পরিবেশ বাঁচাতে নতুন উদ্যোগ Apple এর, সমস্ত ব্যাটারিতে থাকবে ১০০ শতাংশ রিসাইকেল কোবাল্ট
টেক জায়ান্ট অ্যাপল (Apple) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের প্রত্যেকটি প্রোডাক্টে পুনর্ব্যবহৃত (রিসাইকেল) ব্যাটারি ব্যবহার করা হবে৷ সংস্থাটি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের আইফোন ডিভাইসগুলিতে কিছু পুনর্ব্যবহৃত মেটেরিয়াল ব্যবহার করে আসছে৷ আর ২০৩০ সালের মধ্যে তারা সম্পূর্ণভাবে পুনর্ব্যবহৃত মেটেরিয়াল দিয়ে ডিভাইসগুলি আনতে চাইছে। আসলে পৃথিবীকে কার্বন মুক্ত করে তোলাই টেক জায়ান্টটির লক্ষ্য। তাই আগামী ২ বছরের মধ্যে তাদের প্রত্যেকটি ডিভাইসের ব্যাটারি ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত কোবাল্ট ব্যবহার করে তৈরি করা হবে।
অ্যাপল সংস্থার সিইও (CEO) টিম কুক টুইটারে জানিয়েছেন যে - তাদের ডিজাইন করা প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডে ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত টিন সোল্ডারিং এবং ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত গোল্ড প্লেটিং বা সোনার প্রলেপ ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে। এই বিষয়ে তিনি আরো মন্তব্য করেছেন যে - “আমাদের টিম প্রতিনিয়ত এমন প্রোডাক্ট উদ্ভাবন করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে, যা একদিন পৃথিবীর থেকে কিছুই নেবে না।" অর্থাৎ গ্যাজেটে ব্যবহৃত মেটেরিয়ালগুলিকে, পৃথিবীর বুক খনন করে নয় বরং ইতিমধ্যেই কার্বন ফুটপ্রিন্ট হিসাবে বিদ্যমান উপাদান দিয়ে তৈরী করা হবে। আর তাই জন্যই অ্যাপল, ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের প্রতিটি ডিভাইসের ব্যাটারিতে ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত কোবাল্ট ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আপনাদের অবগতের জন্য জানিয়ে রাখি, হাই-ক্যাপাসিটি এবং ভাল ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল পারফরম্যান্স প্রদানের কারণে বেশিরভাগ কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টের ব্যাটারিতে কোবাল্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিদ্যমান থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম না হওয়া বা ব্যাটারিতে আগুন না ধরাটাও নিশ্চিত করে কোবাল্ট নামক উপাদানটি, যা মূলত ব্যাটারিকে দীর্ঘায়ু প্রদান করে। বর্তমানে অ্যাপল ডিভাইসে ব্যবহৃত কোবাল্টের এক চতুর্থাংশ পুনর্ব্যবহৃত উপাদান দিয়ে নির্মিত। তবে ডিভাইসের ব্যাটারিকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি পৃথিবীকেও 'ইকো ফ্রেন্ডলি' করে তোলার জন্য আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে প্রত্যেকটি গ্যাজেটে ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য কোবাল্ট ব্যাটারি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে নিশ্চিত করা হচ্ছে সংস্থার তরফ থেকে।
প্রসঙ্গত, Apple বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের প্রোডাক্টে১০০ শতাংশ সার্টিফাইড রিসাইকেল রিয়ার আর্থ মেটেরিয়াল উপাদান ব্যবহার করতে চাইছে। ২০২২ সালে অ্যাপল ডিভাইসে পুনর্ব্যবহৃত রিয়ার আর্থ উপাদানগুলির ব্যবহার ৪৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৩ শতাংশে করা হয়েছে। আর চলতি বছরে আগত ডিভাইসে হয়তো ১০০ শতাংশই রিয়ার আর্থ উপাদান থাকবে। এই বিষয়ে টিম কুকের সংস্থাটি ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে - "যেহেতু রিয়ার আর্থ উপাদান হিসাবে চুম্বক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় অ্যাপল ডিভাইসে, সেহেতু ২০২৫ সালের মধ্যে অ্যাপল পণ্যগুলিতে ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত রিয়ার আর্থ উপাদান ব্যবহার করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।"
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, iPhone 11 সিরিজে ব্যবহৃত ট্যাপটিক ইঞ্জিনকে প্রথমবার রিসাইকেল করা রিয়ার আর্থ উপকরণ দিয়ে নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে, সাম্প্রতিক প্রায় সমস্ত অ্যাপল আইফোন (iPhone), আইপ্যাড (iPad), ওয়াচ (Watch), ম্যাকবুক (MacBook) সহ অন্যান্য ম্যাক মডেলগুলিতে পুনর্ব্যবহৃত চুম্বক ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায় সংস্থাটির মধ্যে৷
আর আগেই যেমনটা আমরা বলেছি, অ্যাপল তাদের ডিজাইন করা সমস্ত প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ প্রত্যয়িত পুনর্ব্যবহারযোগ্য গোল্ড প্লেটিং ব্যবহার করবে। এক্ষেত্রে মুখ্য লজিক বোর্ড ও ফ্লেক্সিবল বোর্ড, যেমন - আইফোনের ক্যামেরা বা ফিজিক্যাল বাটনগুলি উক্ত উপাদান দ্বারা নির্মিত হবে। টেক জায়ান্টটি তাদের সাম্প্রতিক ব্লগ পোস্টে নিশ্চিত করেছে যে - ২০২২ সালে আগত iPhone 14 লাইনআপ, আইপ্যাড, অ্যাপল ওয়াচ, এয়ারপডস প্রো, ম্যাকবুক প্রো, ম্যাক মিনি ও হোমপডের প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডগুলি পুনর্ব্যবহৃত গোল্ড প্লেটিং দিয়ে তৈরি।
এদিকে ডিভাইসের অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলিকে রিসাইকেল মেটেরিয়াল দিয়ে নির্মাণ করার পাশাপাশি প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে চলেছে Apple। এমনকি লেভেল লাগানো এড়াতে Apple iPhone 14 এবং iPhone 14 Pro -এর রিটেল বক্সের জন্য ডিজিটাল প্রিন্টিং চালু করতে পারে সংস্থাটি। এর জন্য একটি কাস্টম প্রিন্টারও তৈরি করছে Apple।
প্রসঙ্গত পৃথিবীকে কার্বন ফুটপ্রিন্ট মুক্ত করতে এবং পরিবেশ-বান্ধব রাখতে iPhone 12 এবং পরবর্তী প্রজন্মের আইফোন সিরিজের সাথে চার্জার এবং ইয়ারপড দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাপল অন্তত এমনটাই দাবি করেছে। যদিও কিছু সমালোচকের মতে, এই পদক্ষেপটি লভ্যাংশ বাড়ানোর জন্য নেওয়া হয়েছে।