বাড়ছে মোবাইল ফোনের বিল, নতুন বছরে রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়াচ্ছে Jio, Airtel, Vi
নতুন বছর নিজের সাথে একাধিক পরিবর্তন নিয়ে আসে, আর এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভারতীয় টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে যে পরিবর্তন আসার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তা গ্রাহকদের খুব একটা মনঃপূত হবে না বলেই আমাদের অনুমান। কেননা ২০২৩ সালের আগমনের সাথে Jio এবং Airtel -এর মতো ভারতের প্রথমসারির টেলিকম সংস্থাগুলি ফের তাদের প্রিপেইড ও পোস্টপেইড রিচার্জ প্ল্যানগুলির ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধির পথে হাঁটতে পারে। মূলত রেভেনিউ এবং প্রফিট মার্জিন বাড়ানোর তাগিদেই গ্রাহকের কাঁধে অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষত গত নভেম্বরেই যেখানে ট্যারিফ প্ল্যানের দাম ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে মাত্র ১ মাসের ভিতরে আরো একবার এরূপ ভাবনা অন্তত এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। নতুন বছরে মুকেশ আম্বানি ও সুনীল ভারতী মিত্তল পরিচালিত টেলিকম জায়ান্ট দুটি তাদের বিদ্যমান রিচার্জ প্ল্যানগুলির দাম ১০% বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বলে খবর সামনে এসেছে।
প্রিপেইড ও পোস্টপেইড প্ল্যান অধিক ব্যয়বহুল হতে চলেছে
স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং ইকোনমিস্ট প্রদানকারী কোম্পানি জেফেরিস (Jefferies) এর বিশ্লেষকরা বলেছেন - রিলায়েন্স জিও এবং এয়ারটেল সহ অন্যান্য ভারতীয় টেলিকম অপারেটররা আগামী ৩ বছর অর্থাৎ 'অর্থবর্ষ ২০২৩' (FY23), 'অর্থবর্ষ ২০২৪' (FY24) এবং 'অর্থবর্ষ ২০২৫' (FY25) -এর চতুর্থ কোয়ার্টারে তাদের রিচার্জ প্ল্যানের ট্যারিফ মূল্য ১০% বৃদ্ধির করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার অর্থ, প্রত্যেক মোবাইল ব্যবহারকারীদের আগামী ৩ বছর ধরে প্রতি চতুর্থ ত্রৈমাসিকের পর থেকে অধিক অর্থ প্রদান করে প্রিপেইড বা পোস্টপেইড প্ল্যান খরিদ করতে হবে।
তাদের দাবি, রেভেনিউ এবং প্রফিট মার্জিনের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ আসায় 'অ্যাভারেজ রেভেনিউ পার ইউজার' বা ARPU উন্নত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে টেলিকম অপারেটর সংস্থাগুলি। আর এই উদ্দেশ্যকে পূরণ করতেই মূলত এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া এবং রিলায়েন্স জিও হয়তো আগামী বছর তাদের ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, Airtel ইতিমধ্যেই তাদের কয়েকটি বিদ্যমান রিচার্জ প্ল্যানের ট্যারিফ বাড়াতে শুরু করে দিয়েছে। এছাড়াও, টেলিকম সংস্থাটি তাদের স্বল্পমেয়াদী ৯৯ টাকার প্ল্যান সহ আরো বেশ কিছু সস্তার রিচার্জ প্যাককে সম্প্রতি পোর্টফোলিও থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আলোচ্য সাশ্রয়ী মূল্যের প্রিপেইড প্ল্যানগুলিকে মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে চালু করা হয়েছিল। যার মধ্যে সামিল ছিল - ছত্তিশগড়, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশ। এই সকল নির্বাচিত সার্কেলের গ্রাহকেরা ৯৯ টাকার প্রিপেইড প্ল্যানের অধীনে - ১ জিবি ইন্টারনেট ডেটা, ১০০টি এসএমএস, এয়ারটেল এক্সস্ট্রিম (Airtel Xstream), উইঙ্ক মিউজিক (Wynk Music) এবং জি৫ (Zee5) প্রিমিয়াম ওটিটি অ্যাপের অ্যাক্সেস পেয়ে যেতেন পুরো ১৮ দিনের জন্য। যাইহোক, এই সস্তার প্ল্যানে কম প্রফিট মার্জিন থাকার দরুন এয়ারটেল প্ল্যানটি বাতিল করে দিয়েছে। পরিবর্তে, ১৫৫ টাকার প্ল্যান আনা হয়েছে।
তদুপরি, যেকোনো সংস্থা আয় অনেকাংশেই নির্ভর করে গ্রাহকদের ওপর। এক্ষেত্রে গত কয়েক মাসের মধ্যে, Airtel এবং Jio, উভয় সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। ফলে এখন কার গ্রাহক সর্বাধিক এই প্রতিযোগিতায় নেমে উক্ত দুটি টেলিকম সংস্থাই যেন-তেন প্রকারেন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা প্রতি মুহূর্তে চালিয়ে যাচ্ছে।
যদিও Vodafone Idea এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতা থেকে বাইরে আছে বললেই ভালো হয়। কেননা গত ২ বছর ধরে আলোচ্য সংস্থাটির গ্রাহক সংখ্যা ক্রমাগত নিম্নগামী হচ্ছে। ৪জি রিচার্জ প্ল্যান আনার ক্ষেত্রে সংস্থাটি আমাদের সন্তুষ্টি প্রদান করেছে। কিন্তু কতদিনের মধ্যে ৫তম সেলুলার মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু করবে সেই বিষয়ে কোনও স্পষ্টতা না দেওয়াতে, সংস্থার হাত ছেড়ে দলে দলে গ্রাহকেরা Jio ও Airtel এর সাথে যুক্ত হচ্ছেন। কেননা মুকেশ আম্বানি ও সুনীল ভারতী মিত্তলের টেলিকম সংস্থা ইতিমধ্যেই দেশের বেশ কয়েকটি বড় শহরে ৫জি পরিষেবা চালু করে দিয়েছে এবং আগামী ১-২ বছরের মধ্যে প্যান ইন্ডিয়া ভিত্তিক ৫জি নেটওয়ার্ক রোলআউট করার লক্ষ্যে বর্তমানে কাজ করছে।