চালু হবে BSNL 5G, মোদি সরকার 62 হাজার কোটি টাকার স্পেকট্রাম বরাদ্দ করল
যদিও এখনও পর্যন্ত গোটা দেশজুড়ে 4G পরিষেবাই রোলআউট করা হয়ে ওঠেনি, তবে হাল ছেড়ে দিয়ে বেসরকারি টেলিকম কোম্পানিগুলির চেয়ে আরও পিছিয়ে পড়তে কিন্তু মোটেই রাজি নয় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম অপারেটর Bharat Sanchar Nigam Limited বা BSNL। গ্রাহক টানার পাশাপাশি নিজেদের ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য আগামী বছরেই এদেশে 4G এবং 5G পরিষেবা আনার জন্য সংস্থাটি রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছে। এর জন্য ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে আরও বেশি শক্তিশালী স্পেকট্রামের দাবি করেছে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিটি। উল্লেখ্য যে, আমূল ভোল পাল্টে সম্পূর্ণভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সংস্থাটিকে সবরকমভাবে সাহায্য করছে মোদী সরকার। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী BSNL-এর জন্য ১.৬৪ লক্ষ কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। আবার সম্প্রতি পাওয়া খবর বলছে যে, এবার টেলিযোগাযোগ বিভাগের (DoT) কাছ থেকে ৬২,০০০ কোটি টাকার 5G স্পেকট্রাম পেতে চলেছে সংস্থাটি। ফলে BSNL-এর অনুরাগীদের জন্য এটা যে এক দারুণ সুসংবাদ, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।
BSNL-এর জন্য ৬২,০০০ কোটি টাকার স্পেকট্রাম সংরক্ষণ করবে সরকার
ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, সরকার বিএসএনএলের জন্য ৭০০ মেগাহার্টজ এবং ৩.৩ গিগাহার্টজ এয়ারওয়েভ বরাদ্দ করার পরিকল্পনা করেছে। অর্থাৎ, রিলায়েন্স জিও (Reliance Jio)-র পর বিএসএনএল-ই হবে ভারতের দ্বিতীয় টেলিকম অপারেটর, যারা ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের মাধ্যমে এদেশে ৫জি পরিষেবা প্রদান করবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বিএসএনএল প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা মূল্যের ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ১০ মেগাহার্টজ এবং প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকা মূল্যের ৩.৬০-৩.৬৭ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ৭০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম পাবে। এর ফলে সারা দেশে অত্যন্ত সাবলীলভাবে ৫জি পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে বিএসএনএল। শুধু তাই নয়, এর সুবাদে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীরাও বিশেষভাবে উপকৃত হবেন বলে জানা গিয়েছে।
গোটা দেশে দুরন্ত গতির 5G পরিষেবা প্রদান করার জন্য ৭০০ মেগাহার্টজের স্পেকট্রাম কার্যকরী হবে বলে দাবি করছে BSNL
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, সরকার ইতিমধ্যেই বিএসএনএলের জন্য ৬০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ১০ মেগাহার্টজ, ৩৩০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ৪০ মেগাহার্টজ এবং ২৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ৪০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু গোটা দেশজুড়ে ৫জি রোলআউটের জন্য এটিকে যথেষ্ট বলে মনে করছে না রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানিটি। সেজন্য তারা হালফিলে আরও বেশি এয়ারওয়েভের (৭০০ মেগাহার্টজ) জন্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখি, টেলিযোগাযোগ বিভাগের কাছ থেকে ৫জি স্পেকট্রাম পাওয়ার এই সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত সিলমোহর কিন্তু দেবে ডিসিসি (DCC অর্থাৎ ডিজিটাল কমিউনিকেশনস কমিশন); তারপরেই মন্ত্রীসভার তরফে পাকাপাকিভাবে সবুজ সংকেত পাওয়া যাবে। যদিও অনেকেই মনে করছেন যে, গোটা দেশে দুরন্ত গতির ৫জি পরিষেবা প্রদান করার জন্য ৭০০ মেগাহার্টজের স্পেকট্রাম একেবারে অপরিহার্য নয়; কিন্তু সম্পূর্ণরূপে দেশীয় প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল ৫জি পরিষেবা লঞ্চের ক্ষেত্রে উক্ত ব্যান্ডের স্পেকট্রাম কার্যকরী হবে বলে অনুমান করছে বিএসএনএল।
আগামী বছরেই এদেশে BSNL-এর 4G এবং 5G পরিষেবার আগমন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে
উল্লেখ্য যে, হালফিলে টেলিকম মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন যে, আগামী ৫ থেকে ৭ মাসের মধ্যে ১.৩৫ লক্ষ টেলিকম টাওয়ারে BSNL-এর 5G পরিষেবা চালু করা হবে। তদুপরি, সংস্থাটি যাতে যথাযথভাবে 5G-র ট্রায়াল শুরু করতে পারে, তার জন্য ইতিমধ্যেই টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসকে (TCS) সমস্ত প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে যে, টাটার মালিকানাধীন তেজস নেটওয়ার্কস (Tejas Networks) BSNL-কে 5G-র জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। ফলে সবকিছু যদি পরিকল্পনামাফিক চলতে থাকে, তাহলে ২০২৩ সালেই এদেশে সরকারি মালিকানাধীন টেলিকম সংস্থাটির 4G এবং 5G পরিষেবার আবির্ভাব ঘটবে বলে আশা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে কোম্পানিটির যাবতীয় পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, সেটা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।