কেটিএম, ডুকাটিদের মতো এবার স্পোর্টস বাইক লঞ্চ করবে রয়্যাল এনফিল্ড, ফিচার শুনলে হাঁ হয়ে যাবেন! পাওয়ার সমীহ জাগাবে
Royal Enfield 650 Twins হিসাবে পরিচিত Interceptor 650 এবং Continental GT 650 ভারতে যেমন জনপ্রিয়, তেমনই আর্ন্তজাতিক বাজারে সুপারহিট৷। সাফল্যের সেই ফর্মুলা অনুসরণ করে 650 Twins প্লাটফর্মের উপরে ভিত্তি করে বর্তমানে বিভিন্ন হাই-পারফরম্যান্স মোটরসাইকেলের উন্নয়ন ও বিকাশ করছে রয়্যাল এনফিল্ড। সংস্থাটির ৬৫০ সিসি ইঞ্জিন ক্যাপাসিটির আপকামিং মডেলগুলির মধ্যে Shotgun 650 ও Super Meteor 650 নিয়ে ক্রেজ সবচেয়ে বেশি। আবার 650 Twins প্ল্যাটফর্মের সদ্ব্যবহার করে এমন একটি নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে কাজ করছে তারা, যা সকলের ঘুম কেড়ে নেবে।
এতে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে যা আজ পর্যন্ত রয়্যাল এনফিল্ডের কোনও দু'চাকা গাড়িতে দেখা যায়নি। সেগুলি বিস্তারিত আলোচনার আগে এটি কী নামে বাজারজাত হবে, তা শুনলে আশ্চর্য হবেন! বাইকটির নামকরণ হবে Royal Enfield Fury 650। রয়্যাল এনফিল্ডপ্রেমী বা মোটরসাইকেলের দুনিয়ার খুঁটিনাটি তথ্য যাঁরা নখদর্পণে রাখেন, তাঁরা অনেক আগেই Royal Enfield Fury নামটির সাথে পরিচিত। কারণ, রয়্যাল এনফিল্ড তাদের মোটরসাইকেলে ওই নাম ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করেছিল।
Royal Enfield Fury 650
নতুন রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরি ৬৫০ দুর্ধর্ষ ডিজাইনের ফুল-ফেয়ার্ড স্পোর্টস বাইক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ৬৫০ টুইনসের ইঞ্জিন এবং চ্যাসিসের সাথে আসবে। তবে পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো হবে। ইঞ্জিন এক থাকলেও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতা বাড়ানো হবে৷ পাওয়ার থাকবে ৫০ কিলোওয়াটের কাছাকাছি৷ অর্থাৎ এটিই হবে সংস্থার সবচেয়ে শক্তিশালী মডেল৷
আধুনিক প্রযুক্তির দিক থেকে রয়্যাল এনফিল্ড বেশ পিছিয়ে। সংস্থার সাবেকি ও ঔতিহ্যবাহী নীতি এর মূল কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাজারে বারো দশক অতিক্রম করা রয়্যাল এবার মর্ডান হয়ে ওঠার পথে। রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরি ৬৫০ তিনটি রাইডিং মোড (রোড, রেন, স্পোর্টস), কর্নারিং এবিএস, কুইকশিফ্টার, লঞ্চ কন্ট্রোল সিস্টেম, অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কন্ট্রোল এবং ব্লাইন্ড স্পট ডিটেকশন, ট্র্যাকশন কন্ট্রোল সিস্টেম, রাইড-বাই-ওয়্যারের মতো দুর্ধর্ষ ফিচারের সাথে আসবে।
মোটরসাইকেলটি টিউবলেস টায়ার-সহ ১৯ ইঞ্চি কাস্ট অ্যালয় হুইল পাবে। এছাড়াও, রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরি ৬৫০-এ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট কনসোল থাকবে৷ যা ব্লুটুথের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সঙ্গে কানেক্ট হবে বলে দাবি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটিই হয়ে উঠবে সংস্থার আধুনিকতম বাইক। তাছাড়া ফুল-ফেয়ারিং দেওয়ার বিষয়টিও বেশ চিত্তাকর্ষক বলেই মনে করা হচ্ছে।
Royal Enfield Fury
চলুন দেখে নেওয়া যাক রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরির ইতিহাস। ১৯০১-এর নভেম্বরে পথ চলা শুরু করেছিল রয়্যাল এনফিল্ড৷ তার ৫৮ বছর পর ৪৯৯ সিসি ইঞ্জিনের সঙ্গে ফিউরি বাজারে এনেছিল সংস্থাটি। প্রকৃতপক্ষে এর জন্ম হয়েছিল ৫০০ সিসির বুলেট থেকে। ১৯৫৯-১৯৬৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মিলত রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরি। মূল প্রতিপক্ষ ছিল বিএসএ গোল্ডস্টার৷ বিভিন্ন রেসিং প্রতিযোগিতায় বাইকটিকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছিল।
আবার অফ-রোডিংয়ে অভ্যস্ত বাইকারদের কাছেও রয়্যাল এনফিল্ড ভরসাযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। চার বছরের জীবনকালে বাইকটির ১৯১ ইউনিট তৈরি হয়েছিল। তারপর উৎপাদন চিরকালের জন্য বন্ধ হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতে সংস্থার জনপ্রিয়তা বাড়তেই ফিউরি নাম পুনরায় ব্যবহারে উদ্যোগী হয় রয়্যাল এনফিল্ড।
Royal Enfield Fury 175
রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরি ১৭৫ আশির দশকে শেষে ভারতের বাজারে পা রেখেছিল। তবে এটি অরিজিনাল মডেল নয়। দেউলিয়া ঘোষণা করা এক জার্মান সংস্থার কাছ থেকে একটি বাইক নিয়ে সেটি দেশের গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে রিব্র্যান্ডেড করে Fury 175 নামকরণ হয়েছিল। উল্লেখ্য, এটাই ভারতের প্রথম ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেকযুক্ত মোটরবাইক ছিল। ব্রেকটি কোন সংস্থার জানলে হাঁ হয়ে যাবেন। ব্রেম্বোর (Brembo)!
১৬৩ সিসি, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার-কুল্ড ইঞ্জিন ছিল রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরি ১৭৫ মডেলে। এটি ক্র্যাংক শাফট মিনিটে ৭,৪০০ বার ঘুরিয়ে ১৭ বিএইচপি ক্ষমতা উৎপন্ন করত। গিয়ারের সংখ্যা ছিল পাঁচ। ঘন্টা প্রতি সর্বোচ্চ ১২৬ কিমি গতি উঠত এই মোটরসাইকেলে।
2011 Royal Enfield Fury
২০১০ সালে ফের একবার নতুন অবতারে প্রত্যাবর্তন ঘটে রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরির। আদি মডেলটি শুধু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গেলেও তার ২০১১ সংস্করণ শুধু ব্রিটেনে লঞ্চ হয়েছিল। বুলেট ইলেক্ট্রা বেসড এই মোটরবাইকে ৪৯৯ সিসি ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছিল। ৪০ বছর পর এটাই ছিল সংস্থার প্রথম টুইন এগজস্ট পাইপযুক্ত মডেল।
প্রসঙ্গত, রয়্যাল এনফিল্ড এর আগেও তাদের বিভিন্ন আদি মোটরসাইকেলের নাম নতুন মডেলে ব্যবহার করেছে। মিটিওর, ইন্টারসেপ্টর, এবং কন্টিনেন্টাল জিটি তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ৷ আবার সম্প্রতি ভারতে কনস্টালেশন (Costellation) নামটির জন্য নথিভুক্তকরণ সেরে রেখেছে তারা। ১৯৫৮ সালে কনস্টালেশন ৭০০ নামের সাথে একটি মোটরসাইকেল উত্তর আমেরিকায় নিয়ে এসেছিল রয়্যাল এনফিল্ড। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছিল৷ আবার একে সে যুগের প্রথম সুপারবাইক আখ্যা দিয়েছিল ভক্তরা।
পুরনো জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সহজাত। আর মোটরসাইকেল নির্মাতা হিসাবে পুরনো এবং ঔতিহ্যবাহী ডিজাইন আঁকড়ে ধরেই একের পর এক সাফল্য ছুঁয়েছে রয়্যাল এনফিল্ড। কনস্টালেশন হোক কা ফিউরি, যখনই বাজারে আসুক, গ্রাহকরা আগের মতোই ভালবাসা দেবে কিনা, তা এখন সময় বলবে৷ তবে ১ এপ্রিল বোকা দিবসে এত বড় একটি লেখা সত্যি মনে করে ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ! বোকামির দিন আপনাদের ভাল কাটুক।
(বি:দ্র: পয়লা এপ্রিল উপলক্ষ্যে পাঠকদের সারপ্রাইজের পাশাপাশি বোকা বানানোর জন্য একটি ছোট্ট প্রয়াস এটি। আমরা ভুয়ো খবর প্রকাশ বা সমর্থন কোনওটাই করি না। প্রতিবেদনে রয়্যাল এনফিল্ড ফিউরির যে ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ সত্য। তবে এটি যে আধুনিক স্পোর্টস বাইকের অবতারে ফিরে আসছে, তা পুরোপুরি কাল্পনিক এবং বাস্তবের সাথে এর কোনও মিল নেই।)