Cyber Crime: মোবাইল ব্যবহারকারীরা সাবধান, ফোন হ্যাক করে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতালো হ্যাকাররা
বর্তমান যুগে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় প্রায় সমস্ত সার্ভিসই অনলাইন নির্ভর হয়ে গিয়েছে, আর এর সুবাদে অপরাধ দুনিয়াতে ঘটনার ঘনঘটাও বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন। চলতি সময়ে গোটা দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান সাইবার জালিয়াতির (Cyber Fraud) জেরে আপামর জনগণ রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গিয়েছেন, কারণ সামান্য কিছু ভুলচুক হয়ে গেলেই সারা জীবনের কষ্টার্জিত টাকা এক নিমেষেই খোয়া যাবে। হ্যাকারদের মস্তিষ্কপ্রসূত নিত্যনতুন ফন্দিফিকিরের সৌজন্যে এখন ইউজারদের অজান্তেই হ্যাক হচ্ছে তাদের ডিভাইস, আর এই পদ্ধতিতে সহজসরল সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই খবরের শিরোনামে চোখে পড়ছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া এমনই একটি ভয়াবহ ঘটনার খবর সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে যে, এক ব্যবসায়ীর স্মার্টফোন হ্যাক করে তার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৯৯.৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ফোন হ্যাক হয়ে যাওয়ায় প্রায় এক কোটি টাকা খোয়ালেন এক ব্যবসায়ী
পুলিশ জানিয়েছে যে, ৬-৭ নভেম্বরের মধ্যে এই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে এবং নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, হ্যাকারদের সুনিপুণ হস্তশৈলীর সুবাদে ওই ব্যবসায়ী ঘূণাক্ষরেও টের পাননি যে তিনি কতটা বড়োসড়ো লোকসানের মুখোমুখি হতে চলেছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এরপর ওই ব্যবসায়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ঘটছে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা
শুধু ওই ব্যবসায়ীই নয়, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে অনলাইনে মিষ্টি অর্ডার করতে গিয়ে এক মহিলার অ্যাকাউন্ট থেকে আড়াই লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, হালফিলে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি (NCRB) একটি রিপোর্টে বলেছে যে, চলতি সময়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের একাধিক সাইবার জালিয়াতির ঘটনা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছর উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গানার পাশাপাশি মহারাষ্ট্রেও সাইবার ক্রাইমের ঘটনা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে এও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চলতি বছরে দেশে অনলাইন জালিয়াতির ঘটনা বেড়েছে পাঁচ শতাংশ। ফলে ইউজারদের যে অবশ্যই এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যাওয়া একান্ত আবশ্যক, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।
মূলত কোন কোন পদ্ধতিতে ইউজারদেরকে সাইবার জালিয়াতির ফাঁদে ফেলছে হ্যাকাররা?
এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, মূলত সহজসরল সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিয়ে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করার ঘটনাই চলতি সময়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটছে। মোট সাইবার অপরাধের ৬০.৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই ধরনের জালিয়াতির ঘটনা (প্রায় ৩২,২৩০ টি মামলা) ঘটে। এছাড়া, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইউজারদের কোনো গোপন কিংবা স্পর্শকাতর ছবি অনলাইনে ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়েও তাদের কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয় স্ক্যামাররা। সেক্ষেত্রে চলতি সময়ে এদেশের রাজ্যগুলির সাইবার অপরাধের পরিসংখ্যানের কথা বলতে গেলে, তেলেঙ্গানায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জালিয়াতির ঘটনা দেখা গেছে (১০,৩০৩ টি)। এছাড়া, উত্তরপ্রদেশে ৮,৮২৯ জন, কর্ণাটকে ৮,১৩৬ জন, মহারাষ্ট্রে ৫,৫৬২ জন এবং আসামে ৪,৮৪৬ জন সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুরক্ষিত থাকতে চাইলে এই টিপসগুলি মেনে চলুন
যত দিন যাচ্ছে, গোটা দেশে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে চলতি সময়ে হ্যাকারদের আটকানোর যেহেতু কোনো উপায় নেই, তাই সুরক্ষিত এবং নিরাপদে থাকতে হলে ব্যবহারকারীদেরকেই যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে। সবসময় মনে রাখবেন, একটু বুঝে-শুনে পা ফেললেই কিন্তু হ্যাকারদেরকে অতি অনায়াসে পরাস্ত করা সম্ভব। চোখকান খোলা রাখার পাশাপাশি সাইবার জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচার কয়েকটি বেসিক নিয়ম মেনে চললেই বর্তমান ডিজিটাল যুগে একদম নিরাপদে দিন গুজরান করতে পারবেন ইউজাররা। নীচে ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে অনলাইন ক্রাইমের হাত থেকে বাঁচার বেসিক নিয়মগুলির (বা সাইবার জালিয়াতির ABCD) কথা উল্লেখ করা হল:
▪️যে-কোনো সাইবার জালিয়াতি এড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল - কোনো অজানা লিঙ্কে ক্লিক না করা। হ্যাকারদের পাতা ফাঁদে পা দিতে না চাইলে কখনো কোনো অজানা সোর্স থেকে পাওয়া লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
▪️আপনার ব্যাঙ্কিং ডিটেইলস, ওটিপি (OTP) এবং এটিএম (ATM) পাসওয়ার্ড কারোর সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
▪️নেট ব্যাঙ্কিং বা অন্যান্য নানাবিধ অ্যাপভিত্তিক ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সংক্রান্ত পাসওয়ার্ড কখনো কোনো বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
▪️বিনামূল্যে আকর্ষণীয় পুরস্কার বা উপহারের প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী কলগুলিকে একেবারেই কোনো পাত্তা দেবেন না। অর্থাৎ, কেউ যদি আচমকাই আপনাকে ফোন করে মোটা টাকা পুরস্কার দেওয়ার দাবি করে, তবে তাদেরকে নিজস্ব কোনো পার্সোনাল ডিটেইলস ভুলেও কখনো দিয়ে দেবেন না।
▪️যদি কেউ আপনাকে ফোন করে কোনো জরুরি পরিষেবা চালু রাখার জন্য কেওয়াইসি (KYC) আপডেট করার কথা বলে, তাহলে সেই কলগুলিকে অবশ্যই উপেক্ষা করুন।
▪️সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটে কোনো অবাঞ্ছিত ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে প্রাপ্ত অজানা কারোর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করার আগে দুবার ভেবে দেখুন।
▪️অজানা সোর্স থেকে আপনার কাছে আসা কোনো মেইল বা মেসেজের বানানগুলি অবশ্যই ভালো করে চেক করুন। কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, হ্যাকারদের পাঠানো এসএমএস কিংবা ইমেইলে অজস্র বানান ভুল থাকে। তাই এরকম কিছু গোলমাল চোখে পড়লেই বুঝে নিতে হবে যে, সেই মেসেজগুলি নির্ঘাত দুর্বৃত্তরাই পাঠিয়েছে।
▪️সুরক্ষার খাতিরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর আপনার পাসওয়ার্ডগুলিকে পরিবর্তন করতে থাকুন।