এক Call-এ খেল খতম! ভার্চুয়াল অ্যারেস্টের নামে এবার আপনাকেই আসামী বানিয়ে লুটে নেবে Scammer
রোজ আমাদের ফোনে কাজের-অকাজের কত কলই না আসে – এর মধ্যে বেশির ভাগ কল সেভ করা বা পরিচিত নম্বর থেকে আদান-প্রদান হয়, তো কিছু ইনকামিং কলের পেছনে থাকে অজানা (unknown) নম্বর। তাছাড়া এখন স্প্যাম বা বিজ্ঞাপনমূলক কলের হারও বেড়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি অজানা নম্বর থেকে আসা কলগুলি সম্পর্কে ততটাও গুরুত্ব না দেন, তাহলে কিন্তু এখন আপনার সাবধান হওয়ার সময় এসেছে। কারণ শুধুমাত্র একটি কল থেকে মানুষজনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণরূপে খালি হওয়ার মতো ঘটনার কথা তো আকছার শোনা যাচ্ছেই, পাশাপাশি এখন ফোন কলের মাধ্যমে এমনভাবে স্মার্টফোন ইউজারদের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে যাতে করে আমার-আপনার মতো অনেকেই জেলের আসামী বা কোনো অভিযুক্তের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্যের ইশারায় চলতে বাধ্য হবেন। হ্যাঁ, সম্প্রতি দিল্লি-এনসিআরের পাশাপাশি দেশের আরও অনেক জায়গাতে ভার্চুয়াল জেল (virtual jail), ডিজিটাল অ্যারেস্ট (digital arrest) নামক নতুন ধরনের স্ক্যামের আমদানি হয়েছে, যার মাধ্যমে সাইবার জালিয়াতরা মানুষকে ভয় দেখিয়ে জোর করে তাদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি এমনই একটি লেটেস্ট ঘটনার কথা জানা গেছে, যেখানে সাইবার ক্রিমিনালরা একজন মহিলা ইঞ্জিনিয়ারকে এতটাই ভয় দেখিয়েছে যে তিনি নিজেই জালিয়াতের অ্যাকাউন্টে ১১ লাখ টাকা ট্রান্সফার করেছেন!
ঠিক কী ফাঁদ পেতেছিল স্ক্যামাররা?
সূত্রের মতে, কয়েকদিন আগে একজন মহিলা ইঞ্জিনিয়ার অভিযোগ করেন যে, তিনি খুব ভোরে একটি ফোন কল পেয়েছিলেন যেখানে অপর প্রান্তে থাকা কলার বলে যে, ট্রাই (TRAI ) অর্থাৎ টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বিভাগের তরফ থেকে কলটি করা হচ্ছে। এমনকি তাঁর ফোন আগামী ২ ঘন্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে এমন কথাও বলে কলকারী। এবার এই ধরণের ভুয়ো কলে কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক এমনকি সরকারি বিভাগের নামে যে প্রতারণা ঘটানো হয়, সে কথা আমাদের কারোরই অজানা নয়। কিন্তু নয়ডার এই ঘটনাটি অন্যরকম। ওই মহিলার সাথে কথা বলতে বলতে কলার, তাঁকে নম্বর দিয়ে বলে যে সেটি ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টরের নম্বর এবং সেই অফিসারের সাথে কথা বলার নির্দেশ দেয়। এরপরেই বাধে যতো জটিলতা!
মহিলাটি প্রাপ্ত নম্বরে কল করা মাত্রই, ইন্সপেক্টরের নামে একজন সাথে সাথে স্কাইপ কল শুরু করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করার কথা জানায়। এর জন্য ওই মহিলাকে ফোন ছেড়ে কোথাও না যেতেও বলা হয়। তিনি, কলে প্রাপ্ত নির্দেশ অনুযায়ী ফোন ধরে থাকলে ওই ব্যক্তি জানায় যে তাঁর আধার ও মোবাইল নম্বর মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এমনকি ওইসব তথ্য একটি অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ পাচারও করা হয়েছে, যেখানে ওই মহিলা কমিশন হিসাবে ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। বিষয়টি জানার পর ওই মহিলা স্পষ্টতই বিষয়টি মানতে রাজি হননি – তিনি দাবি করেন যে, তাঁর আধারের কোনো অপব্যবহার হয়নি। তখন সেই 'ভুয়ো' অফিসার তাঁকে একজন আইপিএসের সঙ্গে কথা বলতে বলে। এই পুরো ঘটনাটি ভিডিও কলের মাধ্যমে ৮ ঘন্টা ধরে ঘটে চলে, আর এই সময়ে ওই মহিলা ইঞ্জিনিয়ারকে এতটাই ভয় দেখানো হয় যে তিনি মোবাইল ছেড়ে নড়তে পারেননি। এক্ষেত্রে তাঁকে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। সবশেষে, জামিন এবং অন্যান্য আইনি পদক্ষেপের নামে তাঁর কাছ থেকে ১১ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রতারকরা ফোন কলের কানেকশন বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
গোটা ঘটনার পর, ওই মহিলার মনে সন্দেহ জাগে যে এটি কোনো প্রতারণা ছিল কিনা, আর তাঁর ভাবনা সত্যিও হয়ে যায়। থানায় পৌঁছানোর পর তিনি জানতে পারেন যে সাইবার স্ক্যামাররা তাঁকে বোকা বানিয়েছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ এর প্রেক্ষিতে এফআইআর দায়ের করেছে। এমনকি যে নম্বর থেকে কল করা হয় বা যে অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়, সেগুলির বিরূদ্ধে শিগগিরই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এই গোটা ঘটনাটিই ভার্চুয়াল জেল ও ডিজিটাল অ্যারেস্ট স্ক্যামের নজির হিসেবে নেটদুনিয়ায় এখন ঘুরছে।
ডিজিটাল অ্যারেস্ট কী?
আপনাদের সাবধান করার জন্য বলে রাখি, আইনের বা পুলিশের ভাষায় ডিজিটাল অ্যারেস্ট, ভার্চুয়াল জেল বলে কিছু নেই। তবে সাইবার অপরাধীদের ক্ষেত্রে এগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। কাউকে বোকা বানিয়ে ভার্চুয়ালি পুলিশের নামে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ভান করাকেই ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলা হয় এবং ওই ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখার বিষয়টিকে ভার্চুয়াল জেল হিসেবে ধরা যেতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নয়ডা ছাড়াও ফরিদাবাদেও কার্যত একই ঘটনা ঘটেছে যেখানে একটি মেয়েকে ভয় দেখিয়ে টানা ১৭ দিন ঘরের মধ্যে থাকতে বাধ্য করা হয়। তাই আপনার কাছে এরকম কোনো কল এলে তাতে ভয় পাওয়ার বা কোনো অযাচিত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই, কেবল চোখ-কান খোলা রাখুন।