ফেব্রুয়ারিতে ভারতে নিষিদ্ধ হল ১০ লাখেরও বেশি WhatsApp অ্যাকাউন্ট, আপনিও থাকতে পারেন তালিকায়
একাধিকবার জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও অসৎ কার্যকলাপ করা থেকে কিছু ব্যবহারকারীদের যেন কোনোমতেই আটকানো যাচ্ছে না, আর এর ফলস্বরূপ বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম WhatsApp (হোয়াটসঅ্যাপ)-ও ক্রমেই কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিগত কয়েক মাসের মতো এবারেও ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং ক্ষতিকারক বা অবাঞ্ছিত তথা স্প্যাম মেসেজ প্রেরণের জন্য, অর্থাৎ সোজা কথায় প্ল্যাটফর্মে অনৈতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য Meta (পূর্বে Facebook)-এর মালিকানাধীন সংস্থাটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে ১.৪ মিলিয়নেরও (১৪ লক্ষ) বেশি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে বলে জানা গিয়েছে। আইটি রুলস ২০২১ অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে WhatsApp-এর দায়ের করা নবম মাসিক গ্রিভান্স কমপ্লায়েন্স রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
আসলে প্ল্যাটফর্মে যাবতীয় অবৈধ ক্রিয়াকলাপ রুখতে বিগত কয়েকমাস ধরেই হোয়াটসঅ্যাপ বেশ জোরকদমে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থার মতে, সকল ব্যবহারকারীদের স্প্যাম-ফ্রি এবং অত্যন্ত সাবলীল ও নিরাপদ ইউজার অভিজ্ঞতা প্রদান করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য; আর এই উদ্দেশ্য বজায় রাখতে সংস্থাটি যেকোনো রকমের কঠোর পদক্ষেপ নিতেও বদ্ধপরিকর। ইউজারদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে সংস্থাটি বারংবার সকলকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছে যে, এই প্ল্যাটফর্মের সমস্ত মেসেজ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড। অর্থাৎ, প্রেরক এবং রিসিভার ব্যতীত অন্য কেউ মেসেজটি পড়তে পারবে না, এমনকি মূল সংস্থা মানে খোদ মেটা-ও নয়। তাই ভবিষ্যতেও কয়েক লক্ষ অসৎ কার্যকলাপকারী ইউজারের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট যে নিশ্চিতভাবে বন্ধ হতে চলেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য।
ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি আরও জানিয়েছে যে, ইউজারদের যাবতীয় ক্ষতিকারক আচরণ রোধ করতে তারা নিজস্ব টুল এবং রিসোর্স ব্যবহার করে। আর এইসব সরঞ্জামের মাধ্যমে শনাক্ত অ্যাকাউন্টগুলিকেই তারা নিষিদ্ধ করে। একথা আমরা কমবেশি সকলেই জানি যে, গত বছর নতুন তথ্যপ্রযুক্তি আইন চালু হওয়ার পর থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, এবং টুইটারের মতো সংস্থাগুলির সঙ্গে ক্রমাগত মতবিরোধ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। তবে কেন্দ্রের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ভারতের আইন মেনে জাতীয় সুরক্ষাকে সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে তবেই এদেশে ব্যবসা করতে পারবে সংস্থাগুলি, নচেৎ নতুন আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে ভারত সরকার।
এরপর শুরুতে সবকটি সংস্থাই কিছুটা বেঁকে বসলেও পরবর্তীকালে চাপের মুখে পড়ে শীর্ষস্থানীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি তাদের নীতিতে রদবদল করা শুরু করে। আইটি রুলস ২০২১ অনুযায়ী, ৫০ লক্ষের বেশি গ্রাহক রয়েছে এমন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে প্রতি মাসেই সরকারের কাছে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট পেশ করতে হবে। সেইসাথে যে-কোনো প্ল্যাটফর্মের কাছে কত অভিযোগ জমা পড়ছে এবং তার বিরুদ্ধে সংস্থাগুলি ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার যাবতীয় খুঁটিনাটিও জানাতে হবে সরকারকে। এর পর থেকেই এই ধরনের মাসিক রিপোর্ট প্রকাশ করা শুরু করেছে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ভবিষ্যতেও করবে। তবে যাইহোক নিরাপদে এবং নিশ্চিন্তে যদি আগামী দিনে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা চালিয়ে যেতে চান, তাহলে ভুলেও এই প্ল্যাটফর্মে কোনোরকম অসৎ কার্যকলাপ করবেন না!