Jio ও Airtel এর দৌলতে ভারতে মোবাইল ইন্টারনেট স্পিড বাড়ল 115 শতাংশ
সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত বছরের অক্টোবর মাসের গোড়ার দিকে এদেশে চালু হয়ে গিয়েছে 5G সার্ভিস। স্বভাবতই দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য ব্যাপারটি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যেই ভারতের ৩০০ টিরও বেশি শহরে এই দুরন্ত গতির নেট পরিষেবা রোলআউট করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই টেলিকম অপারেটর Reliance Jio এবং Airtel। স্বভাবতই এর সুবাদে সার্বিকভাবে ভারতের মোবাইল স্পিড পূর্বের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য যে, উক্ত টেলিকম সংস্থাদ্বয়ের দাবি অনুযায়ী, 4G-র তুলনায় ২০-৩০ গুণ দ্রুত নেট স্পিড প্রদান করতে সক্ষম 5G। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, ঠিক কতটা বেড়েছে নেট স্পিড? সেক্ষেত্রে বলি, জ্বলন্ত প্রমাণ সাপেক্ষে এই প্রশ্নের জবাব সম্প্রতি জনসমক্ষে এনেছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্পিড টেস্টার ওকলা (Ookla)।
5G-র আগমনের পর ভারতের মোবাইল স্পিড বেড়েছে ১১৫ শতাংশ, জানালো Ookla
ওকলার মতে, গত অক্টোবরে ৫জি চালু হওয়ার পর গোটা ভারতের মিডিয়ান ডাউনলোড স্পিড ১১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বলে রাখি, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এদেশের মিডিয়ান ডাউনলোড স্পিড ছিল ১৩.৮৭ এমবিপিএস; কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংখ্যাটি বেড়ে ২৯.৮৫ এমবিপিএস হয়েছে। সেক্ষেত্রে আনন্দের বিষয় হল, এই গতি বৃদ্ধির ফলে স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স (Speedtest Global Index) র্যাঙ্কিংয়ে ৪৯ ধাপ এগিয়ে এসেছে ভারত। উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উক্ত তালিকার ১১৮ তম স্থানে বিরাজমান ছিল ভারত; কিন্তু সম্প্রতি ২৯.৮৫ এমবিপিএস মোবাইল স্পিডের সৌজন্যে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ওকলার রিপোর্টে ৬৯ তম স্থানে উন্নীত হয়েছে আমাদের দেশমাতৃকা।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, মেক্সিকো, রাশিয়া ও আর্জেন্টিনা সহ বেশ কয়েকটি জি-২০ দেশগুলির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে ভারত। ওকলার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, উক্ত মোবাইল মিডিয়ান স্পিডের দৌলতে ভারত এবার তুরস্ক (৩০.৯৮ এমবিপিএস মিডিয়ান ডাউনলোড স্পিড এবং স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্সে ৬৫ তম স্থান), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩৪.৭১ এমবিপিএস এবং ৫৮ তম স্থান) এবং ব্রাজিল (৩৫.৮৫ এমবিপিএস এবং ৫৭ তম স্থান)-এর মতো দেশগুলিকেও জোর টক্কর দিতে পারবে।
এখন দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই দুরন্ত গতির 5G নেটওয়ার্ক পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে
ওকলা আরও জানিয়েছে যে, গত অক্টোবরে যখন ৫জি প্রথম চালু করা হয়, তখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় উপলব্ধ নেট সার্ভিসের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য লক্ষ্য করা গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ - গুজরাটে মিডিয়ান ডাউনলোড স্পিড ছিল ৫১২.৫৭ এমবিপিএস, কিন্তু উত্তর প্রদেশ পশ্চিমে সংখ্যাটি ছিল ১৯.২৩ এমবিপিএসের কাছাকাছি। আবার, অন্ধ্রপ্রদেশ, কলকাতা, উত্তর-পূর্ব ভারত, হরিয়ানা, রাজস্থান, বিহার, পাঞ্জাব, কেরালা এবং উত্তর প্রদেশ পশ্চিম সহ নয়টি সার্কেলে প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০ এমবিপিএস মিডিয়ান ৫জি ডাউনলোড স্পিড পরিলক্ষিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সমস্ত টেলিকম সার্কেলেই ৫জি মিডিয়ান ডাউনলোড স্পিড বেড়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর বাদে দেশের সর্বত্র নেট স্পিড ২০০ এমবিপিএস অতিক্রম করেছে। আবার, কলকাতা সার্কেলে ৫০০ এমবিপিএসেরও বেশি গতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
5G-র আগমনের দৌলতে 4G-তেও মিলছে ভালো স্পিড
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের ফলে ৪জি এলটিই নেটওয়ার্কের উপর চাপ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে এখন সারা দেশের মানুষ অনেক উন্নত মানের ৪জি স্পিড পেতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে ৪জি এবং ৫জি-র নেট স্পিডের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ডাউনলোড স্পিডের কথা বললে, যেখানে ৪জি এলটিই-র মিডিয়ান ডাউনলোড স্পিড ১৩.৩০ এমবিপিএস, সেখানে ৫জি-র ক্ষেত্রে সংখ্যাটি হল ৩৩৮.১২ এমবিপিএস, যা ৪জি-র তুলনায় ২৫ গুণ দ্রুত। আবার, আপলোড স্পিডের ক্ষেত্রেও ৪জি-র চাইতে ৫জি-তে ৪.৫ গুণ দ্রুত স্পিড পরিলক্ষিত হয়েছে৷ এক্ষেত্রে বলে রাখি, ৪জি এবং ৫জি-র মিডিয়ান আপলোড স্পিড যথাক্রমে ৩.৫৫ এমবিপিএস এবং ১৯.৬৫ এমবিপিএস।
উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওকলার ইনসাইট রিপোর্টে ৫জি রোলআউটের একদম গোড়ার দিকে জিও এবং এয়ারটেলের ৫জি পারফরম্যান্সের মধ্যে তুলনাও করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে হিমাচল প্রদেশের জিও ব্যবহারকারীরা ২৪৬.৪৯ এমবিপিএস ডাউনলোড স্পিড পেতেন, যেখানে সেই সময় কলকাতায় জিও-র ডাউনলোড স্পিড ছিল ৫০৬.২৫ এমবিপিএস। অন্যদিকে, এয়ারটেলের ক্ষেত্রে কলকাতায় এবং দিল্লিতে প্রাথমিকভাবে যথাক্রমে ৭৮.১৩ এমবিপিএস এবং ২৬৮.৮৯ এমবিপিএস ডাউনলোড স্পিড পরিলক্ষিত হয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখি, এখনও পর্যন্ত কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে এয়ারটেলের ৫জি পরিষেবা লঞ্চ হয়নি৷