Truecaller অ্যাপ ছাড়াই জানা যাবে কে ফোন করল, তিন সপ্তাহের মধ্যে সরকার আনছে নয়া পরিষেবা
টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ট্রাই (TRAI) আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে Truecaller-এর মতো একটি কলার আইডেন্টিটি সিস্টেম চালু করতে চলেছে। খুব শীঘ্রই TRAI একটি কেওয়াইসি-ভিত্তিক প্রক্রিয়া (KYC-based process) শুরু করার কথা ঘোষণা করবে, যার ফলে কারোর কাছে কোনো ফোন এলেই কলারের নামটি ইউজারদের মোবাইল স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে। সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হল, Truecaller-এ যদিও বা ভুল নাম দেখানোর সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে, কেওয়াইসি-ভিত্তিক প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের পরে কলিংয়ের সময় যে নামগুলি দেখানো হবে, সেগুলি ১০০ শতাংশ সঠিক হবে। এর ফলে মোবাইলে কারোর নম্বর সেভ করা না থাকলেও কে ফোন করছে, তা অতি সহজেই জেনে যাবেন ইউজাররা। উপরন্তু, এর জন্য ব্যবহারকারীদেরকে ফোনে আলাদা করে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে না। ফলে TRAI-এর এই নয়া কলার আইডেন্টিটি সার্ভিস Truecaller-কে যে আগামী দিনে জোর টক্কর দিতে চলেছে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।
এবার থেকে কলারের পরিচয় নির্ভুলভাবে জানা সম্ভবপর হবে
জানা গিয়েছে যে, উক্ত নয়া নিয়মটিকে কার্যকর করার প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই ট্রাই টেলিযোগাযোগ বিভাগের (DOT) সাথে আলোচনা শুরু করেছে। ট্রাই-এর চেয়ারম্যান পি ডি ওয়াঘেলা (P. D. Vaghela) জানিয়েছেন যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নয়া নিয়ম চালু করা হবে। সোজা কথায় বললে, এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে কলারদেরকে তাদের কেওয়াইসি (নো ইওর কাস্টমার) অনুসারে সনাক্ত করা যাবে; যার ফলে আদতে কে ফোন করছে, তা একদম নির্ভুলভাবে জানতে পারবেন ইউজাররা। আসলে চলতি সময়ে ভুয়ো কলের সংখ্যাটা বেশ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছে। বেশিরভাগ ভুয়ো কলই ব্যাঙ্কের নাম করে আসে। এছাড়াও কোনো লিঙ্কে ক্লিক করলেই মোটা টাকা লটারি জেতার খবর কিংবা কেওয়াইসি ফর্ম জমা না দিলে মোবাইল সিম বন্ধ করার হুমকিও আকছার পেয়ে থাকেন ইউজাররা। আর সময়-অসময়ে এই ধরনের ফোন আসা নিতান্তই বিরক্তিকর ব্যাপার তো বটেই; তদুপরি, বর্তমানে হ্যাকারদের বাড়বাড়ন্তের যুগে এই ধরনের কলের আড়ালে যে সাইবার জালিয়াতির অন্ধকার দিক লুকিয়ে থাকে, সেকথা আর নতুন করে বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। তাই এই সমস্যার হাত থেকে ব্যবহারকারীদেরকে রেহাই দিতেই আলোচ্য নয়া কলার আইডেন্টিটি সিস্টেমটি চালু করতে চলেছে ট্রাই।
ভুয়ো কলারদেরকে জব্দ করতেই নতুন নিয়ম আনছে TRAI
নতুন নিয়মের আওতায়, গ্রাহকদেরকে তাদের অফিসিয়াল নাম, ঠিকানা সহ যাবতীয় ডিটেইলস টেলিকম সংস্থাগুলির কাছে জমা দিতে হবে। উপরন্তু, এই সকল ইনফর্মেশন সঠিক কি না, তার প্রমাণ হিসেবে ইউজারদের ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ইলেকট্রিক বিলের কপিও জমা রাখতে হবে টেলিকম অপারেটরদের কাছে। এর ফলে নতুন কেওয়াইসি-ভিত্তিক প্রক্রিয়া কার্যকর হলেই নিজের পরিচয় গোপন করার আর কোনো সুযোগই থাকবে না কলারদের কাছে। কারণ কোনো নম্বর থেকে কারোর ফোনে কল গেলেই কলারের যাবতীয় ডিটেইলস রিসিভারের স্ক্রিনে নির্ভুলভাবে ফুটে উঠবে। এর ফলে রিসিভারের ফোনে নম্বর সেভ না করা থাকলেও ফোনটি আদতে কে করছে, তা তিনি অতি অনায়াসে জানতে পারবেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে ভুয়ো কলাররা যে বেশ ভালোমতো জব্দ হবে এবং সেইসাথে অহেতুক হয়রানকারি জাল কলের সংখ্যাও যে অনেকটাই কমবে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।
আদৌ কি সকল ভুয়ো কলারদেরকে জব্দ করতে পারবে TRAI?
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, Truecaller ব্যবহার করলেও যে কল করছে, তার নাম স্ক্রিনে দেখা যায়। এমনকি যদি সেই ব্যক্তির নাম সেভ করা নাও থাকে, তা সত্ত্বেও কলারের একটি নাম ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। তবে এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, Truecaller যে নামটি দেখায়, তা কিন্তু কেওয়াইসি-এর উপর ভিত্তি করে নয়। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর দ্বারা সেট করা নামটি Truecaller ইউজারদের ফোনের স্ক্রিনে শো করে। সোজা কথায় বললে, এই ধরনের অ্যাপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ক্রাউডসোর্স করা হয়, তাই তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে আগামী দিনে TRAI কর্তৃক আনীত কলার আইডেন্টিটি সিস্টেমে এই সমস্যা হবে না বলেই সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখি, এখনও কিন্তু অনেকেই নকল নাম এবং পরিচয় ব্যবহার করে ফোনের সিম (SIM) তোলে। এমত পরিস্থিতিতে কিন্তু ব্যবহারকারীদের কাছে কিছু সংখ্যক ভুয়ো কল আসার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে; তবে এর পরিমাণটি যে অবশ্যই কমবে, সেকথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য।