ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে ১৮ লাখ অ্যাকাউন্ট ব্যান করল WhatsApp
শতাধিকবার সাবধান করার পাশাপাশি বারংবার জোরালো তথা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও অসৎ কার্যকলাপ করা থেকে কিছু ইউজারদেরকে কোনোমতেই আর আটকানো যাচ্ছে না, আর এর ফলস্বরূপ বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম WhatsApp (হোয়াটসঅ্যাপ)-ও ক্রমেই কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সংস্থাটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে আবারও ১.৮৫ মিলিয়নেরও (সাড়ে ১৮ লাখ) বেশি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে। আইটি রুলস ২০২১ অনুযায়ী, কোম্পানিটি তার দশম ইউজার সেফটি মাসিক রিপোর্ট (User Safety Monthly Report) প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ভারতের আইন বা WhatsApp-এর পরিষেবার শর্তাবলী (WhatsApp's Terms of Service) লঙ্ঘনের জন্য মেটা (Meta) মালিকানাধীন অ্যাপটি তার প্রতিরোধ এবং সনাক্তকরণ পদ্ধতির (prevention and detection methods) মাধ্যমে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তি (মধ্যস্থতাকারী নির্দেশিকা এবং ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) বিধিমালা, ২০২১-এর বিধি ৪ (১) (ডি)-এর অধীনে লেটেস্ট হোয়াটসঅ্যাপ ইন্ডিয়ার মাসিক রিপোর্টে ১ মার্চ, ২০২২ থেকে ৩১ মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় তথ্যের বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি মার্চ মাসে মোট ৫৯৭ টি অভিযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ১১২ টি অ্যাকাউন্ট সাপোর্ট সম্পর্কিত, ৪০৭ টি নিষেধাজ্ঞার আবেদন, ৩৭ টি প্রোডাক্ট সাপোর্ট সম্পর্কিত, অন্যান্য সাপোর্ট সম্পর্কিত ২৮ টি রিপোর্ট, এবং ১৩ টি সেফটি রিকোয়েস্ট। এই অভিযোগগুলির উপর ভিত্তি করে ৭৪টি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আবেদনের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি যে, ব্যবহারকারীরা তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানিয়ে grievance_officer wa@support.whatsapp.com-এ মেইল বা ডাকযোগে ইন্ডিয়া গ্রিভান্স অফিসারকে (India Grievance Officer) চিঠি পাঠাতে পারেন। উল্লেখ্য যে, হোয়াটসঅ্যাপের তরফে সকল ইউজারদেরকে সতর্ক করে বারংবার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে যে, এই প্ল্যাটফর্মে কোনো ধরনের অসৎ কার্যকলাপ কিংবা দুরাচরণ সংস্থার তরফে বরদাস্ত করা হবে না। ক্ষতিকারক কার্যকলাপ বলতে মূলত স্প্যাম মেসেজ আদান-প্রদান, ভুয়ো অ্যাকাউন্ট পরিচালনা, হোয়াটসঅ্যাপের নিয়মাবলীর লঙ্ঘন, ইত্যাদিকে বোঝানো হয়। যদি কোনো ইউজার এই জাতীয় কাজ প্ল্যাটফর্মে করছে বলে সংস্থাটির কাছে খবর যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট ইউজারের অ্যাকাউন্টকে ব্যান করা হবে। কিন্তু একাধিকবার সাবধানবাণী দেওয়া সত্ত্বেও কিছু ইউজারকে কোনোমতেই রোখা যাচ্ছে না। আর এর ফলস্বরূপ ইউজারদের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে হোয়াটসঅ্যাপ ক্রমাগত ভারতে লক্ষ লক্ষ অ্যাকাউন্ট ব্যান করে চলেছে। উল্লেখ্য যে, গত ফেব্রুয়ারিতে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছিল।
অ্যাকাউন্ট ব্যানের প্রসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে যে, ইউজারদের যাবতীয় ক্ষতিকারক আচরণ রোধ করার জন্য সংস্থার কাছে নিজস্ব টুল এবং রিসোর্স রয়েছে, এবং এর মাধ্যমে সনাক্ত করা অ্যাকাউন্টগুলিকেই তারা ব্যান করে। কোনো অ্যাকাউন্টে রেজিস্ট্রেশনের সময়, কিংবা মেসেজিং চলাকালীন, অথবা নেগেটিভ ফিডব্যাকের রেসপন্স দেওয়ার সময় এই টুলগুলি যাবতীয় অসৎ ক্রিয়াকলাপ চিহ্নিত করতে যথেষ্ট পটু। সুতরাং, সকল ব্যবহারকারীদের এক নিরাপদ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করার লক্ষ্যে সংস্থাটি যেভাবে কোমর বেঁধে উঠেপড়ে লেগেছে, তাতে ভবিষ্যতেও এই প্ল্যাটফর্মটিতে কোনোরকমের দুরাচরণ বা দুর্ব্যবহার যে সংস্থার তরফ থেকে বরদাস্ত করা হবে না, তা একেবারে জলের মতো স্পষ্ট।