Hidden Camera Track: হোটেল বা চেঞ্জিং রুমে ক্যামেরা লুকানো রয়েছে কিনা এভাবে চেক করুন
বর্তমান ডিজিটাল জমানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সৌজন্যে মানুষের জীবন যেমন সহজ থেকে সহজতর হয়েছে, তেমনিই আবার অপরদিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি মানবজীবনের অভিশাপ তথা ভয়ঙ্কর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ – এই বহুল পরিচিত প্রশ্নটি এখন সর্বত্রই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ হিডন ক্যামেরার কথাই ধরা যাক। উন্নত প্রযুক্তিকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়ে কীভাবে অসৎ কার্যকলাপ করা যায়, তারই এক জ্বলন্ত নিদর্শন হল স্পাই বা হিডন বা গোপন ক্যামেরা (Spy Camera)। এই ডিভাইসটির জন্য অনেক সময় মানুষকে, বিশেষ করে মহিলাদেরকে ভয়ঙ্কর রকমের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। সমাজের বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু মানুষ হোটেল বা হোস্টেলের রুম, ট্রায়াল রুম বা বাথরুমে সাধারণত এই ধরনের গোপন ক্যামেরা সেটআপ করে মহিলাদের গোপন ভিডিও রেকর্ড করে রাখে এবং পরবর্তীকালে সেই ভিডিওকে হাতিয়ার করে তাদেরকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে। প্রায়শই এই ধরনের নানা খবর সামনে আসে, তবে হালফিলে পাঞ্জাবে ঘটা এক চরম নিন্দাজনক ঘটনা সকলেরই রীতিমতো টনক নড়িয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি পাঞ্জাবের মোহালির চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ জন ছাত্রীর স্নানের দৃশ্য মোবাইলবন্দি করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রী এবং তারপর তিনি তার এক বন্ধুকে ওই ভিডিওটি সেন্ড করেন। এরপর প্রায় মুহূর্তের মধ্যেই নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় সেটি, যার জেরে লজ্জা-অপমানে আট ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন হোস্টেলে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা নারী ও যুবতী মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়ো প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে। অপরিচিত কোনো জায়গায় গেলেই সেখানে ক্যামেরা লাগানো আছে কি না, এটা ভেবে অনেকেই এখন রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠছেন। তবে একটু সতর্ক থাকলেই কিন্তু কোথাও গোপন ক্যামেরা লাগানো আছে কি না, তা অতি অনায়াসেই বুঝতে পারা যায়। আর সেই উপায়গুলির কথাই আমরা আপনাদেরকে এই প্রতিবেদনে জানাতে চলেছি, যার ফলে আপনারা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে পারবেন।
মূলত এইসব জায়গায় লাগানো থাকে গোপন ক্যামেরা
হোটেল কিংবা হোস্টেল বা টয়লেট – যেকোনো জায়গাতেই এই ধরনের ক্যামেরাগুলি কিন্তু স্থায়ীভাবে লাগানো থাকে না, সাধারণত বিশেষ কোনো জিনিসের মধ্যে এই ইলেকট্রনিক গ্যাজেটটিকে লুকিয়ে রাখা হয়। মূলত স্মোক ডিটেক্টর, এয়ার ফিল্টার ইক্যুইপমেন্ট, ঘড়ি, সফ্ট টয়, টিভি ক্যাবিনেট, হেয়ার ড্রায়ার, বাথরুম শাওয়ার, এমনকি পেনের মধ্যেও স্পাই ক্যামেরা লুকোনো থাকতে পারে। তাই হোটেল রুম, হোস্টেল রুম, বা পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সময় এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
কীভাবে হিডন ক্যামেরার হদিশ পাওয়া যাবে?
এক্ষেত্রে মোবাইল ফ্ল্যাশ লাইটই হতে পারে আপনার ব্রহ্মাস্ত্র! আসলে এখনকার দিনে প্রতিটি মোবাইলেই ফ্ল্যাশ লাইট বিদ্যমান। আর কোথাও স্পাই ক্যামেরা লুকোনো আছে কি না, তা জানতে হলে এই ফ্ল্যাশ লাইটকেই অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বেশিরভাগ হিডন ক্যামেরায় সবুজ বা লাল এলইডি (LED) লাইট থাকে এবং এই আলোটি সর্বক্ষণ জ্বলে। এখন লুকোনো ক্যামেরা খুঁজে পেতে হলে প্রথমে আপনাকে সেই ঘরটি স্ক্যান করতে হবে। এর জন্য আপনাকে প্রথমে ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিতে হবে, তারপরে স্ক্যানিংয়ের জন্য আপনার স্মার্টফোনের এলইডি লাইটটি অন করতে হবে। এখন যদি ঘরে সত্যিই স্পাই ক্যামেরা থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই মোবাইলে কোনো-না-কোনো আলো জ্বলে উঠবে।
এছাড়া সন্দেহজনক ডিভাইস দেখলেই সতর্ক হন। যদি আপনি হোটেল বা হোস্টেলের রুম, বাথরুম বা চেঞ্জিং রুমে কোনো সন্দেহজনক ডিভাইস দেখতে পান, তবে আপনাকে অবশ্যই সাবধান হয়ে যেতে হবে। এমত পরিস্থিতিতে আপনাকে অবিলম্বে সেই ডিভাইসটিকে আনপ্লাগ করে সেটিকে কোনো আলমারিতে ঢুকিয়ে দিতে হবে কিংবা সেটিকে কোনো পুরু কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে
এত কিছুর পরেও কোথাও হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছে কি না, সেই নিয়ে যদি আপনার মনে কোনো সন্দেহ থেকে যায়, তাহলে আপনি কয়েকটি মোবাইল অ্যাপের সাহায্য নিতে পারেন। এই অ্যাপগুলি রেকর্ডিং ডিভাইসের ফ্রিকোয়েন্সি স্ক্যান করতে পারে। এর মধ্যে ডিটেক্টিফাই (Detectify) এবং রাডারবট (Radarbot)-এর মতো কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যা অ্যান্ড্রয়েড (Android) এবং আইওএস (iOS) ফোনগুলির জন্য উপলব্ধ। আর হিডেন ক্যামেরা অনুসন্ধান করার জন্য এই অ্যাপগুলিতে একাধিক কার্যকর ফিচার বিদ্যমান।