গতকাল রাতে Pixle Fall লঞ্চ ইভেন্টে Google তাদের নতুন দুটি স্মার্টফোন Google Pixel 6, Pixel 6 Pro লঞ্চ করেছে। দুটি ফোনেরই মুখ্য আকর্ষণ, কোম্পানির নিজস্ব সিস্টেম অন চিপ (SoC), যার নাম Tensor। নতুন এই প্রসেসর আরও উন্নত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং মেসিন লার্নি (ML) পারফরম্যান্স রেজাল্ট দেবে বলে কোম্পানি দাবি করেছে। এছাড়া Google Pixel 6, Pixel 6 Pro ফোন দুটি নতুন অ্যান্ড্রয়েড ১২ অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা চালিত হবে। এগুলিতে রয়েছে আইপি৬৮ রেটিং ও নতুন ডিজাইন। আসুন Google Pixel 6, Pixel 6 Pro ফোন দুটির দাম ও স্পেসিফিকেশন জেনে নেওয়া যাক।
Google Pixel 6, Pixel 6 Pro দাম ও লভ্যতা
গুগল পিক্সেল ৬ ফোনের ১২৮ জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের দাম রাখা হয়েছে ৫৯৯ ডলার (প্রায় ৪৪,৮০০ টাকা) এবং ২৫৬ জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের দাম ৬৯৯ ডলার (প্রায় ৫২,৩০০ টাকা)। ফোনটি সর্টা সিফোম, কিন্ডা কোরাল ও স্টোর্মি ব্ল্যাক কালারে পাওয়া যাবে।
গুগল পিক্সেল ৬ প্রো এর ১২৮ জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের মূল্য ধার্য করা হয়েছে ৮৯৯ ডলার, যা প্রায় ৬৭,৩০০ টাকা। এই ফোনটি ক্লাউডি হোয়াইট, সর্টা সানি ও স্টোর্মি ব্ল্যাক কালারে বেছে নেওয়া যাবে।
আগামী ২৮ অক্টোবর ফোন দুটি আমেরিকায় সেলে বিক্রির জন্য উপলব্ধ হবে। যদিও গুগলের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, Pixel 6, Pixel 6 Pro ভারতে আসবে না।
Google Pixel 6 ও Pixel 6 Pro স্পেসিফিকেশন, ফিচার
গুগল পিক্সেল ৬ ফোনে ৯০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট সহ একটি ৬.৪ ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস স্মুথ ডিসপ্লে আছে। অন্যদিকে, গুগল পিক্সেল ৬ প্রো ফোনে দেখা যাবে তুলনায় বড় অর্থাৎ ৬.৭ ইঞ্চির QHD+ LTPO ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্টজ। দুটি ফোনেই গরিলা গ্লাস ভিক্টাসের প্রটেকশন পাওয়া যাবে। তবে পিক্সেল ৬ ফোনের ফ্রন্ট প্যানেলের সাথে ব্যাক প্যানেলেও গরিলা গ্লাস ৬ প্রটেকশন উপলব্ধ।
ফাস্ট পারফরম্যান্সের জন্য উভয় স্মার্টফোনেই, ১০ কোর জিপিইউ সহ গুগল নির্মিত চিপসেট – টেনসর ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রসেসরে, ২টি হাই-পারফরম্যান্স কোর, ২টি মিড-কোর এবং ৪টি হাই-এফিসিয়েন্সি কোর অন্তর্ভুক্ত। পিক্সেল ৬ সিরিজ লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ১২ অপারেটিং সিস্টেমে রান করবে এবং দীর্ঘ ৫ বছরের জন্য ফ্রি সিকিউরিটি আপডেট পাবেন ইউজাররা। স্টোরেজের কথা বললে, Pixel 6 Pro ফোনে ১২ জিবি র্যাম এবং ১২৮ জিবি / ২৫৬ জিবি / ৫১২ জিবি মেমোরি অপশন পাওয়া যাবে। অন্যদিকে, Pixel 6 ফোনে ৮ জিবি র্যাম এবং ১২৮ জিবি / ২৫৬ জিবি UFS 3.1 স্টোরেজ বর্তমান। কোনো হ্যান্ডসেটেই স্টোরেজ বাড়ানোর বিকল্প থাকবে না।
Pixel 6 সিরিজের উভয় মডেলে ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার এবং টাইটান এম২ সিকিউরিটি চিপ দেওয়া হয়েছে। সিরিজে ব্যবহৃত টেনসর চিপসেটে একটি ইন-বিল্ট সিকিউরিটি কোর আছে, যা উক্ত টাইটান এম২ চিপের সাথে মিলিত ভাবে কাজ করবে এবং যেকোনো প্রকারের সাইবার অ্যাটাক থেকে ফোনগুলিকে সুরক্ষিত রাখবে। অন্যান্য ফিচারের কথা বললে ফোনদ্বয়ে, ডুয়েল সিম স্লট (ন্যানো সিম ও ই-সিম), ওয়াই-ফাই ৬ই কানেকশন এবং স্টেরিও স্পিকার উপলব্ধ। উভয় ফোনই, IP68 ওয়াটার ও ডাস্ট রেসিস্ট্যান্স রেটিং এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেসিস্ট্যান্স কোটিং সহ এসেছে।
এবার আসা যাক ব্যাটারি ব্যাকআপের প্রসঙ্গে। পিক্সেল ৬ প্রো ফোনে ৫,০০৩ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি আছে, যা ২৩ ওয়াট ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে। অপরপক্ষে, পিক্সেল ৬ ফোন ৪,৬১৪ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি সহ এসেছে, যা ২১ ওয়াট ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে। উভয় মডেল ৩০ ওয়াট ফাস্ট ওয়্যারড চার্জিং এবং রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিং টেকনোলজি সমর্থন করবে। সিরিজের রিটেল বক্সে কোনো চার্জার থাকবে না। তবে ইউএসবি-পিডি (USB-PD) সামঞ্জস্যপূর্ণ চার্জার থাকলে ইউজারদের আলাদা ভাবে আর কোনো চার্জার কিনতে হবে না। এটিকে কিউআই-সার্টিফাইড ইপিপি (Qi-certified EPP) চার্জার দিয়েও চার্জ করা যাবে ফোনগুলি। তবে সেক্ষেত্রে, চার্জিং স্পিড ১২ ওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
Google Pixel 6 ও Pixel 6 Pro ক্যামেরা
গুগল পিক্সেল ৬ প্রো স্মার্টফোনের ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ দেখা যাবে। এগুলি হল, ৮২° ফিল্ড-অফ-ভিউ যুক্ত ৫০ মেগাপিক্সেল (অ্যাপারচার : এফ/১.৮৫) প্রাইমারি সেন্সর, ১১৪° ফিল্ড-অফ-ভিউ যুক্ত ১২ মেগাপিক্সেল (অ্যাপারচার : এফ/২.২) আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স এবং ৪এক্স অপটিক্যাল জুম সমেত ৪৮ মেগাপিক্সেল টেলিফোটো লেন্স। একই সাথে ডিসপ্লের উপরিভাগে পাওয়া যাবে ১১.১ মেগাপিক্সেল সেলফি সেন্সর।
অন্যদিকে, পিক্সেল ৬ ফোনে ডুয়েল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল, ৮২° ফিল্ড-অফ-ভিউ যুক্ত ৫০ মেগাপিক্সেল (অ্যাপারচার : এফ/১.৮৫) প্রাইমারি সেন্সর এবং ১১৪° ফিল্ড-অফ-ভিউ যুক্ত ১২ মেগাপিক্সেল (অ্যাপারচার : এফ/২.২) আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স। আর সেলফি তোলার জন্য থাকছে ৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা।
পিক্সেল ফোনগুলি চিত্তাকর্ষক ক্যামেরার জন্য বিশেষ জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে, পিক্সেল ৬ সিরিজের এই নয়া দুটি ফোন আমাদের একদমই নিরাশ করেনি। উক্ত সিরিজের দুটি মডেলেই ‘ফেস আনব্লার’ ফিচার আছে। এই ফিচার ফাস্ট-মুভিং সাবজেক্টের ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন ক্যামেরায় তোলা ছবিকে একত্রিত করে ফেস ব্লারকে সরিয়ে দেবে। আবার ‘ম্যাজিক ইরেজ’ ফিচার, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে অবাঞ্ছিত বস্তু এবং ব্যক্তিদের সরিয়ে দেবে। ফোনগুলির ক্যামেরায়, ‘মোশন মোড’ সাপোর্ট করে। যা ফাস্ট-মুভিং অবজেক্ট গুলিকে ডিটেক্ট করতে সক্ষম। এছাড়া, থাকছে ‘রিয়েল টোন’ নামের একটি বিশেষ ক্যামেরা ফিচার। এই ইমেজ অ্যালগরিদমটি অবজেক্টের বাস্তবিক স্কিন টোনকে ছবিতে ফুটিয়ে তুলবে।