সুখবর, OLED ডিসপ্লে সহ আসা ফোন বা কম্পিউটারের দাম কমবে, আবিষ্কৃত হল নতুন উপাদান

Avatar

Published on:

এখনকার স্মার্টফোন নির্মাতাদের অধিকাংশই তাদের প্রিমিয়াম ফোনে ওএলইডি (OLED) স্ক্রিন দিয়ে থাকেন, এবং এটিই হল ডিভাইসটির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম একটি মূল কারণ। নামী ব্র্যান্ডের কম্পিউটারেও এই একই স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে যে, বিজ্ঞানীরা এক অত্যাশ্চর্য উপাদান, গ্রাফিনের (Graphene) সন্ধান পেয়েছেন যা OLED-এর প্রতিস্থাপক (replacement) হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং এর ফলে স্মার্টফোন ও কম্পিউটারগুলিও গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সস্তায় উপলব্ধ হবে। Paragraf এবং লন্ডনের Queen Mary University-র গবেষকদের একটি নতুন গবেষণায় সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। গবেষণা চলাকালীন বিজ্ঞানীরা Indium (ইন্ডিয়াম)-কে সরাতে (রিপ্লেস) সক্ষম হয়েছেন, যা OLED প্যানেল তৈরিতে ব্যবহৃত বিরল ধাতুগুলির মধ্যে অন্যতম একটি।

নতুন রিসার্চটি Advanced Optical Materials জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেখানে ওএলইডি থেকে ইন্ডিয়ামকে রিপ্লেস করার এই কার্যকর উপায়টি সম্পর্কে বিশদে ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। ইন্ডিয়াম পৃথিবীর ভূত্বকের নয়টি বিরলতম তথা দুর্লভ উপাদানের মধ্যে একটি। উপাদানটি ওএলইডি টাচ স্ক্রিন এবং অন্যান্য প্যানেল উৎপাদনে একটি মূল ভূমিকা পালন করে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়াম টিন অক্সাইড বা আইটিও (ITO) আকারে ব্যবহৃত হয়। মোবাইল এবং কম্পিউটারের টাচ প্যানেল ছাড়াও ইন্ডিয়াম টিভি, সোলার প্যানেল এবং এমনকি এলইডি লাইটেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

সীমিত প্রাপ্যতার কারণে, অতীতেও ওএলইডি থেকে ইন্ডিয়ামকে রিপ্লেস করার অনেক প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তবে ইন্ডিয়ামের বদলে অন্য কোনো উপকরণ ব্যবহার করে একই রকম আউটপুট পাওয়া যাবে, এরকম কোনো জিনিস এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সম্ভবপর হয়নি। তবে এখন Paragraf এবং Queen Mary-র অধ্যাপক কলিন হামফ্রেস (Colin Humphreys) জানিয়েছেন যে, নতুন রিসার্চ পেপারটি “বিশ্বের প্রথম” যা গ্রাফিনকে আইটিও-র একটি কার্যকর প্রতিস্থাপক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি এবং তাঁর টিমের রিসার্চে দেখা গেছে যে, গ্রাফিন-ভিত্তিক ওএলইডি একটি আইটিও-ওএলইডির অনুরূপ পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম।

এই আবিষ্কারের পর থেকে গ্রাফিনকে অনেকে বিস্ময়কর উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করেছেন। এটি কার্বন পরমাণুর একটি মাত্র স্তর নিয়ে গঠিত এবং এটির মৌচাক আকৃতির কাঠামোর (honeycomb structure) কারণে বর্তমানে এটি পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী উপকরণ (strongest material) হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ নমনীয় (flexible), তাই প্রয়োজনমতো একে যে কোনো আকারে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এটি তামার চেয়ে বেশি পরিবাহী (conductive)।

এখন পর্যন্তও মূলধারার ইলেকট্রনিক্স প্রস্তুতিতে Graphene-এর ব্যবহারের কোনো পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে যদি এই নতুন রিসার্চটি টেক মেজরদের দ্বারা যথার্থ এবং যুক্তিযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে সাম্প্রতিক গবেষণাটি সত্যিই অত্যাধুনিক তথা সস্তা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে। যদিও নিত্যপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নির্মাণের ক্ষেত্রে এটির প্রয়োগ হতে এখনও বেশ কিছুটা সময়ের প্রয়োজন, কিন্তু এটি ব্যবহার করলে এতদিন পর্যন্ত OLED প্যানেল সহ আসা স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারগুলি যে ক্রেতারা সস্তায় পেতে সক্ষম হবেন, সেকথা নিঃসন্দেহে এবং নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

সঙ্গে থাকুন ➥