WhatsApp Hi Mum: হোয়াটসঅ্যাপে শুরু হয়েছে নতুন প্রতরণা, খোয়া গেছে ৫৭ কোটি টাকার বেশি

By :  techgup
Update: 2022-12-19 06:16 GMT

চলতি সময়ে ইউজারদের স্মার্টফোনে অন্য কোনো অ্যাপ্লিকেশন থাক বা না থাক, কিন্তু WhatsApp থাকাটা যেন একপ্রকার বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে বললেই চলে। Meta মালিকানাধীন এই ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি বর্তমান ইন্টারনেট নির্ভর যুগে প্রায় প্রত্যেকের জীবনেরই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হল, এই বহুল ব্যবহারের জেরে প্রায়শই WhatsApp-কে হাতিয়ার করে ইউজারদের ক্ষতি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সাইবার আক্রমণকারীরা। ফলে যত দিন যাচ্ছে, হ্যাকারদের মস্তিষ্কপ্রসূত নানান ধরনের কৌশলের সৌজন্যে ঘটা WhatsApp স্ক্যামের দরুন ইউজারদের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা এবং কষ্টার্জিত অর্থ চুরি হওয়ার ঘটনার সংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে। সেক্ষেত্রে সম্প্রতি আবারও অস্ট্রেলিয়ায় 'হাই মম' (Hi Mum) নামক একটি বিপজ্জনক স্ক্যামের খবর প্রকাশ্যে এসেছে। আসুন, বিষয়টির সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

'Hi Mum' স্ক্যাম কী?

ইন্ডিপেনডেন্ট -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্যামটি শুরু হচ্ছে খুব সাধারণ কিছু মেসেজ দিয়ে। সাইবার অপরাধীরা কোনো ব্যক্তির পরিবারের কাউকে উদ্দেশ্য করে 'হ্যাই মম' বা এই জাতীয় কিছু সম্বোধনসূচক মেসেজ পাঠাচ্ছে। আসল ব্যাপারটা হল, এই ধরনের মেসেজ পাঠিয়ে স্ক্যামাররা ইউজারদেরকে বোঝাতে চাইছে যে, তারা তাদের পরিবারেরই একজন সদস্য। মেসেজে প্রিয়জন সেজে জালিয়াতরা দাবি করছে যে, তাদের ফোন হারিয়ে গেছে বা ফোন খারাপ হয়ে গিয়েছে, এবং সেই কারণেই অত্যন্ত বিপদে পড়ে তারা অন্য নম্বর থেকে মেসেজ করছে। এরপর ফোনটি সারাই করার জন্য ভিক্টিমের কাছ থেকে টাকা চাইছে হ্যাকাররা। আবার ব্যবহারকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলতে তারা তাদের নিজস্ব এটিএম কার্ড বা অনলাইন ব্যাংকিং পরিষেবা কাজ না করার দোহাইও দেখাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রিয়জন বিপদে পড়লে পরিবারের সদস্যরা যে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে, সেটা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার; আর এই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করছে সাইবার অপরাধীরা।

এই স্ক্যামের শিকার হয়েছেন বহু সংখ্যক মানুষ

ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অনেক অস্ট্রেলীয় নাগরিক এই নতুন কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন এবং ৭০ লক্ষ ডলারেরও বেশি (প্রায় ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা) টাকা খোয়া গিয়েছে। উল্লেখ্য যে, এর আগে ১,১৫০ জনেরও বেশি মানুষ এই কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান কনজিউমার অ্যান্ড কম্পিটিশন কমিশন (ACCC)। সেই সময় পর্যন্ত প্রতারণার অঙ্কটা ২.৬ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ২১ কোটি টাকা) কাছাকাছি ছিল। কিন্তু চলতি বছরে সংখ্যাটা লাফিয়ে প্রায় ১০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। শুধু ২০২২ সালেই কমপক্ষে ১১,১০০ জন ৭.২ মিলিয়ন ডলার (৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা) খুইয়েছেন। উল্লেখ্য যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলারা এই স্ক্যামের শিকার হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

প্রসঙ্গত বলে রাখি, শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই নয়, বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বেই হোয়াটসঅ্যাপকে হাতিয়ার করে বা অন্যান্য নানাবিধ উপায়ে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। সিম সোয়াপ, কিউআর (QR) কোড স্ক্যাম এবং ফিশিং লিঙ্কে ক্লিক করার ফলে সহজসরল মানুষের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা হামেশাই আমরা খবরের শিরোনামে দেখতে পাই। তাই ইদানীংকালে হ্যাকারদের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই হল এক এবং একমাত্র উপায়। চলতি সময়ে যেহেতু স্ক্যামারদের পরাস্ত করার কোনো উপায় নেই, তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে ইউজারদেরকেই চোখকান খোলা রাখার পাশাপাশি যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত টিপসগুলি মেনে চললে ব্যবহারকারীরা এই ধরনের বিপজ্জনক সাইবার জালিয়াতির ঘটনাগুলিকে এড়িয়ে চলতে সক্ষম হবেন।

সাইবার স্ক্যামের হাত থেকে নিরাপদে থাকার উপায়

▪️কখনোই কারোর সাথে আপনার ওটিপি (OTP) শেয়ার করবেন না।

▪️আপনার ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পিন এবং সিভিভি (CVV) নম্বরটি কখনই কারোর কাছে প্রকাশ করবেন না (তা সে আপনার নিকটাত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব যাই হোক না কেন)।

▪️অজানা সোর্স থেকে পাওয়া লিঙ্কে খবরদার ক্লিক করবেন না।

▪️ব্রাউজ করার ক্ষেত্রে সর্বদা অথেন্টিক এবং অনুমোদিত ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।

▪️অজানা সোর্স থেকে পাওয়া মেসেজের রিপ্লাই দেওয়ার আগে অবশ্যই দুবার ভাবুন।

▪️অনলাইন শপিংয়ের সময় কখনোই ওয়েবসাইটগুলিতে আপনার পেমেন্ট ডিটেইলস সেভ করবেন না।

▪️সর্বদা অথেন্টিক এবং ভেরিফায়েড সাইট থেকে কেনাকাটা করুন।

▪️যদি কেউ আপনার ব্যাংক বা ইউপিআই (UPI) ডিটেইলস জিজ্ঞাসা করে, তবে তাকে সেটি বলার আগে দশবার ভাবনাচিন্তা করুন।

▪️আচমকা ব্যাংকের কর্মচারী হিসেবে যদি কেউ আপনাকে ফোন করে আপনার ব্যাংকিং ডিটেইলস বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চায়, তাহলে খবরদার তাদেরকে বিশ্বাস করবেন না। এমনকি পরিচিত কোনো ব্যক্তিও যদি ফোন করে এই ধরনের ইনফর্মেশন আপনার থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করে, তবে প্রকৃতই তারা আপনার নিকটাত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব কি না, সেটা চেক করে দেখে নিন।

Tags:    

Similar News