অশালীন পোশাকে ভিডিও কল করে ব্ল্যাকমেল, সতর্ক করল কলকাতা পুলিশ

Avatar

Published on:

বর্তমানকালে সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব যে ঠিক কতখানি, সে বিষয়ে আর নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। নতুন বন্ধু খোঁজা থেকে শুরু করে নিজের কোনো মেসেজ বা ভিডিও জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির জুড়ি মেলা ভার। বিশেষত সাম্প্রতিককালে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সুবাদে সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব যেন আরও বহুল পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। কারণ একাকীত্ব কাটাতে বহু মানুষই নতুন সঙ্গীর সন্ধানে সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রের মতোই সোশ্যাল মিডিয়ারও ভালো দিকগুলোর পাশাপাশি একাধিক খারাপ দিকও রয়েছে। এবং সম্প্রতি এই খারাপ দিকেরই সাক্ষী হয়েছেন কলকাতার একাধিক মানুষ। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে অভিনব কায়দায় ব্ল্যাকমেল (Blackmail) করাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাসে কলকাতা পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।

লালবাজার (Lal Bazar) সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই অভিনব কায়দার ব্ল্যাকমেলের শিকার হওয়া একাধিক মানুষের মধ্যে রয়েছেন টালিগঞ্জের এক জনৈক ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন যে, দিনকয়েক আগে তিনি ফেসবুক (Facebook) খোলার পর অচেনা নম্বর থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পান। তিনি প্রথমে খুব একটা আমল না দিলেও বারবার রিকোয়েস্ট আসতে থাকায় তিনি অবশেষে রিকোয়েস্ট প্রেরণকারীর পরিচয় জানতে চান। এরপর আচমকা ওই ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোনে একটি ভিডিও কল আসে, এবং অশালীন পোশাক পড়া এক মহিলার ছবি চ্যাট উইন্ডোতে ভেসে ওঠে।

তিনি প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেও প্রায় সাথেসাথেই কলটি কেটে দেন। কিন্তু এর পরেই শুরু হয় আসল খেলা, অর্থাৎ ব্ল্যাকমেলিং। ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন যে, তারপরই তাঁকে ফোন করে বলা হয় যে দিল্লির সফদরজং থানা থেকে ফোন করা হচ্ছে, এবং হুমকি দেওয়া হয় যে, ভিডিও কলের ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর অশালীন ছবি পুলিশের হাতে রয়েছে। আর সেইসাথে একটি মোটা অঙ্কের টাকাও চাওয়া হয় ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এবং বলা হয় যে, টাকা না দিলে ওই সমস্ত অশালীন ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়া হবে। এবং এই ধরনের ফোন বারংবার তাঁর কাছে আসতে থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

বরানগরের বাসিন্দা এক কলেজ ছাত্রও একইভাবে ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাঁর দাবি, তিনি ঘুরতে যাবেন বলে Google-এ ডেস্টিনেশন সার্চ করছিলেন। তারপর Facebook খুলতেই একইভাবে প্রথমে অচেনা নম্বর থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে, এবং তারপর আসে প্রায় নগ্ন এক মহিলার ভিডিও কল। এরপরই হুমকি দেওয়া হয় যে, মহিলাটির সঙ্গে ওই ছাত্রের অশালীন ছবি রয়েছে, এবং ২০ হাজার টাকা না দিলে সেই ছবি ফাঁস করে দেওয়া হবে।

অর্থাত্‍, খুব স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে দুটি ঘটনাতেই মোডাস অপারেন্ডি একই। এই ধরনের ঘটনা রুখতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। বুধবার কলকাতা পুলিশের কমিশনার সৌমেন মিত্র জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন এবং অপরাধীদের ধরতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লালবাজার সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এইভাবে ছবি মর্ফ করে ব্ল্যাকমেলের চক্র চালায় রাজস্থানের একাধিক গ্যাং। এদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও অনেকেই এখনও অধরা রয়ে গেছে। তাই এই ধরনের বিপদ থেকে বাঁচতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অচেনা কারোর সঙ্গে বন্ধুত্ব বা যোগাযোগ না করাই উচিত বলে পুলিশ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥