আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের যেমন স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের সাহচর্য ছাড়া দিন চলেনা, তেমনই এই দুটি জিনিসের মাধ্যমে ঘটা জালিয়াতি থেকে বাঁচতে প্রতিটা পদে চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। কারণ সামান্য একটু অসাবধান হলেই ব্যস, অগোচরে খোওয়া যাবে সঞ্চিত অর্থ বা ব্যক্তিগত তথ্যাদি। আসলে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনলাইন স্ক্যামের ঘটনা আমাদের সামনে আসছে, শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের জালিয়াতির পন্থার কথাও। তবে সম্প্রতি Facebook এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে একটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে কীভাবে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করছে স্ক্যামাররা, তার একটি নতুন উপায় সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে৷ কী আছে ওই ভিডিওতে?
হালফিলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে একটি লোক একপ্রকার নতুন কেলেঙ্কারীর কথা বলেছে, যা পারতপক্ষে পুরোপুরি অনলাইন জালিয়াতি এমনটা বলা যায়না। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে যে, এক্ষেত্রে প্রতারকরা পাবলিক প্লেসে সর্বসমক্ষে নিজের ফাঁদ পাতছে – এক্ষেত্রে তাদের কোনো এক সঙ্গী বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে একটি জরুরী ফোন কল করার নামে স্মার্টফোন শেয়ার করার অনুরোধ করে। এই স্ক্যামাররা সাধারণত তাদের হাসপাতালে থাকা কোনো আত্মীয়কে অবশ্যই কল করতে হবে এবং তাদের নিজের ফোনে কোনো ব্যাটারি নেই – এমনটাই অজুহাত দেখায়।
নিজের ফোন অন্যের হাতে দিলেই হবেন সর্বস্বান্ত
এই পরিস্থিতিতে অনুকম্পাবশত কেউ জালিয়াতদের হাতে ফোন দিলে, তারা প্রথম যে কলটি করে তা রিসিভ হয়না। এরপর তারা পুনরায় অন্য একটি নম্বরে দ্বিতীয়বার কল করার জন্য অনুরোধ করে এবং সেটিও উত্তরহীন রয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ভিক্টিম (মানে যিনি ফোন দিয়েছিলেন) বুঝতে পারেন যে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে গেছে।
কীভাবে শুধুমাত্র ফোন কলের সাহায্যে এত বড় জালিয়াতি সম্ভব? যিনি ভাইরাল ভিডিওটি বানিয়েছেন তাঁর দাবি প্রতারকরা নির্দিষ্ট কোড ডায়াল করে ভিকটিমদের ফোন কলগুলি অটো ফরওয়ার্ডিংয়ে রাখে। এক্ষেত্রে তারা কল করার সময় স্মার্টফোনে একাধিক নম্বর (পড়ুন কোড) ডায়াল করে যা তাকে ভিক্টিমের ফোনে আসা সমস্ত কল অন্য নম্বরে রুট করতে সাহায্য করে। এর ফলে সহজেই ওটিপি অ্যাক্সেস করে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ইউপিআই (UPI) অ্যাপ থেকে টাকা চুরি সম্ভব হয়। অর্থাৎ এককথায় বললে, স্মার্টফোন (তা সে Android হোক বা iPhone)-এর কল ফরওয়ার্ডিং সেটিংটিকেই এবার হাতিয়ার করছে জালিয়াতরা। তাই বাইরে বেরিয়ে সাত-পাঁচ না ভেবে কারো হাতে নিজের ফোন তুলে দেবেননা এবং দিলেও সঙ্গে সঙ্গে চেক করে নেবেন ফোনের কল সেটিং।
ব্যাঙ্ক জালিয়াতি এড়াতে মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলিও
১. ফোনে বা ইমেইল/এসএমএসের মাধ্যমে ওটিপি (OTP) এবং পিন নম্বর কখনই শেয়ার করবেন না।
২. মনে রাখবেন, কোনো ব্যাঙ্ক বা অন্য প্রতিষ্ঠান কখনই ওটিপি, পিন, সিভিভি (CVV) নম্বরের মত তথ্য চাইবেনা।
৩. অন্য ব্যক্তি যদি ফোনে আপনার ওটিপি, পিন, সিভিভি নম্বর বা অন্যান্য শংসাপত্র জিজ্ঞাসা করে সেই কলের প্রতুত্তর করবেননা। এমনকি কলটি ডিসকানেক্টও করবেননা।
৪. ইমেইল, এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রাপ্ত অজানা লিঙ্কগুলিতে কখনই ক্লিক করবেননা।