৩৭ লক্ষ অ্যাকাউন্ট ব্যান করে ফের ব্যবহারকারীদের সতর্ক করল WhatsApp
গত নভেম্বর মাসে ৩৭ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে Meta মালিকানাধীন বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম WhatsApp। তথ্য প্রযুক্তি (মধ্যস্থতাকারী নির্দেশিকা এবং ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) বিধিমালা, ২০২১-এর বিধি ৪ (১) (ডি)-এর অধীনে এই অ্যাকাউন্টগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটির সর্বশেষ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে WhatsApp ৩৭ লক্ষেরও বেশি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে। উল্লেখ্য যে, গত অক্টোবর মাসে ২.৩ মিলিয়নেরও (২৩ লাখ) বেশি ভারতীয় অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছিল সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে এক মাসে সংখ্যাটা বেশ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ফলে Meta মালিকানাধীন অ্যাপটিতে ভুলভাল কোনো কার্যকলাপ করলে যে ব্যবহারকারীদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না, সেকথা খুব স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে।
নভেম্বরে ৩৭ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে WhatsApp
মেটা মালিকানাধীন কোম্পানিটি জানিয়েছে যে, তারা ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ৩৭ লক্ষেরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে ৯,৯০,০০০টি অ্যাকাউন্ট সক্রিয়ভাবে ব্লক করা হয়েছে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বিগত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একাধিকবার জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও অসৎ কার্যকলাপ (ইন্টারনেটের অপব্যবহার কিংবা ক্ষতিকারক বা অবাঞ্ছিত তথা স্প্যাম মেসেজ প্রেরণ) করা থেকে কিছু ইউজারদেরকে কোনোমতেই বিরত রাখা যাচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে কাউকে কোনো শাস্তি না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকতেও নারাজ হোয়াটসঅ্যাপ। তাই সংস্থাটিও ক্রমেই কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে, এবং প্ল্যাটফর্মে অনৈতিক আচরণের জন্য কোম্পানিটি প্রতি মাসে লক্ষাধিক ইউজারের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে চলেছে। আর ভবিষ্যতেও হোয়াটসঅ্যাপের তরফে এই কর্মকান্ড পুরোদমে জারি রাখা হবে বলে নিশ্চিতভাবে আশা করা যেতে পারে। তাই নিরাপদে থাকতে হলে সকলের অবিলম্বে সতর্ক হয়ে যাওয়া একান্ত আবশ্যক।
এই বিপুল সংখ্যক WhatsApp অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পিছনে মূল কারণ কী?
এখন অনেকের মনেই এই প্রশ্নটি আসতে পারে যে, WhatsApp কেন প্রতি মাসে এই বিপুল সংখ্যক অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে? সেক্ষেত্রে এর জবাবে সংস্থাটি বারংবার জানিয়েছে যে, সকল ব্যবহারকারীদের স্প্যাম-ফ্রি এবং অত্যন্ত সাবলীল ও নিরাপদ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করাই কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য। তবে কেউ যদি প্ল্যাটফর্মটি কর্তৃক প্রদত্ত শর্তাবলী লঙ্ঘনের চেষ্টা করে, তাহলে সংস্থাটি অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি হোয়াটসঅ্যাপ মারফত অহেতুক মিথ্যা তথ্য ছড়ায়, তাহলে সেই ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট তৎক্ষণাৎ ব্লক করবে সংস্থাটি। আবার, কোনো মেসেজকে যাচাই না করে যদি কেউ বহুল সংখ্যক ইউজারদেরকে সেটি ফরোয়ার্ড করেন, তাহলে তার অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়ারও ১০০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। মোদ্দা কথা হল, কোনোভাবেই এই প্ল্যাটফর্মটির অপব্যবহার করা চলবে না। শতবার হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ কোম্পানির নির্দেশাবলী না মানে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বিন্দুমাত্রও পিছপা হবে না WhatsApp।
কীভাবে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে WhatsApp?
অ্যাকাউন্ট ব্যানের প্রসঙ্গে WhatsApp জানিয়েছে যে, এই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড মেসেজিং পরিষেবা প্রদানকারী প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা এবং গোপনীয়তাকে যথেষ্ট অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এর জন্য বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, ডেটা সায়েন্টিস্ট তথা বিশেষজ্ঞ, এবং এই সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে চলেছে Meta মালিকানাধীন কোম্পানিটি। আবার, কোনো অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে বারংবার রিপোর্ট বা ব্লকিং জাতীয় প্রতিক্রিয়া এলে তার বিরুদ্ধেও WhatsApp-এর সিকিউরিটি রিসার্চার টিম যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এককথায় বললে, এই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় অ্যাপটিতে কোনোরকমের দুরাচরণ বা দুর্ব্যবহার যে সংস্থার তরফ থেকে একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না, সেকথা জলের মতো স্পষ্ট করে সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি কেউ এই ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটিতে অসৎ কার্যকলাপ করে, তাহলে আগামী দিনে তার অ্যাকাউন্টও নিশ্চিতভাবে ব্লক করবে WhatsApp৷