TechGupTech Newsহাত পা নেই, জিভ দিয়ে গেম খেলে সংসার চালাচ্ছে এই ব্যক্তি, ঘুরে আসুন তার YouTube চ্যানেল থেকে

হাত পা নেই, জিভ দিয়ে গেম খেলে সংসার চালাচ্ছে এই ব্যক্তি, ঘুরে আসুন তার YouTube চ্যানেল থেকে

দুটো হাত-পা নেই, জিভ দিয়ে গেম খেলে YouTube থেকে টাকা উপার্জন করছেন এই ব্যক্তি! দেখে তাজ্জব নেটিজেনরা

জীবন মানেই অঘোষিত যুদ্ধ, প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকার নামই জীবন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যে হাজার চাইলেও তখন আর লড়াই করার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু তাই বলে কান্নাকাটি করে বসে থেকে ভাগ্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিলে তো চলবে না, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করা চালিয়ে যেতেই হবে। আর মনে যদি অদম্য ইচ্ছে থাকে, তাহলে কোনো পরিস্থিতিতেই দুর্ভাগ্য কখনোই মানুষকে গ্রাস করতে পারে না। কারণ কথাতেই আছে – ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, ইচ্ছাশক্তির বলে যে-কোনো অসাধ্যসাধন করা সম্ভব। আর আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা এমন একজনের কথা আপনাদেরকে জানাতে চলেছি, যার জন্য এই প্রবাদটি এককথায় আদর্শ। আচমকা এক দুর্ঘটনায় দুটো হাত এবং দুটো পা খোয়ানোর পরেও ভাগ্যের লিখনকে পুরোপুরিভাবে পরাস্ত করে কারোর দ্বারস্থ না হয়ে সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় জীবনে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছেন এই ব্যক্তি। আসুন, তার এই অসামান্য অনুপ্রেরণামূলক জীবন কাহিনীটির উপর একনজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

আচমকাই এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দুটো হাত-পা খোয়াতে হয় ইন্দ্রকে

আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনের ‘হিরো’ হচ্ছেন ইন্দ্র, যিনি ইউটিউব (YouTube) মহলে নিখিল বারাইক নামে পরিচিত। অসমের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হয়, ফলে জন্মের পর থেকেই একের পর এক লড়াই করে তাকে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে হয়েছে। তবে হাজারো ঝড়ঝাপটা কাটানো সত্ত্বেও ২০১৮ সালের আগে পর্যন্ত তার জীবন মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে তার বিয়ে হয় এবং তারপরে এক কন্যাসন্তান পৃথিবীর আলো দেখে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই এরপর তার কাঁধে এসে পড়ে সংসারের গুরুদায়িত্ব, এবং দায়িত্ব বাড়ার সাথে সাথে সংসারের ব্যয়ভারও বৃদ্ধি পায়। তাই একটু সাবলীলভাবে দিন গুজরানের আশায় তিনি অসম থেকে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে একটি টাইলস কারখানায় কাজে যোগদান করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুই মাস পর কাজ করতে করতে হঠাৎ একদিন শর্ট সার্কিটের দরুন মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

চিকিৎসকরা ইন্দ্রর পরিবারকে জানান যে, মারাত্মক রকমের কারেন্ট লাগায় তার সারা শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছে; তাই তার দুটো হাত-পা কেটে না দিলে তাকে আর বাঁচানো যাবে না। ভাগ্যের এই নির্মম পরিহাসের সম্মুখীন হয়ে ইন্দ্রকে বাঁচিয়ে রাখার আশায় তার পরিবার অগত্যা ডাক্তারের এই পরামর্শে সম্মতি দিতে বাধ্য হয়। ফলে দুটো হাত-পা হারিয়েও কোনোরকমে বেঁচে থাকতে সক্ষম হন ইন্দ্র। দুটো পা এবং দুটো হাত এক ঝটকায় হারিয়ে ফেললে তখন একটা মানুষের মনের অবস্থা ঠিক কীরকম হতে পারে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কার্যত অসম্ভব বললেই চলে। কিন্তু এইরকম এক নির্মম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে ভাগ্যের ফেরে আচমকাই সম্পূর্ণ পঙ্গু হয়ে যান ইন্দ্র, ফলে পরিবারের কোনো দায়িত্ব পালন করা তার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ভাগ্যের নিদারুণ করাঘাতের জেরে নিজের মৃত্যুকামনা পর্যন্ত করতে হয় ইন্দ্রকে

কিন্তু এই চরম দুর্দিনেও ইন্দ্রের পরিবার কিন্তু সবসময় তার পাশে থেকেছে, এক মুহূর্তের জন্যও তাকে ছেড়ে যায়নি। তবে ইন্দ্রকে এত বড়ো আঘাত দিয়েও ভাগ্য কিন্তু থেমে থাকেনি, এরপরেও তার আরও অনেক আঘাত পাওয়া বাকি ছিল। এই মারাত্মক দুর্ঘটনার কয়েক মাস পরে ইন্দ্রের বাবা মারা যান, ফলে পেটের দায়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে ইন্দ্রের মা এবং স্ত্রী চা বাগানে কাজ করে দিন গুজরান করতে থাকেন। কিন্তু যে ব্যক্তি দুহাতে কাজ করে এতদিন ধরে সংসার চালাচ্ছিলেন, আচমকা পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন ইন্দ্র। সারাদিন বাড়িতে থাকতে থাকতে রীতিমতো অস্থির হয়ে পড়ছিলেন তিনি, এবং সেইসাথে শরীরে সংক্রমণের কারণে তার কষ্টও প্রবলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ফলে একটা সময়ে নিজের মৃত্যুকামনা করা ছাড়া তার কাছে আর অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।

সুদিন ফিরিয়ে আনলো হাতের স্মার্টফোন

কিন্তু ছোটোবেলা থেকেই যেহেতু ইন্দ্র একের পর এক লড়াই করে জীবনযুদ্ধে টিকে থেকেছেন, তাই ভাগ্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করে হাল ছেড়ে দিতে একেবারেই নারাজ তিনি। তাই শত কষ্টের মধ্যেও কোনোরকমে স্মার্টফোন ঘেঁটে তিনি দিনের বেশিরভাগ সময়টা কাটাতে শুরু করেন। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে যে, হাত তো নেই, তাহলে তিনি স্মার্টফোন ঘাঁটছেন কীভাবে? ওই যে আগেই বললাম – ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, তাই জিভের সাহায্যে স্মার্টফোন চালানো শুরু করেন ইন্দ্র। প্রথমে তিনি তার জিহ্বা দিয়ে ক্যান্ডি ক্রাশের মতো গেম খেলতে শুরু করেছিলেন, যার ফলে তিনি ৫,০০০ টাকা আয় করতে সক্ষম হন। এরপর একটা নতুন স্মার্টফোন কিনে তিনি PUBG (পাবজি) গেম খেলা শুরু করেন। কিন্তু অনেক সময় ভালো খেলতে না পারার জন্য অনলাইনে তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশার আসর বসতো, আবার কখনো কখনো গালিগালাজও শোনা যেত। যদিও ইন্দ্র সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন যে তিনি তার জিভ দিয়ে পাবজি খেলেন, কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাসই করতো না।

তাই অগত্যা একসময় ইন্দ্র ভাবেন যে তিনি তার নিজের ভিডিও তৈরি করবেন এবং সেগুলি লোকজনকে হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp)-এ পাঠাবেন, যাতে তারা বিশ্বাস করেন যে তিনি সত্যি সত্যিই তার জিভ দিয়ে গেম খেলেন, হাত দিয়ে নয়। তবে এমত পরিস্থিতিতে তার এক বন্ধু তাকে একটি চমকপ্রদ আইডিয়া দেন। তিনি ইন্দ্রকে জানান যে, জনে জনে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও না পাঠিয়ে তিনি যেন তার নিজের একটি ভিডিও তৈরি করে সেটিকে ইউটিউবে পোস্ট করেন এবং তার লিঙ্কটি সকলকে শেয়ার করেন। এর ফলে বেশ খানিকটা সময়ও বাঁচবে এবং ইউজারমহলে তার পরিচিতিও বাড়বে। এরপর যেমন ভাবা তেমন কাজ – ইন্দ্র তার গেমিং ভিডিও রেকর্ড করেন এবং সেটি তার ইউটিউব চ্যানেল ‘এডিএন গেমিং ওয়াইটি’ (ADN Gaming YT)-এ আপলোড করে দেন।

একের পর এক ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ইন্দ্র হয়ে ওঠেন YouTube ‘স্টার’

ভিডিও আপলোড করা শুরু করতেই তিনি ইউজারমহলে বিশেষ পরিচিতি পান এবং তার এই অসাধ্যসাধন করাকে চাক্ষুষ দেখে অনেকেই তাকে ব্যাপকমাত্রায় সাপোর্ট করতে শুরু করেন। তিনি কীভাবে নিজের জিভ দিয়ে এত ভালো গেম খেলছেন, তা দেখে রীতিমতো তাক লেগে যায় নেটিজেনদের। এরপর থেকেই তার একের পর এক ভিডিও ভাইরাল হতে থাকে, এবং তিনি গেমিং কমিউনিটির এক সুপরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। এভাবেই তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রচুর সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার আসতে শুরু করে এবং বিপুল সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার হওয়ার দরুন বর্তমানে তিনি তার ইউটিউব চ্যানেল থেকে বেশ ভালোরকম টাকাই উপার্জন করছেন। বর্তমানে ইউটিউবে তার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১০ লক্ষেরও বেশি।

অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর এক জ্বলন্ত উদাহরণ ইন্দ্র

অসমের দারাং জেলার বরগড়া বাগিচার বাসিন্দা ইন্দ্রর এই অসামান্য জীবন সংগ্রামের কাহিনী শুধু যে প্রতিবন্ধীদেরকেই উদ্বুদ্ধ করবে তা নয়, সাধারণ মানুষকেও জীবনে এগিয়ে চলার পথে চরম অনুপ্রেরণা যোগাবে। দুটো হাত-পা না থাকলে মানুষ যখন কোনো কাজ করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না, তখন সেই পরিস্থিতিতে মনের জোরকে সম্বল করে নিজের জিভকে কাজে লাগিয়ে গেম খেলে YouTube থেকে টাকা রোজগার করে পুনরায় সংসারের হাল ধরে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছেন ইন্দ্র। সিনেমার পর্দায় লড়াই করতে তো আমরা বহু নায়ককেই দেখে থাকি, তবে অসমের ইন্দ্র যে নিঃসন্দেহে রিয়েল লাইফ হিরো তথা ফাইটার, সেকথা বলাই বাহুল্য।

RELATED ARTICLES

Top Stories