু শূন্যে নেমে গেল! না না, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববাসীকে মাতোয়ারা করে রাখা ব্লকবাস্টার Netflix শো-টির কথা বলছি না, বরং বলছি এই সিরিজটির দ্বারা অনুপ্রাণিত এক জাল ক্রিপ্টোকারেন্সির কথা। প্রতারকরা এই শো-এর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে স্কুইড গেম ক্রিপ্টোকারেন্সি (Squid Game cryptocurrency) তৈরি করে জনগণকে প্রলুব্ধ করে। মানুষও এই শো-এর ব্যাপক ফ্যান হওয়ায় এই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা বিনিয়োগ করে বসে এবং ফলস্বরূপ জালিয়াতরা আনুমানিক ৩.৩৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫.৩ কোটি টাকা) আয় করতে সক্ষম হয়েছে। CoinMarketCap-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, ২,৮৬১ ডলারের সর্বোচ্চ মূল্যে পৌঁছানোর পর কারেন্সিটির মূল্য এখন শূন্যতে এসে ঠেকেছে। আর ফলে বিনিয়োগকারীদের যে মাথা চাপড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা বিনিয়োগ করে নিজের কষ্টার্জিত টাকা হারিয়েছেন, এরকম ঘটনা প্রায়শই খবরে শোনা যায়। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত এটি হল একদম লেটেস্ট একটি স্ক্যাম, এবং এখানে জনসাধারণকে প্রলুব্ধ করার জন্য সম্পূর্ণ অন্য একটি কারসাজির সাহায্য নিয়েছে হ্যাকাররা, যা মানুষকে আকর্ষিত করতে বাধ্য। সাধারণভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম যখন সর্বোচ্চ মূল্যে পৌঁছায়, তখন মানুষ সেটিকে নগদ অর্থে পরিবর্তন করে নেয়। কিন্তু স্কুইড গেম ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে দাম চড়চড় করে এমনভাবে বাড়ছিল যে অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় একসময় এর দাম প্রায় ৩১০,০০০ শতাংশেরও বেশি হয়ে যায়! যদিও এটি একটি স্ক্যাম হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের হাতে কোনো অর্থই ফেরত আসেনি, ফলে সকল বিনিয়োগকারী এক চূড়ান্ত ভরাডুবির সম্মুখীন হয়েছেন।
স্কুইড গেম ক্রিপ্টোকারেন্সি ২০ অক্টোবর থেকে ক্রয়ের জন্য উপলব্ধ করা হয়। বিনিয়োগকারীদের একটি অনলাইন গেমের জন্য পে-টু-প্লে টোকেন কিনতে বলা হয়, যা কোরিয়ান শো স্কুইড গেম-এর দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। নেটফ্লিক্স সিরিজটিতে যেভাবে টাকা জেতার জন্য বেশ কয়েকজন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে বাচ্চাদের গেমের ডু-অর-ডাই ভার্সন খেলতে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা ভাবেন তারাও এই স্কুইড গেম ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা বিনিয়োগ করলে ঠিক এভাবেই অত্যন্ত সহজে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ জিতে নিতে পারবেন। কিন্তু রুপোলী পর্দার এপার-ওপারে তো একটি ফারাক রয়েছে! মানুষ রুপোলি পর্দায় কোনো জনপ্রিয় শো দেখলে সেখানে যা ঘটছে, বাস্তবেও তাই ঘটবে বলে আশা করে। আর মানুষের এই অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই হ্যাকাররা নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
তবে এই স্কুইড গেম ক্রিপ্টোকারেন্সি যে একটি স্ক্যাম ছিল, তা কিন্তু একটু চোখকান খোলা রাখলেই বোঝা যেত। এর প্রথম কারণ হল গেমটির ওয়েবসাইট - SquidGame.cash। এটি তিন সপ্তাহ পুরোনো একটি ওয়েবসাইট, যা বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। এতে বেশ কিছু ব্যাকরণগত ভুল এবং বেশ কয়েকটি অদ্ভুত বানান লক্ষ্য করা গেছে, যা একটি স্ক্যাম ওয়েবসাইট চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট। তবে এই কেলেঙ্কারির কথা বিনিয়োগকারীদের তখনই বোঝা উচিত ছিল যখন তারা ক্রিপ্টোকারেন্সিটি বিক্রির ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হন। যখন জাল স্কুইড গেম ক্রিপ্টোকারেন্সির ভ্যালু চরম সীমায় পৌঁছায়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই সকল বিনিয়োগকারীরা নিজেদের কেনা টোকেনগুলি বিক্রি করার জন্য হামলে পড়েন। কিন্তু দেখা যাচ্ছিল যে, কোনোভাবেই সেগুলিকে বিক্রি করা যাচ্ছে না। সত্যিই যদি আসল ক্রিপ্টোকারেন্সি হয়ে থাকে, তাহলে তা বিক্রি করা যাবে না কেন?
তাই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা বিনিয়োগের সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করুন - CoinMarketCap-এর তরফ থেকে ইউজারদের সতর্ক করতে এই কথা জানানো হয়েছে। যতই কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি তার দিকে আপনাকে আকর্ষিত বা প্রলুব্ধ করুক, কিন্তু সেটির পিছনে বেপরোয়াভাবে টাকা বিনিয়োগ করা কখনোই উচিত নয়। উল্লেখ্য যে, এই প্রথম নয়, স্কুইড গেমের আগে জালিয়াতরা Mando নামের ক্রিপ্টোকারেন্সিকে কাজে লাগিয়ে জনসাধারণের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেছিল, যা Disney+ শো Mandalorian দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। তখন Disney-র তরফ থেকে দ্রুত সকল বিনিয়োগকারীদের এই বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তবে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকতে স্বয়ং নিজে সতর্ক থাকাই একান্ত জরুরি।