Mobile SIM | ফিরে আসতে পারে পুরানো স্মৃতি, উঠে যেতে পারে ডুয়েল সিম ব্যবহারের রীতি
চলতি সময়ে মোবাইল রিচার্জ প্ল্যান ছাড়া দিন গুজরান করা কার্যত অসম্ভব বললেই চলে। সারাদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করার পাশাপাশি চাইলেই যাতে অন্যদের সঙ্গে খুব সহজেই যোগাযোগ রাখা যায়, তাই অনেকেই ফোনে দুটি সিম কার্ড ব্যবহার করেন। উল্লেখ্য যে, আগেকার ফোনে মাত্র একটি সিম স্লট থাকতো; কিন্তু এখন ইউজারদের প্রয়োজনের খাতিরে স্লটের সংখ্যা বাড়িয়ে দুটি করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে ডুয়েল-সিম কানেক্টিভিটি সহ আসা মোবাইলই অধিকাংশ মানুষের হাতে দেখা যায়। একটা সময়ে যেহেতু কোনো-একটি সিম সচল রাখতে প্রতি মাসে রিচার্জ করার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না, ঠিক সেই কারণেই ডুয়েল সিম বা সেকেন্ডারি সিম ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন ইউজাররা। বছরখানেক আগে পর্যন্ত রিচার্জ প্ল্যানের দাম কম থাকায় ব্যবহারকারীরা অতি অনায়াসে একাধিক সিম ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমূল পাল্টে গিয়েছে। হালফিলে রিচার্জ প্ল্যানের দাম এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, একসাথে দুটি সিমকে চালু রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের। বিশেষজ্ঞদের দাবি অনুযায়ী, আগামী দিনে রিচার্জ প্ল্যানের দাম এতটাই বেড়ে যাবে যে, দুটি সিম রাখার প্রচলন পুরোপুরিভাবে শেষ হয়ে যাবে বলেই ধরে নেওয়া যায়! কিন্তু বিদ্বজনেদের এই মত পোষণ করার পিছনে ঠিক কারণটা কী? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
অদূর ভবিষ্যতে সব টেলিকম কোম্পানিই নিশ্চিতভাবে প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়াবে
উল্লেখ্য যে, গত বছরের শেষের দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় তিনটি বেসরকারি কোম্পানি (Reliance Jio, Airtel, এবং Vodafone Idea বা Vi) তাদের প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানগুলির দাম ২০%-২৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে আমজনতার পকেটে বেশ খানিকটা চাপ সৃষ্টি করেছে। তদুপরি, এ বছরের শুরু থেকেই মার্কেটে গুঞ্জন রটেছিল যে, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে আরও একবার প্ল্যানের দাম বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই দুটি সার্কেলে ট্যারিফ বৃদ্ধি করে সেই আশঙ্কাকে নিশ্চিত করেছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর Airtel। হালফিলে হরিয়ানা এবং ওড়িশায় ন্যূনতম প্ল্যানের দাম একলাফে ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি, যার ফলে এই দুই রাজ্যেই Airtel-এর সবথেকে সস্তা ২৮ দিনের প্ল্যানের দাম ৯৯ টাকা থেকে বেড়ে একধাক্কায় হয়ে গিয়েছে ১৫৫ টাকা। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তীকালে অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দাদের মাথায়ও বাজ পড়ার সম্ভাবনা যে প্রবল, সেকথা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তাই নয়, নিজেদের ট্যারিফ প্ল্যানের দাম বাড়িয়ে Reliance Jio এবং Vodafone Idea-কে আগামী দিনে প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে Airtel; কারণ একটি কোম্পানি দাম বাড়ালেই অন্যরাও তালে তাল মিলিয়ে তাদের প্ল্যানের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। তাই আগামী দিনে Jio এবং Vi-এর প্ল্যানের দামও নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।
5G-র আগমন ঘটে যাওয়ায় আগামী দিনে 4G প্ল্যানের দাম বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ (ICICI Securities) সম্প্রতি এক রিপোর্টে জানিয়েছে, যদিও এমনিতে ভারতের সমস্ত টেলিকম অপারেটররাই ইউজারদেরকে সাশ্রয়ী মূল্যে একাধিক রিচার্জ প্ল্যান অফার করে থাকে, কিন্তু বর্তমান সময়ে চূড়ান্ত রকমের অর্থনৈতিক মন্দার জেরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্ল্যানের দাম বাড়াতে হচ্ছে কোম্পানিগুলিকে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ইতিমধ্যেই দেশের নির্বাচিত কিছু শহরে ৫জি (5G) পরিষেবা রোলআউট করেছে রিলায়েন্স জিও ও এয়ারটেল; আর কিছুদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে ৫জি রিচার্জ প্ল্যানও লঞ্চ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে এমত পরিস্থিতিতে আগামী দিনে ৪জি (4G) প্ল্যানের দাম বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই গত ১০ বছরে প্ল্যানের দামে উল্লেখযোগ্য ওঠাপড়া চোখে না পড়লেও আগামী দিনে রিচার্জ প্ল্যানের আরও একাধিক মূল্যবৃদ্ধির সাক্ষী হতে পারেন গ্রাহকরা। ফলে একথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য যে, রিচার্জ করতে গেলে অদূর ভবিষ্যতে আমজনতার পকেটে বেশ ভালোরকম চাপ পড়বে, আর সেই কারণেই সেকেন্ডারি সিম ব্যবহারের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল হওয়ায় নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধির খাতিরে প্ল্যানের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে টেলিকম কোম্পানিগুলি
আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, মূলত গ্রাহক পিছু গড় আয় বা এআরপিইউ (ARPU) বৃদ্ধির লক্ষ্যেই গত বছর অপারেটররা প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়িয়েছিল। কারণ টেলিকম সংস্থাগুলির মতে, শিল্পের জন্য নেটওয়ার্ক এবং স্পেকট্রামে বিনিয়োগ করতে হলে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর এআরপিইউ বাড়াতেই হবে; তাই ইউজারদেরকে যথাযথ পরিষেবা দিতে গেলে রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়ানো একান্ত আবশ্যক। সেজন্য এ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে অন্ততপক্ষে ৫ শতাংশ এআরপিইউ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে টেলিকম সংস্থাগুলি। এর ফলস্বরূপ চলতি অর্থবর্ষে তিনটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির আয় ২০-২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধির খাতিরে আগামী দিনে প্রত্যেকটি টেলিকম অপারেটরই নিশ্চিতভাবে তাদের প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার জেরে সেকেন্ডারি সিম সক্রিয় রাখা ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। আর দীর্ঘদিন ধরে যদি এমনটা চলতে থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে সেকেন্ডারি সিম ব্যবহারের প্রবণতা মানুষের মন থেকে পুরোপুরিভাবে দূর হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার কিছু সংখ্যক বিদ্বজনের মতে, নিজেদের সুবিধার খাতিরে ভবিষ্যতে বাড়তি রিচার্জ প্ল্যানের দামের সঙ্গে হয়তো নিজেদেরকে মানিয়ে নেবেন ইউজাররা (যেমনটা এতদিন ধরে হয়ে আসছে)। সেক্ষেত্রে বাস্তবিকভাবে আগামী দিনে ছবিটা ঠিক কী দাঁড়াবে, সেটা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।