ই-সিগারেট কি মানুষকে ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে? ধারণা বদলে দিল গবেষণা

Avatar

Published on:

বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ই-শব্দের প্রচলন ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ই-কমার্স শপিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক, ই-কার্ড থেকে শুরু করে হালফিলে করোনা পরিস্থিতির দরুন দূরবর্তী পঠনপাঠন জনিত কারণে স্কুলগুলিও এখন ই-স্কুলের আকার নিয়েছে। এই ই-শাব্দিক পরিবেশে আর এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হল ই-সিগারেট (e-cigarette)। ধূমপান যে স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর তা আমাদের সকলেরই জানা, কিন্তু তবুও যেন এই নেশা থেকে দূরে থাকতে বহু মানুষই অপারগ। তাই সেক্ষেত্রে ধূমপান এড়িয়ে চলতে অনেকেই ই-সিগারেটের সাহায্য নিয়ে থাকেন, এবং এতদিন পর্যন্ত ধারণা ছিল যে ই-সিগারেট নাকি মানুষকে ধূমপান করা থেকে বিরত রাখে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে যে, এই কথাটি ডাহা মিথ্যে! আসল ব্যাপারটা ঠিক কী, তাহলে চলুন একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

পৃথিবীর অনেক জায়গায় বেশ প্রচলিত শব্দ হলেও অনেকের কাছেই এখনও ই-সিগারেট টার্মটি অজানা। যারা জানেন না তাদেরকে বলে রাখি, ই-সিগারেট একটি ব্যাটারি চালিত ডিভাইস যা এরোসোল তৈরি করার জন্য একটি হেটেরোজেনাস লিকুইডকে গরম করে। এই লিকুইডটি নিকোটিন, বিভিন্ন ফ্লেভার এবং অন্যান্য নানা রাসায়নিক দিয়ে তৈরি। এই এরোসোলটি সিগারেট খাওয়ার বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। ই-সিগারেট সেবন করাকে “ভ্যাপিং” (Vaping) বলা হয়ে থাকে।

এতদিন পর্যন্ত মানুষের মনে একটা ধারণা ছিল যে, ধূমপায়ীরা ধূমপান ছাড়তে না পারলে তারা অনায়াসে পুরোপুরিভাবে ই-সিগারেটে স্যুইচ করতে পারেন। অর্থাৎ খুব সহজ ভাষায় বললে, ই-সিগারেট মানুষকে ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করবে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of California San Diego) হার্বার্ট ওয়ের্টহেইম স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান লংজিভিটি সায়েন্স (Herbert Wertheim School of Public Health and Human Longevity Science) এবং ইউসি সান দিয়েগো হেলথের মুরস ক্যান্সার সেন্টার ( UC San Diego Moores Cancer Center) কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণায় জানা গেছে যে, এই ধারণা সঠিক নয়। JAMA Network Open-এর ১৯ অক্টোবরের অনলাইন সংখ্যায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই কথা প্রকাশ্যে এসেছে।

হার্বার্ট ওয়ের্টহেইম স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান লংজিভিটি সায়েন্স এবং ইউসি সান দিয়েগো হেলথের মুরস ক্যান্সার সেন্টার-এর বিশিষ্ট অধ্যাপক ডঃ জন পি পিয়ার্স (Dr. John P. Pierce) জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা সমস্ত তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছেন, তাদের তুলনায় যে সকল ব্যক্তিরা ধূমপান ছেড়ে ই-সিগারেট বা অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের দিকে ঝুঁকেছিলেন, তাদের আগামী বছরে আবার পুনরায় নিয়মিত ধূমপায়ী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৮.৫ শতাংশ বেশি। ফলে ই-সিগারেট যে মানুষকে ধূমপান করা থেকে বিরত রাখবে এমন ধারণা মোটেই সত্যি নয়।

বিভিন্ন মানুষ কর্তৃক তামাকের ব্যবহার এবং তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মূল্যায়ন সংক্রান্ত Population Assessment of Tobacco and Health (PATH) longitudinal study থেকে এই গবেষণার যাবতীয় তথ্য নেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ অ্যাবিউজ এবং ইউএস এফডিএ-র সেন্টার ফর টোব্যাকো প্রোডাক্টস এই স্টাডিটি করেছে। এর জন্য গবেষক দলটি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৩,৬০৪ জন ধূমপায়ীকে পর্যবেক্ষণ করেছে। ১২ টি তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে করা পরপর দুটি অ্যানুয়াল সার্ভের মাধ্যমে তারা এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছেন।

প্রথম বার্ষিক ফলোআপে দেখা যায় যে, ৯.৪ শতাংশ ধূমপায়ী সিগারেট ছেড়ে দেয়। এই “প্রাক্তন ধূমপায়ীদের” মধ্যে ৬২.৯ শতাংশ ব্যক্তি তামাক ছেড়ে দেয় এবং ৩৭.১ শতাংশ তামাকের বিকল্প অন্যান্য প্রোডাক্টের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এর মধ্যে ২২.৮ শতাংশ ই-সিগারেটে স্যুইচ করেছে বলে দেখা যায়। এরপর দ্বিতীয় বার্ষিক ফলোআপে, গবেষকরা তামাক ছেড়ে দেওয়া ধূমপায়ীদের এবং ই-সিগারেটে স্যুইচ করা ব্যক্তিদের মধ্যে তুলনা করেন এবং সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ই-সিগারেট ভ্যাপারদের আবার নিয়মিত ধূমপায়ী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৮.৫ শতাংশ বেশি। তবে গবেষকদের মতে, ই-সিগারেট ভ্যাপাররা অবশ্য আবার ধূমপান ছেড়ে গড়ে তিন মাসের জন্য সিগারেট বন্ধ রাখার চেষ্টা করবে। ই-সিগারেটকে কেন্দ্র করে এটিই প্রথম এই ধরনের রিসার্চ বলে গবেষকরা দাবি করেছেন। সিগারেটের হাত থেকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ পাওয়া যে বেশ ভালোরকম কষ্টকর, তা এই গবেষণা থেকেই নিঃসন্দেহে বলা বাহুল্য।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥