কুইজের পুরষ্কার জিততে গিয়ে খোয়া যাবে সর্বস্ব? হোয়াটসঅ্যাপে KBC-র নামে ভুয়ো মেসেজ পাঠাচ্ছে স্ক্যামাররা
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের শিরোপা এখন WhatsApp (হোয়াটসঅ্যাপ)-এর হাতে! কিন্তু সময়ের সাথে জনপ্রিয়তার সূচক যত উর্দ্ধমুখী হচ্ছে, ততই স্ক্যামারদের ভিড় বাড়ছে অ্যাপের অন্দরে। এর আগেও ফ্রি ইন্টারনেট অফার করার বা জলদি ভ্যাকসিনের জোগান দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রতারকরা WhatsApp-এর মাধ্যমে বহুবিধ বেআইনি কারসাজিকে পরিণাম দিয়েছে। তবে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের নজরদারির তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে স্ক্যামাররা যে মানুষ ঠকানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। আর এবার Meta-র মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্মের সাথে জড়িয়ে গেল অতি জনপ্রিয় গেম শো-এর নাম! আসলে সম্প্রতি ভারতীয় টেলিভিশনের অন্যতম বিখ্যাত গেম শো 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি' ওরফে KBC (কেবিসি) কেন্দ্রিক একটি নতুন স্ক্যাম ধরা পড়েছে WhatsApp-এ। আর এই স্ক্যাম থেকে ইউজারদের পকেট ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উদ্ভূত হয়েছে।
কুইজ খেলতে গিয়ে হতে পারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সাফ
আপনারা প্রায় সবাই জানেন, অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন দ্বারা হোস্ট করা কেবিসি কুইজ শোতে মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নগদ পুরস্কার জিতে নেওয়া সুযোগ করে দেওয়া হয় টিভির ওপারে থাকা দর্শকদের। এতে 'হঠাৎ ধনী' হওয়ার সুযোগের লাভ উঠিয়ে ওঠাতে অনেকেই মেসেজ মারফৎ উত্তর পাঠিয়ে থাকেন। অনেক সময় হয়তো আপনিও এই তালিকায় সামিল থাকেন। কিন্তু, একটি অচেনা নম্বর যদি আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এই কুইজের বিজেতা ঘোষণা করে, তখন কি সেই মেসেজের প্রামাণিকতা যাচাই করে দেখবেন? না, আনন্দে আত্মহারা হয়ে অনেকেই এই ধরণের ভুয়ো মেসেজ পরীক্ষা করেন না। আর এই অবহেলার জন্য থেকে যায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
KBC কুইজ শোতে টাকা জেতার নামে চলছে WhatsApp স্ক্যাম
আসলে কায়িকশ্রমের পরিবর্তে 'মগজাস্ত্র' ব্যবহার করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে কোটিপতি হওয়া গেলে, কেউই এমন সুযোগ হাতছাড়া করবে না। আর মানুষের এই ভাবনাকেই কাজে লাগিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে শুরু হয়েছে নতুন কেবিসি কেলেঙ্কারি। বিশদে বললে, এই ধরণের ঘটনায় প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহারকারীদের একটি মেসেজ পাঠানো হয় এবং তাতে বলা হয় যে, তাদের রেজিস্ট্রার্ড মোবাইল নম্বর 'কেবিসি সিম কার্ড লাকি ড্র প্রতিযোগিতা ২০২১'-এর জন্য নির্বাচিত হয়েছে। তবে এই নগদ পুরস্কার পেতে ব্যবহারকারীদের মেসেজে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে, যার মাধ্যমে তাদের সরাসরি কেবিসি অফিসের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে। এরপর, পুরস্কার প্রাপ্তির পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে জানানোর কথা বলা হয়।
সেক্ষেত্রে বলে রাখি, এই ঘটনা আদতে এক ধরনের স্ক্যাম যা এই বছরের শুরুতেও সামনে এসেছিল। তবে এই বিষয়ে দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট জানিয়েছে, এই নতুন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজটি সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে আসা মেসেজ থেকে কিছুটা আলাদা। কথিত স্ক্যাম মেজাজে লেখা থাকছে যে - "হ্যালো, আমি বিজয় কুমার কৌন বনেগা ক্রোড়পতি মুম্বাই থেকে, অভিনন্দন আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর কেবিসি সিম কার্ড লাকি ড্র প্রতিযোগিতা ২০২১ -এ নির্বাচিত হয়েছে। আপনি ২৫ লক্ষ কেবিসি নগদ পুরস্কার জিতেছেন।" মেসেজে আরো বলা হয়েছে যে, "কেবিসিতে বিজিত নগদ পুরস্কারের জন্য অনুগ্রহ করে কেবিসি অফিস হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করুন।" এই লাইনের পরেই একটি লিঙ্ক দিয়ে ব্যবহারকারীদের সেখানে ক্লিক করতে বলা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এই ভুয়ো মেসেজে, কেবিসি ম্যানেজারের নাম এবং লটারি নম্বর লেখা থাকতে দেখা গেছে। সাইবার সেলের মতে, বেশিরভাগ সময়েই এই ধরনের সাইবার ক্রাইম পাকিস্তানের (+৯২) নম্বর থেকে অপারেট করা হয়। তবে, এবারের স্ক্যাম মেসেজটি ভারতীয় নম্বর থেকেই পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এক্ষেত্রে, ভুক্তভোগীরা স্ক্যামারদের ফাঁদে পা দিয়ে মেসেজে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করে যোগাযোগ স্থাপন করলে, তাদের ভুলভাল নিয়ম বলে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করানো হয়। একই সাথে, পুরস্কারের পরিমাণ বাড়ানোর মাধ্যমে ভুক্তভোগীর কাছে আরো টাকা জমা দেওয়ার দাবি করে প্রতারকরা। আর, অসাবধানতার বসে জালিয়াতের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে দিলেই, তারা তৎক্ষণাৎ নিজেদের ফোন নম্বর বদলে ফেলে। ফলে যতক্ষনে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন তারা জালিয়াতির শিকার হয়েছেন, ততক্ষনে তাদের জমানো টাকা চলে যায় বেহাতে। অতএব, আপনারা যদি প্রতারণার শিকার না হতে চান, তবে অতিঅবশ্যই এইরূপ মেসেজ উপেক্ষা করুন!