বিরাট সস্তায় 5G ফোন আনছে Poco, কপি স্ট্রাটেজিতে ফের বাজিমাত করবে?

বর্তমানে ‘অ্যাফোর্ডেবল’ রেঞ্জের স্মার্টফোন আনার জন্য ব্র্যান্ডগুলি ভারতের টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির সাথে হাত মেলাচ্ছে। ভাবছেন টেলিকম সংস্থার সাথে স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থার এই অংশীদারিত্বের কারণ কী? আসলে ডিভাইস লঞ্চের আগে টেলকোগুলির সাথে যুক্ত হওয়ার দরুন, টেক ব্র্যান্ডগুলি যেমন কম দামি হ্যান্ডসেট আনতে সক্ষম হয় তেমনি টেলিযোগাযোগ পরিষেবা অফারকারী সংস্থাগুলি তাদের রিচার্জ প্যাক বান্ডিল হিসাবে অফার করে ফায়দা উঠিয়ে থাকে। এবার এই অনুরূপ মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি অনুসরণ করতে চলেছে Poco India। উক্ত ব্র্যান্ডটি স্বয়ং জানিয়েছে যে, তারা ভারতীয় টেলিকম অপারেটরদের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে ভারতে কম দামি 5G ফোন আনার জন্য। যদিও এখুনি নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সংস্থাটি। তবে সত্যি যদি এমন কিছু বাস্তবায়িত হয় ভবিষ্যতে, তাহলে তা এদেশে 5G কানেক্টিভিটির দ্রুত প্রসারে যথেষ্ট অবদান রাখবে।

এই বিষয়ে পোকো ইন্ডিয়ার কান্ট্রি হেড হিমাংশু ট্যান্ডন একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে – “আমরা এদেশের একটি টেলিকম অপারেটরের সাথে অংশীদারিত্ব করার কথা ভাবছি এবং একই সাথে এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কিভাবে একটি ৫জি রিচার্জ প্ল্যান বান্ডিল করে ৫জি ফোনগুলিকে আরও সাশ্রয়ী মূল্যে লঞ্চ করা যায় সেই পন্থাও অন্বেষণ করছি।”

কত দিনের মধ্যে বান্ডিল প্ল্যান সহ নতুন ৫জি-কানেক্টিভিটির পোকো ফোনগুলি বাজারে আসবে তার কোনো টাইমলাইন দেননি হিমাংশু। তবে তিনি জানিয়েছেন যে, সাশ্রয়ী মূল্যের ৫জি ফোনের রোলআউট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে ৫জি ট্যারিফের উপর, যা এখনও পাবলিক হয়নি। টেলিকম পরিষেবা সরবরাহকারী সংস্থাগুলি বর্তমানে তাদের সময়সূচী অনুসারে ভারতের বড় শহরগুলিতে যতটা শীঘ্র সম্ভব ৫জি টাওয়ার মোতায়েন করার চেষ্টা করছে। আর মনে করা হচ্ছে, সারা দেশ জুড়ে ৫জি রোলআউটের পরেই ৫জি সার্ভিসের জন্য ট্যারিফ প্ল্যানগুলি ঘোষণা করা হবে৷ এক কথায় বললে, প্রক্রিয়াটি একটু সময়সাপেক্ষ।

হিমাংশুর বিবৃতি অনুসারে – “টেলিকম সংস্থাগুলির ৫জি নেটওয়ার্ক বন্টন এবং ৫জি অ্যাডপশনের সম্পূর্ণ প্ল্যান এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। একবার এই প্ল্যান পাবলিক হয়ে গেলে আমরাও সামনাসামনি ৫জি ফোন লঞ্চের বিষয় কথা বলতে পারবো।” একই সাথে “আমাদের টেলিকম সংস্থার সাথে অংশীদারিত্ব মূলত এদেশে ৫জি অ্যাডপশনকে আরো ত্বরান্বিত করবে” এমনটাও বিশ্বাস রাখছেন পোকো ইন্ডিয়ার এই কর্মকর্তা।

সাশ্রয়ী মূল্যের 5G স্মার্টফোন লঞ্চের জন্য আপস করা হচ্ছে ফিচারের সঙ্গে

শাওমি (Xiaomi) সংস্থার ছত্রছায়ায় থেকে বেরিয়ে এসে, তুলনায় কম দামে দুর্দান্ত স্পেসিফিকেশনের সাথে স্মার্টফোন অফার করে কিছু সময়ের মধ্যে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে পোকো। এমনকি ভারতে ৫জি স্মার্টফোন লঞ্চ করা প্রথম ব্র্যান্ডগুলির মধ্যেও এটি একটি ছিল। আর এখন সংস্থাটি টেলিকম অপারেটরদের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের ফ্যান বেসের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের ৫জি হ্যান্ডসেট আনয়নের পরিকল্পনা করছে।

সম্প্রতি ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫জি-নেটওয়ার্ক লঞ্চ হওয়ার পর, খুবই কম সময়ের মধ্যেই দেশের ১৩টি বড় শহরের বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই এই নব্য-প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অভিজ্ঞতা পেয়ে গেছেন। পরবর্তীতে দেশের আরো বিভিন্ন স্থানে ৫জি টাওয়ার বসানো হবে। ফলে দেশবাসীর মধ্যে ৫জি হ্যান্ডসেট ব্যবহারের চাহিদা দিনকেদিন বাড়ছে। আর এই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করতে চায় পোকো। ব্র্যান্ডটি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সাশ্রয়ী মূল্যের ৫জি ফোন লঞ্চ করে ‘রাইভেল’ সংস্থাগুলির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে। কিন্তু দেশী-বিদেশী কয়েকটি সংস্থা হালফিলে ১০,০০০ টাকার প্রাইজ-রেঞ্জে স্মার্টফোন এনে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে পোকোর দিকে। এক্ষেত্রে সংস্থাটির মত, ‘লো কস্টিং’ ৫জি হ্যান্ডসেট তৈরী করা কঠিন কাজ হবে, বিশেষত কম্পোনেন্টের দাম যেখানে ক্রমবর্ধমান উর্দ্ধমুখী হচ্ছে।

৫জি ফোনগুলি কমপক্ষে আরও কয়েক মাসের জন্য ৪জি হ্যান্ডসেটের চেয়ে কিছুটা বেশি ব্যয়বহুল কেন থাকবে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হিমাংশু ট্যান্ডন বলেছেন – “একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ট্যাক্স দিয়ে থাকি আমরা। এটা অনেকটা ৫জি ট্যাক্সের মতো মনে হচ্ছে, যা আমাদের চিপসেটের জন্য দিতে হবে।” বর্তমানে আপনি ভারতের বাজারে ১১,০০০ টাকার কমে একের অধিক ৫জি ফোন পেয়ে যাবেন। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেগুলিতে স্পেসিফিকেশন এবং ফিচারের দিক থেকে আপস করা হয়েছে, যা ইউজার এক্সপিরিয়েন্সকে প্রভাবিত করে। তাই আপনি যদি একটি ভাল মানের ৫জি ফোন ব্যবহার করতে চান, তবে কমপক্ষে ১৫,০০০ টাকা বা তার অধিক খরচ করতেই হবে৷

যদিও মার্কেটের বাস্তব অবস্থা বলছে, বেশিরভাগ ক্রেতা ৫জি-রেডি ফোন কেনার জন্য ফিচারের দিক থেকে আপোষ করতে রাজি আছেন। অর্থাৎ ২০,০০০ টাকা দিয়ে ফিচারে ভরপুর একটি ৪জি মোবাইল থেকে কমতি ফিচারের সাথে আসা একটি ২০,০০০ টাকা দামের ৫জি-এনাবল ফোন কিনতে অধিক পছন্দ করছেন অধিকাংশ মানুষ। চাহিদা বাড়ার কারণে গত ৬ মাসের মধ্যে ৫জি ফোনের দাম নূন্যতম ২০,০০০ টাকা থেকে কমে ১৫,০০০ টাকা হয়ে গেছে। আগামী ৪-৫ মাসের ভিতরে দামের সূচক ১২,০০০ টাকায় নেমে এলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমনটা হলে বুঝতে হবে “ভারতে ৫জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে” বলে মত পোষণ করেছেন হিমাংশু।

প্যান ইন্ডিয়া ভিত্তিক 5G নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে টেলিকম সংস্থাগুলি

৫জি স্মার্টফোনের দাম কমার ক্ষেত্রে, দেশবাসী কতটা এই নব্য প্রজন্মের নেটওয়ার্কিং পরিষেবা গ্রহনের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন তা বিচার্য বিষয় হবে। কেননা যত দ্রুত মানুষ এই নয়া নেটওয়ার্ককে গ্রহণ করবেন, তত সস্তা হবে ৫জি ফোনে দাম। এক্ষেত্রে ৫জি -এর দ্রুত সম্প্রসারণ নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের উপর, প্রথমত – ডিভাইসগুলিতে ইজি অ্যাক্সেস এবং দ্বিতীয়ত – এমন রিচার্জ প্ল্যান যা জনসাধারণের সামর্থ্যের আওতায় আসে। ট্যান্ডনের বিশ্বাস, ট্যারিফ প্ল্যানগুলি ৫জি অ্যাডপশনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কেননা ৪জি রিচার্জ প্ল্যানের থেকে যদি ৫জি রিচার্জ প্যাকের দাম অনেকটা বেশি হয়, তবে সম্ভাবনা আছে মানুষ আবার ৪জি ফোনে সুইচ করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *