ব্রহ্মাণ্ডের প্রাচীনতম ছবি প্রকাশ করে ‘হিরো’ James Webb, এই নতুন স্পেস টেলিস্কোপ সম্পর্কে জানেন?

Published on:

বিশ্ব তথা ব্রহ্মাণ্ডের প্রায় ১,৩০০ কোটি বছর আগের ছবি প্রকাশ্যে – কার্যত এই খবরেই বিগত দুদিন ধরে মেতে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং তামাম সংবাদমাধ্যম। আসলে মহাবিশ্ব খুঁড়ে NASA (নাসা) একটি বিশেষ টেলিস্কোপের সাহায্যে অদেখা অতীতের ছবি সবার সামনে এনেছে, যা দেখে স্তম্ভিত ও মুগ্ধ গোটা বিশ্ববাসী। গ্যালাক্সির অকল্পনীয় আলোকচিত্র তোলায় চর্চায় রয়েছে James Webb Space Telescope (জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ) বা JWST। কিন্তু কীভাবে এই ‘টাইম ট্রাভেল’-এর অসাধ্য সাধন হল সেই বিষয়ে অনেকেরই মনে কৌতুহলের উদ্রেক হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে ঠিক কী এই James Webb Space Telescope?

সেক্ষেত্রে বলি, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব। ২০২১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়দিনে ইউরোপীয় আরিয়ান ৫ (Ariane 5) রকেটের মাধ্যমে এটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়; টেলিস্কোপটি গন্তব্যে পৌঁছায় চলতি বছরের ২৪শে জানুয়ারি। এটি তিন দশক আগে মহাকাশে যাওয়া ‘হাবল’ স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি যার মূল কাজ দুটি – ব্রহ্মাণ্ডের আদি নক্ষত্রগুলির ছবি তোলা বা বিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা এবং দূর-দূরান্তের গ্রহগুলির গঠন, সেগুলি প্রাণধারণের উপযোগী কিনা তা খতিয়ে দেখা। সোজা ভাষায় বললে, এটি নক্ষত্রপুঞ্জের জন্ম-মৃত্যু বা তাদের জন্মের ইতিহাস, গ্রহদের নানাবিধ তথ্য, ছায়াপথের অজানা রহস্য ইত্যাদি সম্পর্কে গবেষণা করবে।

চমকের আরেক নাম James Webb Space Telescope

জেমস ওয়েবের ওজন ৬.২ টন। এর প্রধান আকর্ষণ হল দুটি আয়না, যার মধ্যে প্রাইমারি মিররটি সাড়ে ২১ ফুট বা সাড়ে ৬ মিটার চওড়া এবং এর ভেতরে ০.৭৪ মিটারের ১৮টি ছোট ছোট ষড়ভুজ আয়না (সেকেন্ডারি মিরর) রয়েছে। সোনার প্রলেপ লাগানো এই আয়নাগুলি অবলোহিত রশ্মি প্রতিফলন করে। এটি ইনফ্রারেড রশ্মি (IR)-র মাধ্যমে ছবি তুলবে বা সময়ের আরও গভীরে উঁকি দেবে, অন্যদিকে এর বিরাট অ্যান্টেনা পৃথিবীর সঙ্গে সমানতালে সম্পর্ক রাখবে। বলে রাখি, পৃথিবী এবং সূর্যের তাপ থেকে বাঁচাতে টেলিস্কোপে ৫টি পর্দা বা সানশিল্ড লাগানো হয়েছে। শক্তি জোগানোর জন্য রয়েছে সোলার প্যানেলের সাপোর্ট।

প্রথমে ৯০-এর দশকে এই ব্যতিক্রমি টেলিস্কোপের মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নাসার বহুদিনের কাজের পর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। যন্ত্রটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৫,৩৩০ কোটি টাকা)। কানাডার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (CSA) এবং ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ESA)-এর দিকে অংশীদারিত্বে (পড়ুন আর্থিক সহায়তায়) এটির নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে নাসা।

বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে পাপড়ি মেলা ফুলের মত অবস্থান করছে এই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন টেলিস্কোপটি। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী দিনে মহাকাশের আরো ইতিহাস বা রহস্য এর মাধ্যমে প্রকাশিত হবে বলে আশা করা যায়…

সঙ্গে থাকুন ➥