WhatsApp ব্যবহারকারীরা সাবধান! ৪৮.৭ কোটি ইউজারের নম্বর গেল হ্যাকারদের হাতে
কখনো কী ভেবে দেখেছেন আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও বিক্রির সামগ্রী হতে পারে? হয়তো কল্পনাতেও আপনি এরকম কিছু হতে পারে তা ভাবেননি, কিন্তু বাস্তবে এমনটাই হচ্ছে। আসলে সাইবার জগতের একটা মাত্র দিকের সাথে আমরা পরিচিত। ফলে আঁধারে থাকে আরেকটা দিক, যার সম্পর্কে আমাদের ধারণাই নেই সেখানেই সর্বাধিক সক্রিয় অপরাধীরা। ভাবছেন হঠাৎ এই প্রসঙ্গ কেন তুললাম? আসলে গত ১৬ই নভেম্বর একটি জনপ্রিয় হ্যাকিং কমিউনিটি ফোরামে একটি চোখে পরার মতো অ্যাডভার্টাইজমেন্ট বা বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়। যেখানে বিজ্ঞাপনদাতা ব্যক্তি দাবি করেছেন যে তার কাছে ৪৮৭ মিলিয়ন হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের একটি ডেটাবেস রয়েছে। আর তাই এই নম্বরগুলিকে বিক্রি করার জন্য গ্রাহকদের সন্ধান করছেন এই সাইবার অপরাধী বা অপরাধী-বৃন্দ। সর্বোপরি, যে ডেটাবেসকে নিয়ে এত চর্চা তাতে উপস্থিত কোনো নম্বর কিন্তু ভুয়ো নয় বরং প্রত্যেকটি সক্রিয়। ফলে লিক হওয়া এই ডেটাবেসকে যদি ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকানো না যায়, তাহলে ফিশিং প্রোফাইল খোলা থেকে শুরু করে সাইবার প্রতারণার ঘটনা হুহু করে বাড়তেই থাকবে বিশ্বজুড়ে এবং মুশকিলে পড়বে প্রকৃত মোবাইল নম্বরের মালিকেরা।
৮৪টি দেশের WhatsApp ইউজারদের ডেটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে
সাইবার নিউজ দ্বারা প্রকাশিত লেটেস্ট রিপোর্টে উল্লেখ আছে যে, লিক হওয়া ডেটাবেসে মোট ৮৪টি দেশের হোয়াটসঅ্যাপ ইউজারের মোবাইল নাম্বার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর যারা নম্বর বিক্রি করার বিজ্ঞাপনটি পোস্ট করেছেন, তারা দাবি করেছেন যে এই ডেটাবেসে প্রায় ৩২ মিলিয়ন আমেরিকান ইউজারের নম্বর রয়েছে। আবার, মিশরীয় ইউজারের একটি বড় অংশ অর্থাৎ প্রায় ৪৫ মিলিয়ন, ৩৫ মিলিয়ন ইতালির ইউজার, সৌদি আরবের ২৯ মিলিয়ন ইউজার, ফ্রান্সের ২০ মিলিয়ন এবং তুরস্কের ২০ মিলিয়ন ইউজারের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল নম্বর ডেটাবেসে অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, ১০ মিলিয়ন রাশিয়া এবং ১১ মিলিয়ন যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ইউজারের ফোন নম্বরও সামিল আছে।
দেখতে গেলে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মাসিক অ্যাক্টিভ হোয়াটসঅ্যাপ ইউজারের সংখ্যা ২ বিলিয়ন অতিক্রম করেছে। ফলে যত মানুষ ভীড় বাড়াচ্ছেন উক্ত মেসেজিং অ্যাপটির অন্দরে, ততই হ্যাকারদের আধিপত্য বাড়ছে। এমনকি এইসকল হ্যাকারদের দৌরাত্ম্য এখন এতটাই বেড়ে গেছে যে নিজেদের চুরির প্রমাণও নিজেরাই পাঠাচ্ছে। আরো সোজা ভাষায় বললে, সাইবার নিউজ রিসার্চারদের সাথে লিক হওয়া ডেটাবেসের একটি নমুনাও শেয়ার করেছে এই অপকর্মের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা। এই নমুনায়, ১০৯৭ (1097) কান্ট্রি কোডের সাথে কয়েকটি যুক্তরাজ্যের এবং ৮১৭ (817) কান্ট্রি কোড সহ কিছু আমেরিকা নিবাসীর মোবাইল নম্বর খুঁজে পাওয়া গেছে।
হ্যাকার দ্বারা সংগৃহিত প্রত্যেকটি নম্বর অ্যাক্টিভ WhatsApp ইউজারদের
রিপোর্ট অনুসারে, বিজ্ঞাপনদাতা দাবি করেছেন যে ডেটাবেসে থাকা সমস্ত নম্বর অ্যাক্টিভ হোয়াটসঅ্যাপ ইউজারদের। তবে হ্যাকারদের কথা কতটা সত্যি তা যাচাই করতে, সাইবার নিউজের রিসার্চাররা স্বয়ং এই নম্বরগুলি ক্রস চেক করেছিলেন। পরবর্তীতে, ডেটাবেসের প্রত্যেকটি নম্বর হোয়াটসঅ্যাপে উপস্থিত রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত করেন। তবে কোন সূত্রে বা কীভাবে এইসকল নম্বর পেয়েছেন তা অবশ্য প্রকাশ করেননি হ্যাকার তথা ডেটাবেস বিক্রেতা। এমনকি মেটা (Meta) কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য শোনা যায়নি।
আমাদের অনুমান, মোবাইল নম্বর বিক্রেতা স্ক্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ ইউজারদের ডেটা সংগ্রহ করেছেন। যদিও মেটা দীর্ঘদিন ধরে থার্ড পার্টি স্ক্র্যাপিং বা ডেটা সংগ্রহের বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু হ্যাকার মনে হচ্ছে মেটা-কর্তৃপক্ষের কথায় কান দেয়নি। যাইহোক এই লিক হওয়া নম্বরগুলিকে - মার্কেটিং, ফিশিং সহ অন্যান্য অসৎ কাজে ব্যবহার করার সম্ভাবনা আছে। ফলে ডেটাবেসের ভুল ফায়দা তুললে অনলাইন জালিয়াতির সংখ্যার ক্রমবর্ধমান বাড়বে বৈ কমবে না!